ছুটি, কিন্তু ছুটি নয়। স্কুলে ডাক পড়ছে পড়ুয়াদের। তাদের হাতে দেওয়া হচ্ছে ‘নোট’। সেই ‘নোট’ থেকে পড়ে উত্তর লিখে আনতে হবে স্কুল খোলার পরে। উত্তরপত্র দেখে বোঝা যাবে, দীর্ঘ ছুটির সময়ে কোন ছাত্র বা ছাত্রী কতটুকু পড়া বুঝতে পেরেছে। এমনই পদক্ষেপ শুরু হয়েছে জলপাইগুড়ির একটি স্কুলে। কারণ, স্কুল কর্তৃপক্ষের দাবি, গরমের ছুটিতে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনায় ‘বেঁধে’ না রাখলে স্কুলছুট হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
জলপাইগুড়ি অরবিন্দ মাধ্যমিক উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রতিটি ক্লাসের পড়ুয়াদের জন্য প্রতিটি বিষয়ের বিশেষ ‘নোট’ তৈরি করা হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের ফোন করে স্কুলে ডেকে দেওয়া হচ্ছে ‘নোট’। তাতে যেমন সহজে বিভিন্ন বিষয় বোঝানো হয়েছে, তেমনই রয়েছে প্রশ্নও, যার উত্তর লিখে আনতে বলা হচ্ছে পড়ুয়াদের। স্কুলের এক শিক্ষকের দাবি, “ফোন করে পড়ুয়াদের ডাকার পরে তারা এলে বোঝা যায়, যে তারা অন্তত কোথাও কাজ খুঁজে নেয়নি।” শহরের এই স্কুলে প্রান্তিক পরিবারের ছেলেমেয়েরাই সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্ষৌণীশ গুহ বলেন, “পড়ুয়াদের জন্য নোট ও প্রশ্নমালা দেওয়া হয়েছে। আমাদের স্কুলের অনেক পড়ুয়ারই বাড়িতে পড়া দেখানোর কেউ নেই। সে কারণেই এমন সিদ্ধান্ত, যাতে ছুটির সময়েও পড়ার অভ্যেসে থাকে ওরা।”
জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া মোহিতনগর বালিকা বিদ্যালয়ের মাঠে ফুটবল খেলতে আসে মেয়েরা। সেই অপেক্ষায় থাকেন শিক্ষিকারা। মেয়েদের কাছে খোঁজ নেন সহপাঠীদের। কেউ খেলতে না এলে খোঁজ পড়ে তার বাড়িতেও। স্কুলের ছাত্রীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মোবাইল অ্যাপ গ্রুপ’। সেখানে পড়ুয়াদের থেকে জানতে চাওয়া হয়, কোনও বিষয়ে সমস্যা হচ্ছে কি না। কোনও ছাত্রী গ্রুপে দীর্ঘদিন উত্তর না দিলে, তার খোঁজে যাওয়া হচ্ছে বাড়িতে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নিজেই চা বাগান এলাকায় গিয়ে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছেন ছাত্রীদের। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কোয়েলি রায় বর্মণ বলেন, ‘‘স্কুলের বহু ছাত্রীর বাড়িতে পড়া দেখানোর কেউ নেই। স্কুলেই শুধু পড়াশোনা হয় ওদের। সে কারণে ছুটিতে বাড়িতে কী পড়ছে তা স্কুলের তরফে নজরে রাখা হচ্ছে এবং এলাকায় গিয়েও আমরা পড়াচ্ছি।”
পড়ুয়ারা বাড়িতে পড়াশোনা করছে কি না, খোঁজ রাখছে শহরের স্কুলগুলিও। শহরের সদর বালিকা বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগের প্রধান শিক্ষক অরূপ দে বলেন, “ছাত্রীদের নানা রকম প্রকল্প তৈরি করতে বলা হচ্ছে। কে, কতটা করছে তার খবরাখবরও রাখা হচ্ছে।”