• ভোটদানে ‘হারের’ ধারা অব্যাহত! পঞ্চম দফাতেও বাংলায় কম ভোট পড়ল ২০১৯ সালের তুলনায়
    আনন্দবাজার | ২১ মে ২০২৪
  • ভোটদানের হারে বাংলাতে আগের দফাগুলির ধারাই বজায় রইল পঞ্চম দফাতেও। ২০১৯ সালের কাছে ‘হেরে’ গেল ২০২৪ সাল। সোমবার বাংলার সাত আসন- বনগাঁ, ব্যারাকপুর, হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলি এবং আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। ২০১৯ সালে এই সাত আসনের গড় ভোটদানের হার যা ছিল, তার তুলনায় এ বার প্রায় দু’শতাংশ কম ভোট পড়েছে।

    সোমবারের লোকসভা নির্বাচনে ছ’জন প্রাক্তন সাংসদের ভাগ্য নির্ধারণ হয়েছে। সেই তালিকায় ছিলেন বনগাঁর বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর, ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিংহ, হুগলির বিজেপি প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায়, হাওড়ায় তৃণমূলের প্রার্থী প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, উলুবেড়িয়ায় তৃণমূলের প্রার্থী সাজদা আহমেদ এবং শ্রীরামপুরে তৃণমূলের প্রার্থী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রত্যেকেই গত বারের নির্বাচিত সাংসদ। প্রত্যেকেই নিজের কেন্দ্র থেকেই লড়েছেন। এ বারের নির্বাচনে কী ফল হবে, তার উত্তর মিলবে ৪ জুন। তবে পঞ্চম দফায় বাংলার সাত আসনে কত ভোট পড়ল তা নিয়ে কৌতূহল রয়েছে রাজনৈতিক মহলে।

    পঞ্চম দফায় কত ভোট পড়ল, তার হিসাব মঙ্গলবার দিল নির্বাচন কমিশন। সেই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সোমবার বাংলার সাত আসনের গড় ভোটদানের হার ৭৮.৪৫ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই সাত আসনের গড় ভোটদানের হার ছিল ৮০.২ শতাংশ। যা এ বারের তুলনায় ১.৭৫ শতাংশ বেশি।

    বনগাঁ লোকসভা আসনে এ বার জোর লড়াই ছিল তৃণমূল এবং বিজেপির মধ্যে। বিজেপি এ বারও এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনুকে প্রার্থী করেছিল। তৃণমূলের প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাস। গত বার এই আসনে তৃণমূলের প্রার্থী ছিলেন ঠাকুর পরিবারের বধূ মমতাবালা। তবে শান্তনুর কাছে হারতে হয় তাঁকে। মমতাবালাকে রাজ্যসভার সাংসদ করেছে তৃণমূল। সোমবার এই আসনে ভোটদানের হার ৮১.০৪ শতাংশ। ২০১৯ সালে হার ছিল ৮২.৮৭ শতাংশ।

    ব্যারাকপুর লোকসভা কেন্দ্রে সোমবার ভোট পড়েছে ৭৫.৪১ শতাংশ। ২০১৯ সালে এই আসনের ভোটদানের হার ছিল ৭৭.০৮ শতাংশ। সে বারের লোকসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন অর্জুন সিংহ। তাঁকেই প্রার্থী করে বিজেপি। তৃণমূল প্রার্থী দীনেশ ত্রিবেদীকে হারিয়ে জয় হাসিল করেন অর্জুন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরই আবার ফুল বদল করেন তিনি। পদ্ম ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে প্রত্যাবর্তন হয় তাঁর। কিন্তু ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল অর্জুনকে প্রার্থী করেনি। সেই ‘রাগে’ তৃণমূল ছেড়ে ফের বিজেপিতে যান তিনি। বিজেপি এ বারও তাঁকে প্রার্থী করে। তৃণমূলের টিকিটে লড়েছেন পার্থ ভৌমিক।

    হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ তথা প্রাক্তন ফুটবলার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেই প্রার্থী করে তৃণমূল। বিজেপি এ বার এই কেন্দ্রে প্রার্থী বদল করে। রন্তিদেব সেনগুপ্তের বদলে রথীন চক্রবর্তীকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কমিশন সূত্রে খবর, সোমবার হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে মোট ভোট পড়েছে ৭১.৭৩ শতাংশ। যা ২০১৯ সালের থেকে প্রায় ৩ শতাংশ কম। কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সে বার হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৭৪.৮৭ শতাংশ।

    উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রটি ছিল তৃণমূলের দখলে। এই কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ সাজদা আহমেদকে এ বারও প্রার্থী করেছে ঘাসফুল শিবির। বিজেপির টিকিটে লড়েছিলেন অরুণ পালচৌধুরী। সোমবার এই আসনে ভোট পড়ল ৭৯.৭৮ শতাংশ। ২০১৯ সালে সেই পরিসংখ্যান ছিল ৮১.২৩ শতাংশ। উলুবেড়িয়ার মতো শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রেও ২০১৯ সালে তৃণমূল জিতেছিল। বিদায়ী সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এ বার প্রার্থী করেছে তৃণমূল। তাঁর বিপক্ষে বিজেপি প্রার্থী করে কবীরশঙ্কর বসুকে। সোমবার এই আসনের ভোটদানের হার ছিল ৭৬.৪৪ শতাংশ। কমিশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে এই কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৭৬.৪৪ শতাংশ।

    হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের বিদায়ী সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়কে এ বারও প্রার্থী করেছে পদ্মশিবির। তবে এই আসনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চমক দিয়েছিল তৃণমূল। ‘দিদি নম্বর ওয়ান’ রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করে তারা। সোমবার হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল ৮১.৩৮ শতাংশ। তবে গত বারে থেকে কম। ২০১৯ সালে এই লোকসভা কেন্দ্রে ভোট পড়েছিল ৮২.৬৬ শতাংশ।

    সোমবার ভোট হওয়া বাংলার সাত লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে আরামবাগেই সবচেয়ে বেশি ভোট পড়েছে। কমিশন সূত্রে খবর, ভোটদানের হার ছিল ৮২.৬২ শতাংশ। তবুও ২০১৯ সালের ভোটদানের হারকে টপকাতে পারেনি। সে বার এই লোকসভা কেন্দ্রের ভোটদানের হার ছিল ৮৩.৫২ শতাংশ। আরামবাগে প্রার্থী বদল করেছে রাজ্যের শাসকদল। গতবারের বিজয়ী প্রার্থী অপরূপা পোদ্দারের বদলে প্রার্থী করা হয়েছিল মিতালি বাগকে। বিজেপি প্রার্থী করেছিল অরূপকান্তি দীগরকে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)