ধূপগুড়ি-কাণ্ডে গ্রেফতার করা হল প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেত্রী মিতালী রায় এবং তাঁর ভাই মৃণাল রায়কে।রবিবার রাতে তাঁদের আটক করা হয়। সোমবার দু’জনকে জলপাইগুড়ি জেলা আদালতে হাজির করানো হয়। আদালত মিতালীকে চার দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে। এ দিকে, টানা দু’দিন পরে স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে ধূপগুড়ি। সোমবার রাত পর্যন্ত ধূপগুড়ির কোথাও নতুন করে কোনও বিক্ষোভ বা উত্তেজনার খবর নেই।
২০১৬ সালে তৃণমূলের টিকিটে ধূপগুড়ি বিধানসভায় জেতেন প্রাক্তন কেপিপি নেত্রী মিতালী। ২০২১ সালের বিধানসভায় বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। গত বছর ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে দলের টিকিট পাননি। উপ-নির্বাচনের ঠিক আগে, মিতালী তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। এ বারের লোকসভা ভোটে তৃণমূল জলপাইগুড়ি থেকে প্রার্থী করে সদ্য ধূপগুড়ি উপনির্বাচনে জেতা নিজের বিধানসভা এলাকায় সক্রিয় বলে পরিচিত নির্মলচন্দ্র রায়কে।
লোকসভা ভোটের পরে সেই ধূপগুড়িতে অশান্তি ছড়াল। পুলিশের দাবি, গত শনিবার থেকে সরাসরি গোলমালে মদত দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে প্রাক্তন বিধায়ক তথা বিজেপি নেত্রী মিতালী এবং তাঁর ভাইয়ের বিরুদ্ধে। মারধর এবং হামলার পরিকল্পনার অভিযোগও রয়েছে তাঁদের বিরুদ্ধে। মিতালী ছাড়াও, রবিবার গোলমাল করা এবং পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের মধ্যে চার জনকে পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বাকিদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।
মিতালীর পক্ষের আইনজীবী গৌতম দাস বলেন, “মিতালী রায় ও মৃণাল রায়কে ধূপগুড়ি থানার পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠিয়েছে। জামিন-অযোগ্য একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে তাঁদের ফাঁসানো হয়েছে।’’ এ দিন আদালতের এক মুহুরির মৃত্যুর কারণে কোনও আইনজীবী সওয়াল করেননি। মিতালী এবং মৃণাল নিজেরাই জামিনের আবেদন করেছিলেন।
উত্তরবঙ্গের আইজি রাজেশ যাদব বলেন, “পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ রয়েছে। পুলিশ টহলদারি চালাচ্ছে। যাঁরা গোলমাল করেছিলেন, তাঁদের ধরা হয়েছে। পুলিশ এ বিষয়ে কড়া ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
জেলা বিজেপির সভাপতি বাপি গোস্বামী বলেন, “অনৈতিক ভাবে পুলিশ প্রাক্তন জনপ্রতিনিধিকে গ্রেফতার করেছে। আমরা সব সময়ে শান্তির পক্ষে। মিতালী রায়ের পরিবারের তরফেও পুলিশে অভিযোগ করা হয়েছে।” জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক রাজেশ সিংহ বলেন, “আমরা শান্তি চাই। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করব, যাতে সব শ্রেণির মানুষকে এক সঙ্গে নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি শান্তি-বৈঠক করা হয়। আমরা শুনেছি, প্রথম দিনের গোলমালের পিছনে অনেকের হাত ছিল।” এ দিন দুপুরে ধূপগুড়ি থানা এলাকায় ইন্টারনেট সংযোগ চালু হয়েছিল। তবে ঘণ্টা তিনেকের মধ্যেই ফের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রশাসন সূত্রের খবর, ২৩ মে পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকবে। গত শনি এবং রবিবার ধূপগুড়ি শহর এবং লাগোয়া যে এলাকাগুলিতে উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, সেখানে এ দিন সকাল থেকে কোনও না কোনও পদস্থ অফিসারের নেতৃত্বে পুলিশ বাহিনী মোতায়েন থাকতে দেখা গিয়েছে। ধূপগুড়ি জুড়ে বিশাল পুলিশবাহিনী টহলদারিও চালিয়েছে দিনভর। সকালের দিকে বাজার এলাকায় তেমন ভিড় দেখা না গেলেও, বিকেলের পর থেকে পরিচিত ভিড়, ব্যস্ততা দেখা গিয়েছে। এ দিনও ধূপগুড়ির ব্যাঙ্ক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বেশিরভাগ আর্থিক প্রতিষ্ঠানেই নোটিস ঝোলানো হয়েছে, অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।