এলাকার ভোটারের একটা বড় অংশ পরিযায়ী শ্রমিক। দাসপুর বিধানসভার নিরিখে তাই তাঁরা ভোটে নির্ণায়কও বটে। ভোটের আগে তাঁদের ঘরে ফেরার অপেক্ষায় থাকে সব দল। এ বারের হাইভোল্টেজ লোকসভার লড়াইয়ে দাসপুরের স্বর্ণশিল্পীদের ঘরে ফেরাতে তৎপর রাজনৈতিক দলগুলি।
ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে বার্তা দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটের আগে ঘরে ফিরতে আবেদন জানিয়েছে পদ্ম শিবির। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘাটালের পদ্ম প্রার্থীকে পাশে নিয়ে ওই বার্তা ছড়িয়েছেন। পিছিয়ে নেই শাসক দল তৃণমূলও। দেশের নানা প্রান্তে স্বর্ণশিল্পী সংগঠনের সঙ্গে কথা বলে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার আবেদন রাখছে তারা। একই পথে হাঁটছে সিপিএমও।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অভিমত, এমনিতে ঘাটাল লোকসভার অধীন দাসপুর বিধানসভা সবচেয়ে বড়। সেই প্রেক্ষিতে এ বারের লোকসভার ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় ভূমিকা থাকছে। নজর রাখা যাক পরিসংখ্যানে। দাসপুরে মোট ভোটার ৩ লক্ষ ৭ হাজার। মোট পরিবার ৭৪ হাজার। এদের মধ্যে প্রায় ১৫-২০ হাজারের কাছাকাছ পরিযায়ী শ্রমিক পরিবার রয়েছেন। ভোটার সংখ্যা প্রায় পঞ্চাশ-ষাট হাজারের কাছাকাছি। শতাংশের নিরিখে কমবেশি কুড়ি থেকে বাইশ শতাংশ। অর্থাৎ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট কারা পাবে তার উপরই হারজিত নির্ভর করে দাসপুরে। স্বাভাবিক ভাবেই সেই ভোট নিজেদের ঝুলিতে পুরতে ভোটের আগে উঠেপড়ে লাগে সব দল। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, পরিযায়ীদের মন পেতে এখন উঠেপড়ে লেগেছে যুধুধান তৃণমূল-বিজেপি সহ সিপিএম সব পক্ষ।
তৃণমূলের ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আশিস হুতাইত বলেন, “দলের পক্ষ থেকে স্বর্ণ শিল্পী ও সংগঠন গুলির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অনেকেই আগ্রহ দেখিয়েছেন। বাড়ি ফিরছেন।” বিজেপি নেতা তপন দত্ত ও তপন মাইতি বলেন, “বিরোধী দলনেতা অনেক আগেই স্বর্ণ শিল্পীদের বাড়ি ফেরার আবেদন রেখেছেন। দলের পক্ষ থেকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।” সিপিএম নেতা রঞ্জিত পালের কথায়, “দলের সমর্থিত অনেকেই বাইরে সোনার কাজ করেন। তাদেরকে ভোট দিতে আসার জন্য ফোন করা হচ্ছে।”
কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরাতে রাজনৈতিক দলগুলির এমন উদ্যোগে অবশ্য স্বর্ণশিল্পীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া শোনা গিয়েছে। অনেকেই পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে সপরিবারে দেশে ফিরে এসেছেন। অনেকে ফেরার তোড়জোড় করছেন। পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ আবার কাজ ফেলে শুধুমাত্র ভোট দিতে দেশে ফিরতে নারাজ। দু’দিন আগেই হায়দরাবাদ থেকে দাসপুরের ভুঁইয়াড়ার গ্রামে ফিরেছেন দেব কুমার সামন্ত। তিনি বলছিলেন, “ভোট দিতে আসার জন্য আমাকে ফোন করা হয়েছিল। হাতও ফাঁকা ছিল। আমি ফিরে এসেছি। ভোট দিয়ে কর্মস্থলে ফিরে যাব।” দাসপুরের নবীন মানুযার সুজয় সামন্ত থাকেন আমদাবাদে। সুজয় বলছিলেন, “ভোটে বাড়ি ফেরা হবে না।’’
দিল্লির স্বর্ণকার সমিতির পক্ষে গোপীনাথ সামন্ত এবং অন্ধ্রপ্রদেশের বিজওয়াড়ার স্বর্ণকার মালিক সংগঠনের পক্ষে মোহন পোড়েরা জানান, “ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য ইচ্ছুক কারিগরদের সব ছুটি দেওয়া হচ্ছে।”