রেলশহরে নেত্রীর পদযাত্রা। ভিড়ে ভিড়াক্কার। উন্মাদনা। নেতারা হাঁটছেন নেত্রীর সঙ্গে। শুক্রবার হইহই করে শেষ হল পদযাত্রা। পরে জেলা নেতারা জানালেন, প্রচারের শেষ কয়েকটা দিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াইয়ের বার্তা দিয়েছেন নেত্রী। রেলশহরের নেতারা ছিলেন পদযাত্রার অনেকটা পিছনে। পরে তাঁদের মুখে শোনা গেল আফশোস। দিদির সঙ্গে দেখা না হওয়ার আফশোস।
লোকসভায় রেলশহর দখলের লড়াই। দলের জন্মলগ্ন থেকে একটি বিধানসভা উপ-নির্বাচন বাদ দিলে কোনও সাধারণ নির্বাচনে এই শহরে ‘লিড’ পায়নি তৃণমূল। পর্যালোচনায় বারবার সামনে এসেছে তৃণমূলে ঐক্যের অভাব। তাই রেলশহর উদ্ধারে মরিয়া তৃণমূল। মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের প্রার্থী জুন মালিয়ার সমর্থনে এ দিন খড়্গপুরে পদযাত্রা করেন মমতা। হেলিকপ্টারে নেমে শহরের সুভাষপল্লি বিএনআর ময়দান থেকে ইন্দায় খড়্গপুর কলেজ পর্যন্ত হাঁটেন তৃণমূলনেত্রী। বিকেল ৫টা থেকে শুরু হওয়া প্রায় ৩কিলোমিটার এই পদযাত্রা শেষ হয় ১ঘন্টায়। পদযাত্রা শুরুর পরে অদূরেই গোলবাজার মসজিদের কাছে পৌঁছতে রাস্তার দু’ধারে ভিড় লক্ষ্য করা যায়। নমাজ শেষে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন গোলবাজারের রাস্তার দু’ধারে। পদযাত্রা শেষে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে আগামী দিনের কর্মসূচি জানিয়ে খড়্গপুরে রূপনারায়ণপুরে একটি হোটেলে চলে যান মুখ্যমন্ত্রী। পরে তিনি জেলা নেতৃত্ব, খড়্গপুরের সমস্ত পুর প্রতিনিধি, নেতৃত্ব, সাধারণ মানুষ, প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
অবশ্য এ দিন যে রেলশহর উদ্ধারে মুখ্যমন্ত্রীর পদযাত্রা সেখানে সামনের সারিতে দেখাই যায়নি শহরের তৃণমূল নেতৃত্বকে। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সামনের সারিতে হাঁটতে দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী জুন মালিয়া, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। এর পরে পদযাত্রার দ্বিতীয় সারিতে চলেছে আদিবাসী নৃত্য। তবে বিজেপির ‘গড়’ বলে পরিচিত রেলশহর খড়্গপুর উদ্ধার যে তৃণমূলনেত্রীর অন্যতম লক্ষ্য তা এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছেন সঙ্গে হাঁটা সুজয় হাজরা, মানস ভুঁইয়াদের। চলার পথে একাধিকবার দাঁড়িয়ে মানস ভুঁইয়া ও সুজয় হাজরাদের নানা বার্তা দিতে দেখা যায় মমতাকে। মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “নেত্রী সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ক’টা দিন নিবিড় প্রচারের বার্তা দিয়েছেন।” একই কথা জানিয়েছেন তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয়ও। তবে শহরে এসে পদযাত্রা করলেও দলনেত্রীর দেখা না হওয়ায় মনমরা তৃণমূলের খড়্গপুর নেতৃত্ব। শহরের প্রাক্তন বিধায়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুর উন্নয়ন পর্ষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রদীপ সরকার বলেন, “দিদি আসায় আমরা সকাল থেকে অপেক্ষায় ছিলাম। শহরের সমস্ত নেতা-কর্মীরা পদযাত্রায় হাঁটলামও। কিন্তু দিদির সঙ্গে দেখা না হওয়ায় খারাপ লাগছে।” একই দাবি করেছেন তৃণমূলের শহর সভাপতি সূর্যপ্রকাশ রাও। আর খড়্গপুরের পুরপ্রধান তথা নির্বাচনী কমিটির সভাপতি কল্যাণী ঘোষ বলেন, “দলের নির্দেশে যেখানে থাকতে বলা হয়েছে থেকেছি। পদযাত্রায় হেঁটেছি। দিদির সঙ্গে একটিবার দেখা হলেভাল লাগত!”