ঘটনার কথা জানতে পেরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কয়েক জন গ্রাহককে আজ, বুধবার সাঁইথিয়া ডাকঘরে আলোচনার জন্য ডেকেছেন। অন্য দিকে, গ্রাহকেরা তাঁদের গচ্ছিত টাকা ফেরতের দাবিতে অনড়। তছরুপে অভিযুক্ত ডাকঘরের কর্মী জেল হেফাজতে রয়েছেন। কিন্তু, গ্রাহকেরা টাকা ফেরত না-পাওয়া পর্যন্ত ডাকঘর বন্ধ রাখার হুমকিও দিয়েছেন।
আন্দোলনরত গ্রাহকদের অভিযোগ, ময়ূরেশ্বর উপ-ডাকঘরের এক কর্মী ও এক পোস্টাল এজেন্ট তাঁদের বোকা বানিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তছরুপ করেছেন। টাকা ফেরতের দাবিতে গ্রাহকেরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেও ডাকঘরে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। সেই সময় পুলিশি আশ্বাসে গ্রাহকরা আন্দোলন থেকে বিরত থাকেন। কিন্তু, এখনও পর্যন্ত টাকা ফেরতের বিষয়ে ডাকঘরের কোনও সদর্থক পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। গ্রাহকদের প্রশ্ন, তাঁরা কোনও ভুঁইফোড় সংস্থায় টাকা জমা রাখেননি। তাহলে কেন ডাকঘর থেকে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? কেনই বা তাঁদের ন্যায্য জমানো টাকা পেতে এত দিন ধরে অপেক্ষা করবেন?
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর উপ-ডাকঘরে গ্রাহকেরা তাঁদের ফিক্সড ডিপোজ়িট বা মেয়াদি আমানতের জন্য টাকা জমা দিয়েও পাসবই পাননি। এমনকি, ডাকঘরে টাকা জমা দেওয়ার কোনও রসিদও নেই। বিশ্বনাথ ধীবর নামে এক গ্রাহকের অভিযোগ, তিনি দেড় লক্ষ টাকা ওই ডাকঘরের এক কর্মী এবং এক জন পোস্টাল এজেন্টের হাতে চেকের মাধ্যমে মেয়াদি আমানত করার জন্য দিয়েছিলেন। কিন্তু, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তাঁকে পাসবই দেওয়া হয়নি। একই রকম ভাবে মিতা গড়াইয়ের দাবি, তিনি ৭৫ হাজার টাকা মেয়াদি আমানতের জন্য দিয়েও পাসবই পাননি। রামকৃষ্ণ মণ্ডল নামে আর এক গ্রাহক বলেন, ‘‘আমার ৫ লক্ষ টাকা তছরুপ হয়েছে। ডাক বিভাগের এক কর্মী চুরি করবে, সে জন্য কেন সাধারণ গ্রাহকেরা ভুগবেন? যতদিন না ডাক বিভাগ গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে আশ্বস্ত করছে, ততদিন পর্যন্ত ডাকঘরের তালা খোলা হবে না।’’
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা যাচ্ছে, ফেব্রুয়ারিতে গ্রাহকদের বিক্ষোভ হওয়ার পরে বিভাগীয় আধিকারিকেরা অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেন। এপ্রিলে বিভাগীয় ইন্সপেক্টর শুভদীপ সাঁতরা ময়ূরেশ্বর থানায় ময়ূরেশ্বর ডাকঘরের পোস্টাল অ্যাসিন্ট্যান্ট কালীপ্রসন্ন দফাদারের বিরুদ্ধে অভিযোগও দায়ের করেন। এপ্রিল মাসের ১৬ এপ্রিল কালীপ্রসন্ন রামপুরহাট আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। বর্তমানে তিনি জেল হেফাজতে আছেন।
ময়ূরেশ্বর ডাকঘরের বর্তমান পোস্ট মাস্টার নারায়ণ চন্দ্র গড়াই বলেন, ‘‘আমি অস্থায়ী ভাবে পোস্ট মাস্টারের কাজ করছি। এই ডাকঘরে তছরুপের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। বিভাগীয় তদন্ত চলছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যা ব্যবস্থা নেবেন, তাই হবে।’’ তিনি জানান, গ্রাহকদের বোঝানো হলেও তাঁরা এ দিন তালা খোলেননি।
ডাক বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ময়ূরেশ্বর থানায় কালীপ্রসন্নের বিরুদ্ধে শতাধিক গ্রাহকের ৫০ লক্ষাধিক টাকা তছরুপের অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক শুভদীপ সাঁতরা বলেন, ‘‘গ্রাহক বিক্ষোভের কথা জানি। বুধবার সাঁইথিয়া ডাকঘরে কয়েক জন গ্রাহককে আলোচনার জন্য ডাকা হয়েছে। যেহেতু বিভাগীয় তদন্ত চলছে, তাই এর বেশি কিছু বলা যাবে না।’’