• বিবাদ মেটাতে গিয়ে আক্রান্ত, জখম ৭ পুলিশ
    আনন্দবাজার | ১৭ মে ২০২৪
  • পারিবারিক বিবাদ মেটাতে গিয়ে গ্রামবাসীর একাংশের রোষের মুখে পড়ল পুলিশ। গ্রামবাসীর ইটবৃষ্টিতে ৭ জন পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দু’জন এএসআই, এক জন কনস্টেবল, এক হোমগার্ড ও এক এনভিএফ কর্মী আছেন। ইটের ঘায়ে মাথা ফেটেছে এক পুলিশকর্মীর। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে রামপুরহাটের মল্লারপুর থানার পাথাই গ্রামে।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত পুলিশকর্মীদের মধ্যে জনার্দন ঘোষ নামে এক এসআইয়ের মাথায় ২৮টি সেলাই পড়েছে। জনার্দন ঘোষ ও জামানুল হক নামে দুই এএসআই-কে দুর্গাপুরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। বাকিদের মল্লারপুরে, ময়ূরেশ্বর ১ ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্য দিকে, পুলিশের সঙ্গে খণ্ডযুদ্ধে দু’জন গ্রামবাসীও জখম হন। ঘটনার পরে এসডিপিও (রামপুরহাট) গোবিন্দ শিকদার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে গ্রামে পৌঁছন। পুলিশকে মারধরের ঘটনায় গ্রামে তল্লাশি শুরু হয়। হামলায় জড়িত অভিযোগে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

    বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এফআইআর করা হবে। এখন এ বিষয়ে কিছু মন্তব্য করব না।’’ জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, ঘটনায় পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করেছে। পুলিশের উপরে হামলায় জড়িতদের মোবাইলে তোলা ছবি দেখে নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হবে।

    এ দিন দুপুর বারোটা নাগাদ গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে পুলিশি টহলদারি চলছে। গ্রামের ভিতরে মালপাড়ায় এসডিপিও পুলিশ বাহিনী নিয়ে উপস্থিত। গ্রামের বিভিন্ন পাড়ায় পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। ধরপাকড়ের ভয়ে গ্রাম প্রায় পুরুষশূন্য। এই মালপাড়াতেই এ দিন গ্রামবাসীদের একাংশের খণ্ডযুদ্ধ হয় পুলিশের সঙ্গে। সেখানে পুরুষদের পাশাপাশি অধিকাংশ বাড়িতে মহিলাদের দেখাও মেলেনি।

    ঠিক কী ঘটেছিল?

    মালপাড়া থেকে একটু দূরে এক বাড়িতে থাকা এক মহিলা জানান, দিন পাঁচেক আগে মালপাড়ার এক যুবকের বিয়ে হয়। ওই যুবকের বিয়ের আগে থেকে পাড়ার এক বিবাহিত মহিলার তাঁর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরে ওই যুবক ওই মহিলার সঙ্গে থাকা বিভিন্ন নিজস্বী আত্মীয়স্বজনদের দেখান। এই নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যে বিবাদ বাধে। অভিযোগ, যুবকটির আত্মীয়স্বজন মালপাড়ার ওই মহিলাকে বুধবার দুপুরে মারধর করেন। তার জেরে বৃহস্পতিবার সকালে আবারও দুই পরিবারের মধ্যে মারামারি বাধে।

    ঘটনার কথা জেনে মল্লারপুর থানা থেকে দু’জন এএসআই-সহ সাত জন পুলিশকর্মী গ্রামে পৌঁছন। মালপাড়ার কিছু যুবকের সঙ্গে পুলিশের বচসা বেধে যায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশ এক যুবককে মারধর করে আটক করে। গ্রামবাসীদের একাংশ পুলিশকর্মীদের ক্ষমা চাইতে বলেন। এই নিয়েই দু’পক্ষের তুমুল অশান্তি বাধে। পুলিশের দাবি, গ্রামের বাসিন্দারা পুলিশের গাড়ি গ্রাম থেকে বেরিয়ে যেতে বাধা দেন। এর পরেই পুলিশের সঙ্গে গ্রামবাসীদের ধস্তাধস্তি বেধে যায়। পরে পুলিশ লাঠি চালাতে শুরু করে অভিযোগ। এর পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোড়া হয় বলেও অভিযোগ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এক জন পুলিশকর্মী ও এক গ্রামবাসী গ্রামের বড় নিকাশি নালার মধ্যে পড়ে যান। ওই সময় গ্রামবাসীদের একাংশ লাঠি নিয়ে এক পুলিশকর্মীকে আঘাত করলে তাঁর আঙুল কেটে যায়।

    পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্মী জ্ঞানানন্দ রায় বলেন, ‘‘এ দিন সকালে পুলিশ এসেছে দেখে আমি সেখানে গিয়ে পুলিশকে বলি, নিজেদের মধ্যে ব্যাপার মিটিয়ে নেওয়া হোক। এর পরেই পুলিশ আমাকে যথেচ্ছ ভাবে মারধর করে।’’ পুলিশ তল্লাশি অভিযানের সময় এক মহিলার তাঁতযন্ত্র এবং আরও কিছু বাড়ির দরজা ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। পুলিশ এই অভিযোগ মানেনি।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)