• ‌ঋতুকালীন দিনে ছাত্রীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চাকদার রাউতাড়ি হাই স্কুলে...
    আজকাল | ২০ মে ২০২৪
  • নীলাঞ্জনা সান্যাল: রাজ্যের স্কুলগুলির মধ্যে অন্যরকম নজির গড়ল নদিয়া জেলার চাকদার রাউতাড়ি হাইস্কুল। ছাত্রীদের মধ্যে ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে না আসার একটা প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু এই দিনগুলোতেও যাতে ছাত্রীরা স্কুলে আসতে বিব্রত বোধ না করে, তারই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে এই স্কুল। ছাত্রীদের জন্য বানানো হয়েছে নতুন একটি ঘর। যেটি আসলে ছাত্রীদের কমনরুম। সেই ঘরে রয়েছে একটি খাট। একটি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। ব্যবহৃত ন্যাপকিন নষ্টের জন্য ডিসপোজাল মেশিন। দুটি হট ওয়াটার ব্যাগ। এছাড়াও আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস। লক্ষ্য একটাই, ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে এসে বা মাসের ওইদিনগুলোয় স্কুলে আসতে ছাত্রীরা যেন বিব্রত না হয়। দরকার পড়লে যেন বিশ্রাম নিতে পারে। পেট ব্যথা হলে যেন হট ওয়াটার ব্যাগের সাহায্যে গরম জলের সেঁক নিতে পারে। ন্যাপকিন সঙ্গে না আনলেও যেন সমস্যা না হয়। এসবের মধ্যে লুকিয়ে থাকা আসল উদ্দেশ্যটা হল, ছাত্রীটি যেন স্কুলে আসে।নানা কারণে পিরিয়ডস বা ঋতুকালীন সময়ে স্কুল কামাই করে ছাত্রীরা। অনেকেই শারীরিক সমস্যা এবং পেট ব্যথার কারণে স্কুলে আসতে চায় না। অনেকে আবার স্কুলে আসতে চায় না অপরিষ্কার শৌচাগার ব্যবহারের ভয় আর জলের অভাবে। আরও কারণগুলি হল ব্যবহৃত ন্যাপকিন ফেলার ডাস্টবিনের অভাব ফলে দীর্ঘক্ষণ একটা ন্যাপকিন পরেই থাকতে হয় যা অস্বাস্থ্যকর। অনেকে আবার এখনও কাপড় ব্যবহার করে। যা স্কুলে থাকাকালীন পরিষ্কার এবং বদল সম্ভব নয়। এছাড়াও হঠাৎ করে এই দিনগুলোয় কোনও ছাত্রী অসুস্থ বোধ করলে স্কুলে বিশ্রাম নেওয়ার মতো কোনও আলাদা ঘর বা পরিষেবাও রাজ্যের কোনও স্কুলেই প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে, এই কারণগুলির জন্য মাসের মধ্যে তিন–চারদিন স্কুল কামাই হয়ে যায় বয়ঃসন্ধিকালীন স্কুল ছাত্রীদের। ছাত্রীদের এই সমস্যার কথা মাথায় রেখেই বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে রাউতাড়ি হাই স্কুল। ঘরে একটি ক্যারাম বোর্ড, স্মার্ট টিভিও রয়েছে।স্কুলটি সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা। একাদশ–দ্বাদশে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ে। হিউম্যানিটিজ পড়ানো হয়। সব মিলিয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫০০। তার মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ২০০–‌র বেশি। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রসেনজিৎ সরকার শারীরশিক্ষার শিক্ষক। তিনি জানান, শারীরশিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসে ছাত্রীদের প্রায় কেউ আসে না দেখেই তিনি কারণ জানতে সবাইকে নিয়ে একদিন বসেন। সেখানেই ঋতুকালীন দিনগুলোর সমস্যার কথা উঠে আসে। তার পরই স্কুলের পক্ষ থেকে সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হয়। প্রসেনজিৎবাবু বলেন, ‘‌গরমের জন্য স্কুল বন্ধ থাকলেও, শারীরশিক্ষার প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস এখন চলছে। বৃহস্পতিবার মেয়েরা আসে। শুক্রবার ছেলেরা। এখন মেয়েরা সবাই আসে। মেয়েদের কাছ থেকে খুব ভাল সাড়া পাচ্ছি। আমার মনে হয়, প্রতিটি মেয়েদের স্কুল এবং যেখানে ছেলেমেয়ে একসঙ্গে পড়ে— সব স্কুলেই এই ধরনের বিশেষ ব্যবস্থা থাকা উচিত। আমি চাই, এই উদ্যোগ সব স্কুলই নিক। ছাত্রীরা ঋতুকালীন সময়ে স্কুলে আসতে চায় না। এর ফলে তারা স্কুলমুখী হবে। এতে সমাজ সচেতনতা বাড়বে। আশপাশের কয়েকটি স্কুলের পক্ষ থেকে আমাকে ফোন করেছিল। কী করে কী করতে হবে তা জানতে।’‌ গ্রাম সেবা প্রকল্পের আওতায় এটি তৈরি করে দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সবুজ সঙ্ঘ। মোট খরচ পড়েছে ৫০ থেকে ৬০ হাজার। এই খরচের পুরোটা স্কুলের পক্ষে বহন করা সম্ভব ছিল না। তবে ঘর দিয়েছে স্কুল। প্রসেনজিৎবাবু জানান, ঘর তো স্কুলেই ছিল কিন্তু জানলা–দরজা ছিল না। সেই ঘর মেরামত করতে স্কুলের তহবিল থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এই সংস্থার পক্ষ থেকে মেয়েদের শৌচাগারও ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। ‌
  • Link to this news (আজকাল)