ইডি-র ছাপ মারা একটি চিঠি ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে কল্যাণীতে। তাতে অর্থ তছরুপের অভিযোগে কল্যাণীর দুই তৃণমূল পুরপ্রতিনিধিকে ইডি-র দফতরে ডেকে পাঠানো হয়েছে বলে দাবি। ১৩ মে তারিখ দেওয়া ওই চিঠিতে আগামী ২০ এপ্রিল, পঞ্চম দফা ভোটের দিন দু’জন দেখা করতে বলা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই কল্যাণীতে ভোট। বুধবার দুই পুরপ্রতিনিধিই দাবি করেন, ইডি-র এমন কোনও চিঠি বা সমন তাঁরা পাননি। লোকসভা ভোটের মুখে সবটাই বিজেপির চক্রান্ত।
সমাজমাধ্যমের সূত্রে যে চিঠি এ দিন সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে তাতে কল্যাণী পুরসভার দুই ‘চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল’ অরূপ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত নিবেদিতা বসুর নাম রয়েছে। কল্যাণীর প্রভাবশালী নেতা অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কু শিক্ষা-দুর্নীতিতে জেলে যাওয়া প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। নদিয়া জেলায় দলের পর্যবেক্ষেক থাকার সময় পার্থ মূলত তাঁর মতো দু’এক জনের মাধ্যমেই দল পরিচালনা করতেন বলে খবর। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পর টিঙ্কুকে দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
টিঙ্কু বর্তমানে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি। নিবেদিতা এ বারই প্রথম প্রার্থী হয়ে ১২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতেছেন। পার্থ-পর্বের পর কিছু দিন নিষ্ক্রিয় থাকলেও লোকসভা ভোটের আগে টিঙ্কুকে ফের দলের মূলস্রোত ফেরানো হয়েছে। বর্তমানে তিনি যথেষ্ট সক্রিয়। ফলে তাঁকে ইডি-র ডেকে পাঠানোর ‘খবরে’ ভোটে তার প্রভাব পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দলেরই অনেকে।
এ দিন টিঙ্কু দাবি করেন, দিন ছয়েক আগে সিবিআইয়ের নাম করে তাঁর কাছে ফোন আসে। হিন্দিতে কথা বলা হয়েছিল। টিঙ্কুর অভিযোগ, “আমাকে ভয় দেখানো হয়। আমি যাতে ভোট করতে না নামি তার জন্য ইঙ্গিতে হুমকিও দেয় লোকটি।” তাঁর দাবি, পরে তিনি ফোন নম্বর যাচাই করতে গিয়ে দেখেন সেটি দিল্লির এবং লোকটির বাড়ি ঝাড়খণ্ডে। টিঙ্কু বলেন, “আমি দুটো ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাচ্ছি।”
টিঙ্কুর দাবি, “বিজেপি মাটি হারিয়ে ফেলেছে বলেই নোংরা খেলা শুরু করেছে। মানুষ জানে, আমি কোনও দিন কোনও অনৈতিক লেনদেনের মধ্যে থাকিনি।” নিবেদিতার বক্তব্য, “আমি এমন কোনও চিঠি পাই নি। আমি কখনও কোনও আর্থিক লেনদেনে থাকিনি। তা ছাড়া এটা ইডির চিঠি হলে এক সমনে দু’জনের নাম থাকবে কেন?” তাঁর ধারণা, “এ সবই বিজেপির চক্রান্ত।”
যদিও বিজেপির রাজ্য সহ-সভাপতি জগন্নাথ সরকারের দাবি, “টিঙ্কু যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাজকর্মের জড়িত ছিল, তা মানুষ জানে। ফলে তাঁর বিত্তের উৎস ইডি তো জানতে চাইবেই।” তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি দেবাশীষ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “বিষয়টি আমার জানা নেই। ফলে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না।”