• বোমা পড়েনি, গুলি চলেনি, রক্তপাতও হয়নি! শেষ কবে এত ‘শান্তি’র ভোট হয়েছে? মনে নেই ব্যারাকপুরেরও
    আনন্দবাজার | ২১ মে ২০২৪
  • বোমা পড়েনি, গুলি চলেনি, এমনকি, এক ফোঁটা রক্তও ঝরেনি! অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি! পঞ্চম দফায় মোটের উপরে শান্তিতেই মিটেছে ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটপর্ব। বিক্ষিপ্ত গন্ডগোলের অভিযোগ এলেও যেমনটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল, সেই তুলনায় প্রায় কিছুই ঘটেনি।

    এমন ঘটনাবিহীন নির্বাচন শেষ কবে হয়েছে, তা মনে করতে কার্যত স্মৃতি হাতড়াচ্ছেন ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের বাসিন্দারা। নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৫ লক্ষ ৮ হাজার ৭২৮ জন ভোটারের এই কেন্দ্রে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ভোটপর্ব মিটতে রাত হলেও প্রায় ৭২ শতাংশ ভোট পড়েছে। দু’টি ভিন্ন ঘটনায় দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

    সোমবার ভোট গ্রহণের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ ও তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিক ঘুরে বেড়ালেন গোটা এলাকায়। কখনও বা একই এলাকায় একাধিক বার। সিপিএম প্রার্থী দেবদূত ঘোষও পরিক্রমা করলেন ব্যারাকপুর থেকে বীজপুর পর্যন্ত সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকা। অর্জুনকে দেখা গেল চেনা ছন্দে, প্রতিবাদীর ভূমিকায়। ইভিএম বিকল হওয়া থেকে শুরু করে এজেন্টকে বার করে দেওয়া, গাড়ি ভাঙচুর, ভোটারদের ভয় দেখানো ও মারধর-সহ ভোট বানচালের চেষ্টার ভূরি ভূরি অভিযোগ নিয়ে নির্বাচন কমিশন ও পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন অর্জুন। পার্থ বলেছেন, ‘‘এ ছাড়া আর কী-ই বা বলবে? অভিযোগ হাজারটা থাকতে পারে। কিন্তু সেগুলির সত্যতা থাকতে হবে তো।’’

    সকালে চড়া রোদ থাকলেও বেলা বাড়তেই আকাশ কালো হয়ে এসেছিল। মেঘ ডেকে প্রবল বৃষ্টি নামল সওয়া ১১টা নাগাদ। বৃষ্টি থমকে দিল ভোটের গতি। ভোট দিতে যাওয়া অনেকেই বাড়িমুখো হলেন। অনেকে আশ্রয় নিলেন কোনও ছাউনির নীচে। বৃষ্টিতে বহু বুথে জল দাঁড়িয়ে গেল। যাঁরা ভোটের লাইনে ছিলেন, তাঁদের কেউ কেউ ভোট দিলেন জলে পা ডুবিয়েই, কেউ আবার বৃষ্টি থামলে পুনরায় এসে ভোট দেবেন বলে চলে গেলেন। সব চেয়ে বেশি নাজেহাল হতে হল বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্নদের। বেলা শেষে ১৫৯১টি ভোট কেন্দ্রের অধিকাংশ বুথে ভোটের লম্বা লাইন পড়ল। নির্ধারিত সময় ছাড়িয়েও ভোট চলল রাত পর্যন্ত।

    জগদ্দলের শ্যামনগরের বিবেকানন্দগড়ে ১০ নম্বর বুথে ইভিএম-বিভ্রাটের পরে হালিশহর আদর্শ বিদ্যাপীঠের ৫১ নম্বর বুথে ইভিএম বিকল হয়ে যায়। ফলে বেশ কিছু ক্ষণ ভোট গ্রহণ স্থগিত থাকে। আমডাঙায় তৃণমূল ও আইএসএফের বিরুদ্ধে মুড়ি-ঘুগনি খাইয়ে ভোট আদায়ের অভিযোগ ওঠে। ব্যারাকপুরের নগরপাল অলোক রাজোরিয়া বলেন, ‘‘ব্যারাকপুরে লোকসভা ভোট হয়েছে শান্তিপূর্ণ ভাবে। আমরা হিংসাত্মক কিছু ঘটতে দেব না বলেছিলাম, কথা রাখতে পেরেছি। দু’জন গ্রেফতার হয়েছে।’’ নগরপালের কথার প্রমাণ মিলেছে ব্যারাকপুরে ভোটের দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর এক শীর্ষ কর্তাকে দেখে। এ দিন তিনি সপরিবার গঙ্গার ধারে একটি চটকলের অতিথিশালায় ছুটি কাটানোর আমেজে ছিলেন।

    এ দিন সকাল থেকেই দু’-তিন ডজন গাড়ির কনভয় নিয়ে অর্জুন ও পার্থকে দেখা গেল কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়েতে। আর তৃতীয় জন, সিপিএমের দেবদূত ঘোষ কিছুটা অন্তরালেই রইলেন প্রথম দফায়। এ দিন বীজপুর আর টিটাগড়েই গন্ডগোল বেশি হয়েছে বলে অভিযোগ করলেন অর্জুন। কাঁচরাপাড়ার তিন নম্বর ওয়ার্ডের ১৭৪, ১৭৫, ১৭৬ নম্বর বুথে ভোটারদের বাধা দেওয়ার অভিযোগের পরেই ব্যারাকপুর-১ ব্লকে কাউগাছি-২ পঞ্চায়েত এলাকায় ৪৯, ৫০ ও ৫১ নম্বর বুথে বিজেপির এজেন্টদের বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি প্রার্থী। বীজপুরের বাবু ব্লকে এক মহিলা ভোটারকে মারধর ও হুমকির কথা শুনে ছুটলেন সেখানে। বচসায় জড়ালেন স্থানীয় কয়েক জনের সঙ্গে। ব্যারাকপুরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী কৌস্তভ বাগচীর গাড়ি ভাঙচুর করা হল। টিটাগড়, মণিরামপুর, কাঁচরাপাড়ায় বিক্ষোভের মুখে পড়তে হল অর্জুনকে। কালো পতাকা দেখিয়ে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেওয়া হল। তাতে মেজাজ হারালেন অর্জুন, আর সমাজমাধ্যমে সেই ছবি দেখে মুচকি হাসলেন পার্থ।

    দিন শেষে অবশ্য অর্জুন বললেন, ‘‘এ লড়াই মানুষের জন্য। দেড় লক্ষ ভোটে জিতে প্রমাণ করব।’’ আর পার্থ বললেন, “মানুষ ভোট দিয়েছেন। জয়-পরাজয় তো পরের কথা। নির্বিঘ্নে ভোট হয়েছে, এ-ই অনেক।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)