শহর আলো ঝলমলে হয়েছে। রাজ্যের অন্যতম বড় জলপ্রকল্প তৈরি হয়েছে রাজ্য সরকারের ১৭০০ কোটি টাকায়। শুধু উন্নয়নের নিরিখেই উত্তরপাড়া বিধানসভায় জয় আসবে, দাবি তৃণমূলের। বিরোধীদের পাল্টা দাবি, কাজের খাতা অন্ধকারময়! ফলে, তর্ক জমছে।
চতুর্থবার সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে তৃণমূল প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রত্যয়ী। গত লোকসভায় ১ লক্ষের কাছাকাছি ভোটে জিতেছিলেন। সাতটি বিধানসভার মধ্যে শ্রীরামপুর বাদে ছ’টিতেই এগিয়েছিলেন। এ বার জয়ের ব্যবধান বাড়ার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
তবে ভোটের ফলের চর্চা ছাপিয়ে ‘টক অব দ্য টাউন’ কল্যাণের মেজাজ! সম্প্রতি দলের স্থানীয় বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিককে নিজের প্রচার গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন তিনি। তার পর থেকে অভিনেতা-বিধায়ক কাঞ্চন এমুখো হননি। শ্রীরামপুরে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভার মঞ্চেও নয়।
উত্তরপাড়ার প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক জ্যোতিকৃষ্ণ চট্টোপাধ্যায়ের টিপ্পনী, ‘‘উনি (কল্যাণ) এ বার খুব চাপে আছেন। না হলে নাতনির বয়সি মেয়েকেও (সিপিএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর) খারাপ কথা বলতে ছাড়ছেন না!’’
অনেকেই মনে করছেন, ভোটচর্চায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় চাপা পড়ে যাচ্ছে। শিল্প, বেকারদের কাজ, গ্যাসের দামের মতো জ্বলন্ত সমস্যার কথা সে ভাবে আলোচিত হচ্ছে কই! যে হিন্দমোটর কারখানা এক সময় বাংলার শিল্পকে গতি দিয়েছিল, এক দশক ধরে তা বন্ধ। চতুর্দিকে ঝোপজঙ্গল। শ্রমিক আবাসনে কিছু পরিবার এখনও রয়েছে। কিন্তু
সেখানে পরিষেবা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। শ্রমিকদের খেদ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচারে এসে ডানলপের কথা বললেও হিন্দমোটরের কথা উচ্চারণ করেননি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহদের মুখেও হিন্দমোটরের কথা শোনা যায়নি। হিন্দমোটর এলাকায় জল সরবরাহের অপ্রতুলতার অভিযোগ তুলেছে সিপিএম।
এলাকা চষছেন সিপিএমের তরুণ প্রার্থী দীপ্সিতা। ঘুরছেন বিজেপি প্রার্থী কবীরশঙ্কর বসুও। সিপিএমের আশা, উত্তরপাড়া বিধানসভায় তাদের ফল ভাল হবে। বিজেপি নেতা প্রণয় রায়ের মন্তব্য, ‘‘মানুষ এ বার পরিবর্তন চান। আমাদের প্রার্থী খুব পরিশ্রম করছেন। সাড়াও পাচ্ছেন। দলের সংগঠনও গুছিয়ে নেওয়া গিয়েছে। সিপিএম ভোট কাটতে পারবে বলে মনে
করছি না।’’
বিরোধীদের জবাবে উত্তরপাড়ার পুরপ্রধান দিলীপ যাদবের প্রতিক্রিয়া, ‘‘ভোটের ফলেই সিপিএম আর বিজেপি নেতাদের হিসাব মিলিয়ে নিতে অনুরোধ করব। সব স্তরের মানুষের জন্য আমাদের দলনেত্রীর সরকারি প্রকল্প তো রয়েছেই। আর এলাকার সাংসদ! প্রতিটি উন্নয়নের কাজে শুধু খোঁজ রাখা নয়, নিজে হাজির থাকেন।’’
পুরপ্রধান শুনিয়ে দেন, শীঘ্রই নতুন জলপ্রকল্প থেকে বিভিন্ন পুরসভা এবং পঞ্চায়েতে জল পৌঁছবে। পুরসভার মহামায়া হাসপাতাল ঢেলে সাজা হয়েছে। রাজ্য তথা দেশের বড় বড় হাসপাতালের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার মতো উন্নত মানের অপারেশন থিয়েটার করা হয়েছে। উত্তরপাড়া গণভবন সংস্কার করা হয়েছে। কোন্নগর শহরে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাগানবাড়ি পুনরুদ্ধার ও সংস্কারের কথাও বলছে তৃণমূল।
প্রার্থী জিতলে আরও নানা কাজের পরিকল্পনার কথাও শুনিয়েছেন দিলীপ। বিরোধীদের দাবি, জেতা সহজ নয়।