• ‘পুরনো ট্রেনে রং’, বন্দে ভারত মন্তব্যে বিতর্ক
    আনন্দবাজার | ২১ মে ২০২৪
  • রেলের উন্নয়নে কেন্দ্রের ভূমিকা প্রসঙ্গে রবিবার পুরুলিয়ার সভা থেকে বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের কথা তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার বাঁকুড়ার ওন্দার সভা থেকে সেই বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সমালোচনা শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। এ দিন ওন্দার নিকুঞ্জপুরের সভা থেকে মমতা বলেন, “উনি (মোদী) তো একটা কথা বারেবারে বলছেন। কী একটা বন্দে ভারত—পুরনো ট্রেনকে নতুন র‌ং করা। আমার তৈরি করে দেওয়া দুরন্ত এক্সপ্রেস কোথায় গেল। তার তো টিকিও পাচ্ছি না।
    নকল নয় তো!”

    মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যকে আমল দিতে চায়নি বিজেপি। দলের রাজ্য নেতা বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “গোটা দেশ জানে, বিস্তর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে দেশে রেলের কারখানায় বন্দে ভারতের কামরা, ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে। আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন ভাল কিছুই দেখতে পারেন না। নতুন কিছু তৈরি করতেও চান না। পেছনের দিকে হাঁটতে চান বলেই ওঁর আমলে রাজ্যের এই হাল।”

    দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মেকানিক্যাল বিভাগেরও দাবি, দুরন্ত এক্সপ্রেস ও বন্দে ভারতের মধ্যে ফারাক অনেক। বন্দে ভারতে রয়েছে ইন্টিগ্রেটেড কোচ ইঞ্জিন, যেখানে ‘ইএমইউ’ কোচের মতো মোটরভ্যান যুক্ত থাকে একটি রেকে। তবে ‘ইএমইউ’-তে সাধারণত তিনটি মোটরভ্যান থাকলেও বন্দে ভারতে থাকে অত্যাধুনিক চারটি মোটরভ্যান। ১২টি কোচ ও চারটি মোটরভ্যান-সহ ১৬ কোচের ট্রেন বন্দে ভারত। এ ছাড়া, দুরন্ত এক্সপ্রেসে আলাদা লোকো ইঞ্জিন থাকে, যা দিয়ে মূলত ২২টি কোচ টানা হয়। রাজধানী এক্সপ্রেস, শতাব্দীর মতো দুরন্তের ইঞ্জিনও একমুখী। তবে বন্দে ভারতে ‘ইএমইউ’ ট্রেনের মতো দু’দিকে ইন্টিগ্রেটেড কোচ ইঞ্জিন থাকে, যা প্রায় স্থায়ীভাবে সংযুক্ত। দুরন্তের ক্ষেত্রে তা নয়। এ ছাড়া, বন্দে ভারতের নকশা, স্বয়ংক্রিয় দরজা, বসার আসন, চালকের হাতে থাকা কন্ট্রোল প্যানেলে অনেক তফাত রয়েছে, দাবি রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের।

    এ দিন রেলকর্মীদের পেনশনের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের পাশে থাকারও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। আদ্রা ডিভিশনের রেলকর্মী সংগঠন সূত্রে খবর, নতুন পেনশন স্কিম প্রত্যাহার করে পুরনো স্কিম পুনরায় চালুর দাবিতে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু করেছে বাম ও দক্ষিণপন্থী রেলকর্মী সংগঠনগুলি। ‘জয়েন্ট ফোরাম অফ ওপিএস’ (ওল্ড পেনশন স্কিম) নামের মঞ্চ গড়ে আন্দোলন চলছে। মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে কিছু বলতে না চাইলেও রেলকর্মী সংগঠনগুলি মনে করছে, এতে মনোবল বাড়বে রেলকর্মীদের।

    তবে বন্দে ভারত বা দুরন্ত এক্সপ্রেসের মতো প্রথম শ্রেণির ট্রেন নিয়ে আলোচনার মাঝে আমজনতার হয়রানির প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে চাইছে বিজেপি, তৃণমূল—অভিযোগ তুলছে সিপিএম। দলের পুরুলিয়া জেলা সম্পাদক প্রদীপ রায়ের দাবি, “করোনা অতিমারির পরে বহু লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া, প্যাসেঞ্জার ট্রেনগুলিকে এক্সপ্রেসের তকমা দিয়ে বহু গুণ ভাড়া বাড়ানোর মতো প্রসঙ্গ নিয়ে কেন্দ্র, রাজ্যের শাসকদল শব্দ খরচ করছে না। এ নিয়ে একমাত্র বামেরাই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)