মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণার পরেও, করবৃদ্ধি করেছে পুরসভা। তাতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ব্যবসায়ীরা। এমনই অভিযোগ তুলে ব্যবসা বন্ধের ডাক দিয়েছিল ‘কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতি’। শুক্রবার ওই বন্ধের জেরে হয়রানির মুখে পড়তে হল সাধারণ মানুষকে। খাবার থেকে শুরু করে ওষুধপত্র কিনতেও সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ। আরও অভিযোগ, রাজনৈতিক দলের কায়দায় মোটরবাইক মিছিল নিয়ে শহরের একাধিক বাজারে ঘুরে দোকান বন্ধ করে দিয়েছেন সংগঠনের সদস্যেরা। সে সব অভিযোগ অবশ্য ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেছে ব্যবসায়ীদের সংগঠন।
কোচবিহারের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে কোনও কর বৃদ্ধি হয়নি। ব্যবসায়ী সংগঠনের কয়েক জন কর্মকর্তা অনৈতিক ভাবে ব্যবসা করছেন। আর তাঁরা নিজেদের স্বার্থে বন্ধ ডেকেছেন। সে অভিযোগও উড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ী সমিতি। কোচবিহার জেলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মতিলাল জৈন বলেন, ‘‘কোথাও কোনও জোর করা হয়নি। ব্যবসায়ীদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে। তাই প্ৰত্যেকে বন্ধে শামিল হয়েছেন। ওষুধের দোকান ও খাবারের দোকান বনধে্র আওতার বাইরে ছিল। তার পরেও তারা প্রতীকী হিসেবে দু’ঘণ্টা দোকান বন্ধ রেখেছে।’’
বেশ কিছু দিন ধরেই ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরসভার বিরোধ চলছিল। ব্যবসায়ী সংগঠনের দাবি, ফুটপাতের ব্যবসায়ী থেকে বড় দোকান—সব ক্ষেত্রেই বহুগুণ ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কাছ থেকে বছরে দেড় হাজার টাকার কিছু উপরে কর নেওয়া হত, তা এখন তিরিশ হাজারের উপরে হয়েছে। ‘নাম জারির’ ক্ষেত্রেও টাকা বাড়ানো হয়েছে।
রবীন্দ্রনাথ ঘোষ অবশ্য সেই অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, দীর্ঘ সময় কোচবিহার পুরসভায় কোনও করবৃদ্ধি হয়নি। পরবর্তীতে পুরসভার স্টলের যে ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে, তা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনার পরে, পুরসভার বোর্ড মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত মেনে বেশ কয়েক মাস ধরে ভাড়া দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তার মধ্যেই বন্ধ ডেকে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে সমস্ত নথি রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করেই পুরসভার বাজার ও স্টলের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে। সেটাও অন্তত পক্ষে দশ বছর পরে। কোচবিহারের সমতুল্য অন্য পুরসভা যেখানে কুড়ি-পঁচিশ কোটি টাকা কর হিসেবে পায়, সেখানে কোচবিহার পুরসভা পায় এক কোটি টাকা।’’ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের ভিডিয়ো দেখিয়ে দাবি করেন, ‘‘সাধারণ নাগরিকদের কর বৃদ্ধি হয়নি। দীর্ঘ সময় কোচবিহার পুরসভা এলাকায় রাজ্য ভ্যালুয়েশন বোর্ড কোনও সমীক্ষা করেনি। সে কাজ এ বার শুরু করেছিল। মুখ্যমন্ত্রী তা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন, তা বন্ধ আছে।’’ রবীন্দ্রনাথের দাবি, ব্যবসায়ীদের একটি অংশ পুরসভার স্টল বিক্রির অধিকার চাইছেন। তা কোনও ভাবেই দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি অবশ্য ওই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘স্টল বিক্রির অধিকার কেউ চায়নি। বিভিন্ন সময়ে ওই স্টল হস্তান্তরের প্রয়োজন হয় অনেকের। সেটাও পুরসভা মানছে না।’’