• অস্বস্তিতে কংগ্রেস
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ১৬ মে ২০২৪
  • ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দলগুলির নেতাদের নানা ধরনের মন্তব্য নিয়ে মোদি সমানে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তার ওপর সম্প্রতি কংগ্রেসের পরামর্শদাতা শ্যাম পিত্রোদার বেফাঁস মন্তব্য কংগ্রেসের অস্বস্তিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে৷ আগেরবার উত্তরাধিকার কর নিয়ে মন্তব্য করে দেশজুড়ে বিতর্ক বাঁধিয়েছিলেন তিনি৷ আর এবার লোকসভা ভোট চলাকালীন ভারতীয়দের গায়ের রং নিয়ে পিত্রোদার মন্তব্য এতটাই আলোড়ন তুলেছে যে, কংগ্রেসের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ আবস্থা৷ শেষে দলের ওভারসিজ শাখার চেয়ারম্যানের পদ থেকে পিত্রোদা সরে যাওয়ায় কংগ্রেস নেতৃত্ব যেন অনেকটা হাঁফ ছেড়ে বাঁচল৷ পিত্রোদা নিজে থেকে ওই পদ থেকে সরে গিয়েছেন, নাকি তাঁকে ওই পদ থেকে দল সরিয়ে দিয়েছে, এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চর্চা চলছে৷ তবে বিষয়টি লুফে নিয়েছে বিজেপি৷ পিত্রোদার ওই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে পুরোদমে কংগ্রেসের সমালোচনা করে চলেছে নরেন্দ্র মোদি ও গেরুয়াবাহিনী৷
    শ্যাম পিত্রোদা দীর্ঘদিন ধরে কংগ্রেসের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছিলেন৷ রাহুল গান্ধির বাবা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গন্ধির তিনি বিশেষ ঘনিষ্ঠ ছিলেন৷ পিত্রোদা উন্নয়ন বিষয়ক চিন্তাবিদ ও নীতিনির্ধারক হিসেবে পরিচিত৷ তাঁর পরামর্শ মতো বেশকিছু কাজ করেছিল কংগ্রেস সরকার৷ টেলিকম ক্ষেত্রে ভারতবর্ষে রীতিমতো ‘বিপ্লব’ ঘটিয়ে দিয়েছিলেন পিত্রোদা৷ রাজীব গান্ধির মৃতু্যর পরও তিনি কংগ্রেসের পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন৷ আজও তিনি গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত৷ এহেন মানুষের মুখনিঃসৃত মন্তব্যকেই ভোটযুদ্ধে হাতিয়ার করেছে গেরুয়া শিবির৷ যেহেতু পিত্রোদা গান্ধি পরিবারের ‘কাছের মানুষ’ হিসাবে পরিচিত, তাই অবধারিতভাবে আক্রমণের নিশানায় পড়েছেন রাহুল গান্ধি ও তাঁর দল কংগ্রেস৷ ভারতে বিবিধের মধ্যে যে ঐক্য রয়েছে, তাকে শ্যাম পিত্রোদা যেভাবে দেশের বিভিন্ন অংশের মানুষের চেহারা তথা গায়ের রং দিয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন, তার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছে বিজেপি, যাকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য বলে আক্রমণ করেছেন৷ আর এটা অনস্বীকার্য যে, ভারত বর্ণবিদ্বেষের ঘোর বিরোধী৷ অথচ শ্যাম পিত্রোদা বিদেশি সংবাদমাধ্যমের কাছে ভারতের পূর্ব অংশের মানুষকে চিনের সঙ্গে এবং পশ্চিম অংশের মানুষের সঙ্গে আরবদের মিল খুঁজে পেয়েছেন৷ উত্তরের মানুষকে সাদা চামড়ার জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তুলনা করেছেন৷ আর দক্ষিণ ভারতের মানুষের সঙ্গে আাফ্রিকার লোকদের তুলনা করেছেন৷ শ্যাম পিত্রোদার মতো মানুষ যেভাবে চামড়ার রং ধরে ভারতের বিভিন্ন অংশের মানুষকে তুলে ধরেছেন, তাকেই বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য বলে কঠোর সমালোচনা করেছেন নরেন্দ্র মোদি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘আমাকে যত খুশি গালি দেওয়া হোক বা অপমান করা হোক, সহ্য করব৷ কিন্ত্ত দেশের মানুষকে এভাবে অপমান করা কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না৷ ইদানিং মোদি ভোটপ্রচারে রাহুল গান্ধিকে ‘শাহজাদা’ হিসাবে উল্লেখ করছেন৷ আর রাহুল-ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত শ্যাম পিত্রোদাকে ‘শাহজাদার তাত্ত্বিক গুরু’ হিসেবে কটাক্ষ করে রাহুলের উপর চাপ বাড়িয়ে চলেছেন৷
    কিছুদিন আগে এই শ্যাম পিত্রোদাই আমেরিকার মতো উত্তরাধিকার কর চাপানোর পক্ষে সওয়াল করে বিজেপির হাতে অস্ত্র তুলে দিয়েছিলেন৷ সেই অস্ত্র তুলে নিয়ে আক্রমণ শানিয়ে মোদি বলেন, কংগ্রেসের এবার নজর পড়েছে দেশবাসীর কষ্টার্জিত সঞ্চিত সম্পদের উপর৷ মানুষ তাঁর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য কষ্ট করে টাকা জমায়, সম্পদ গড়ে৷ আর কংগ্রেস তা কেড়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছে৷ মা-বোনেদের মঙ্গলসূত্রও কেড়ে নিতে পারে৷ সেবারও পিত্রোদার উত্তরাধিকার কর সংক্রান্ত মন্তব্য কংগ্রেসকে দারুণ অস্বস্তির মধ্যে ফেলেছিল৷ আর এবার গাত্রবর্ণ নিয়ে তাঁর মন্তব্য কংগ্রেসকে এতটাই বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে যে, দলীয় পদ থেকেই সরে যেতে হল শ্যাম পিত্রোদাকে৷ লোকসভা নির্বাচনে এর প্রভাব কতটা পড়ে, সেটা ভাটের ফল বেরোলে বোঝা যেতে পারে৷ এমনিতে কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তেহার, তাদের এবং ‘ইন্ডিয়া’ জোটের শরিক দলের নেতাদের নানা মন্তব্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদি সমানে আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তার ওপর শ্যাম পিত্রোদার মতো নেতাদের পরপর বিতর্কিত মন্তব্য কংগ্রেসকে আরও অস্বস্তির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে৷
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)