যেন ‘না ভোটের দেশ’। ২০১৮-য় পঞ্চায়েত ভোট হয়নি। তার ক্ষোভ ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে আছড়ে পড়েছিল তৃণমূল শিবিরে। ২০২৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ছবি বিশেষ পাল্টায়নি। জেলা পরিষদ স্তরে ভোট হলেও পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে ভোট হয়নি কোতুলপুর বিধানসভাকেন্দ্র এলাকায়। এ আবারও কি ফল ভুগতে হবে, সংশয় দানা বেধেছে শাসক দলের একাংশে। চিন্তায় রেখেছে দলের পুরনো কর্মীদের একাংশের ‘নিষ্ক্রিয়তা’। এ দিকে, বিজেপির আশা, ভোট-না দেওয়ার ক্ষোভ এ বারেও ভোট-বাক্সে প্রতিফলিত হবে। পদ্ম ফুটবে কোতুলপুরে।
এর আগে বিষ্ণুপুরে দলীয় প্রার্থী সুজাতা মণ্ডলের প্রচারে এসে কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে কী করা দরকার, তা-ও নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন দলীয় নেতৃত্বকে। যদিও এ নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নারাজ তৃণমূল নেতারা। তবে দলের একটি সূত্রে দাবি, পুরনো কর্মীদের একাংশ দলের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে নিষ্ক্রিয় রয়েছেন। বিজেপির হাত থেকে কোতুলপুর পুনরুদ্ধার করতে হলে তাঁদের সক্রিয় করা দরকার। যদিও ‘নিষ্ক্রিয়’ হয়ে পড়া ওই কর্মীদের ক্ষোভ, “দল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে থেকেই আমাদের বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। এখনও আমাদের যোগ্য সম্মান দিয়ে ডাকা হয়নি। কেন যাব তা হলে!”
গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে কোতুলপুরে জয়ী হয়েছিলেন হরকালী প্রতিহার। সেই হরকালী এখন দল বদলে তৃণমূলে। মমতা হরকালীকে কোতুলপুরে বিশেষ নজর দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। তাতেও স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশ আড়ালে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, দল বদলে আসা বিধায়কের সঙ্গে সে ভাবে তাঁদের কোনও যোগাযোগই নেই। দিদি কেন যে ওঁকে দায়িত্ব দিচ্ছেন, বোঝা দায়। তৃণমূলের কোতুলপুর ব্লক সভাপতি তরুণ নন্দীগ্রামীর যদিও দাবি, “দল একজোট রয়েছে। কোথাও কোনও সমস্যা নেই। এ বারের নির্বাচনে এখানে বিজেপির জয়ের কোনও সম্ভাবনাই নেই।” অভিযোগ মানতে নারাজ হরকালীও। কোতুলপুরের সমস্ত স্তরের তৃণমূল কর্মীদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ রয়েছে বলে দাবি তাঁর।
তবে এলাকায় আবারও পদ্ম ফোটা নিয়ে আত্মবিশ্বাসী বিজেপির বিষ্ণুপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সৌমিত্র খাঁ বলেন, “কোতুলপুরের মানুষের পঞ্চায়েতে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে সেগুলি দখল করে যথেচ্ছ দুর্নীতি করছে তৃণমূল। মানুষ ওদের উপর ক্ষিপ্ত। তাঁরা দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রতিই আস্থা রাখবেন।” লড়াই ছাড়তে রাজি নন ওই কেন্দ্রের সিপিএম প্রার্থী শীতল কৈবর্ত্যও। কোতুলপুর বিধানসভার অন্তর্গত জয়পুরের গেলিয়ার বাসিন্দা শীতল নিজের এলাকায় ভোটে বাজিমাত করতে ঘাম ঝরাচ্ছেন। তিনি বলেন, “মানুষ তৃণমূলকে রাজ্যে ক্ষমতায় এনে যে ভুল করেছেন, তা শুধরে নিতে চান। কেন্দ্রের বিজেপি সরকারও মানুষের কথা রাখেনি। উল্টে একশো দিনের কাজ বন্ধ করে দিয়ে সমস্যা তৈরি করেছে। কোতুলপুরের মানুষ তাই আমাদের পক্ষে আছেন।”