জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ১৪০ কোটির দেশে ৩৩ কোটি দেব-দেবী! ভক্তের সঙ্গেই অন্ধ ভক্তদেরও শান্তিতে সহাবস্থান এখানে। এর সঙ্গেই আমাদের মনে রাখতে হবে ভারত একটি নদীমাতৃক দেশও বটে। নদীর মতোই এখানে কোনও মহারথীর সমালোচনার নির্দিষ্ট উৎস থাকে এবং নদীর মতোই বিভিন্ন পথ ধরে প্রবাহিত হয়ে চলে সেই সমালোচনা। সম্প্রতি তেমনই বেনজির কাজ করে দেখালেন কিংবদন্তি এমএস ধোনির (MS Dhoni) কিছু সমালোচক। যাঁরা আবার প্রভু রামের (Lord Ram) চরম 'অন্ধ ভক্ত'! এবার একটু খোলসা করে বলা যাক। গতকাল বেঙ্গালুরুর এম চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে, ডু-অর-ডাই ম্য়াচে পাঁচবারের ও গতবারের চ্য়াম্পিয়ন চেন্নাই সুপার কিংসকে ছিটকে দিয়ে, রয়্য়াল চ্য়ালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু চলে যায় প্লেঅফে। আরসিবি এই ম্য়াচে প্রথমে ব্য়াট করে পাঁচ উইকেটে তুলেছিল ২১৮ রান। সেই রান তাড়া করে সিএসকে ৭ উইকেটে ১৯১ রানে গুটিয়ে যায়। শেষ ওভারে ধোনিদের কোয়ালিফাই করার জন্য় ১৭ রান প্রয়োজন ছিল। আরসিবি সর্বোচ্চ সিএসকে-কে ২০০ রান করার লাইসেন্স দিতে পারত। ১৬ রানের বেশি হজম করলেই ফাফদের বলতে হল গুডবাই। ফাফ বল তুলে দিয়েছিলেন যশ দয়ালকে। ধোনি যশকে প্রথম বলেই বিরাট ছক্কা হাঁকান। হাফ ব্য়াটে খেলেই তিন বল পাঠিয়ে দেন গ্য়ালারিতে। যদিও ধোনি তার পরের বলে আউট হয়ে যান। এরপর ধোনি হতাশ হয়ে চুপ করে বসে থাকেন ডাগআউটে। তাঁর চোখে মুখে ফুটে উঠেছিল বিদায়ের যন্ত্রণা। অনেকের আবার এও অভিযোগ ধোনি নাকি খেলা শেষে আরসিবি-র ক্রিকেটারদের সঙ্গে হ্য়ান্ডশেকও করেননি।ধোনির আইপিএল কেরিয়ারের একটি খারাপ দিনেই, তাঁকে সমালোচনায় বিদ্ধ করার জন্য় উপযুক্ত বলে মনে করেন গুটিকয়েক রামভক্তরা! সোশ্য়াল মিডিয়ায় তাঁরা ধোনিকে কটাক্ষ করে যা লিখতে শুরু করেন, তা চলে যায় অতি বাস্তবের দুনিয়ায়। মোয়ানা নামের এক ভেরিফায়েড এক্স হ্য়ান্ডেলে লেখা হয়, 'যিনি প্রভু রামের সঙ্গে নেই, সে কোনও কাজের নয়।' মোয়ানা নিজেকে এক্স হ্য়ান্ডেলে জাতীয়তাবাদী মহিলা হিসেবেই দাবি করেছেন। মোয়ানাক মন্তব্য় ধরেই এরপর একের পর এক ভক্ত তাঁদের মতামত লিখতে শুরু করে দেন। ধোনি ভক্তরাও মোয়ানাকে ধুয়ে দিয়েছেন। এখন প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, কেন মোয়ানা বা তাঁর মতো কিছু মানুষ ধোনির সঙ্গে রামের যোগসূত্রতা খুঁজে পেলেন। তার জন্য় ফ্ল্য়াশব্য়াকে যেতে হবে। গত ২২ জানুয়ারি অযোধ্যার রামমন্দিরে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। রাম মন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, উপস্থিত থাকার জন্য় শ্রী রাম জন্মভূমি তীর্থ ক্ষেত্র ট্রাস্টের তরফে দেশের ছয় হাজার মানুষকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। হায় রে অন্ধ ভক্ত...তালিকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তালিকায় ছিলেন ধোনিও। রাঁচিতে ধোনির বাসভবনে গিয়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিলেন আরএসএসের সহ-প্রদেশ সচিব ধনঞ্জয় সিং ও বিজেপির রাজ্য সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করমবীর সিং। ধোনির হাতে আমন্ত্রণ তুলে দেওয়ার ছবি তখন সমাজ মাধ্য়মের পাতায় ভাইরাল হয়েছিল। ঘটনাচক্রে ধোনিই নন, বিরাট কোহলিও ব্য়ক্তিগত কারণে অনুপস্থিত ছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। সক্রিয়া ক্রিকেটারদের মধ্য়ে একমাত্র রবীন্দ্র জাদেজাই গিয়েছিলেন। প্রাক্তনদের মধ্য়ে পাওয়া গিয়েছিল ভেঙ্কটেশ প্রসাদ, অনিল কুম্বলে ও সচিন তেন্ডুলকরকে। মোয়ানার মতো কয়েকজনের মনে আজও, ধোনিকে রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা অনুষ্ঠানে না দেখতে পাওয়ার ক্ষোভ রয়েই গিয়েছে। সুযোগ বুঝে তা উগড়ে দিলেন।ক্রিকেটের সঙ্গে ধর্মকে টেনে কী না কী বলে ফেললেন কয়েকজন! যেখানে ক্রিকেটের না আছে ধর্ম, না আছে জাত, না আছে কোনও সীমানা। এসব দেখে বলাই যায় হায় রে অন্ধ ভক্ত...