• লিড বাড়ানোর লক্ষ্য তৃণমূলের, জমি ছাড়ছে না বিজেপি
    আনন্দবাজার | ২২ মে ২০২৪
  • জয়নগর লোকসভা দখলে রাখতে কুলতলি থেকে বড় ব্যবধানে এগিয়ে থাকতে চাইছে তৃণমূল। গত বিধানসভায় এখানে পঞ্চাশ হাজার ভোটের ব্যবধানে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। এ বার সেই ব্যবধান আরও বাড়ানো লক্ষ্য ঘাসফুল শিবিরের।

    বিধায়ক গণেশ মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে কখনও হুডখোলা গাড়িতে, কখনও টোটোয় আবার কখনও পায়ে হেঁটে বিধানসভা এলাকা চষে
    ফেলছেন তৃণমূলের প্রার্থী তথা বিদায়ী সাংসদ প্রতিমা মণ্ডল। প্রতিমার সমর্থনে কুলতলিতে এসে জনসভা করে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গণেশের দাবি, “বিধানসভায় পঞ্চাশ হাজার ভোটে জিতেছিলাম। এ বার সেই ব্যবধান আরও বাড়বে।” বিজেপি অবশ্য সেই দাবি মানছে না। কুলতলি সহ জয়নগর লোকসভায় এ বার পালাবাদলের স্বপ্ন দেখছে পদ্মশিবির।

    ভোট-চিত্রে বরাবরই ব্যতিক্রমী কুলতলি বিধানসভা। বাম আমলে দীর্ঘ দিন এখানে ক্ষমতায় ছিল এসইউসি। ২০১১ সালে বাম জমানার শেষে রাজ্যে যখন তৃণমূল ক্ষমতায় এল, তখন এই কেন্দ্রে জেতেন সিপিএম প্রার্থী। ২০১৬ সালের বিধানসভায় এখানে ক্ষমতা ধরে রেখেছিল সিপিএম। তবে বিধানসভায় হারলেও এলাকায় তৃণমূলের দাপট ছিল। বহু পঞ্চায়েত তাদের দখলে ছিল। তবে সেই সঙ্গে ছিল দলের গোষ্ঠীকোন্দল।

    অভিযোগ, গোষ্ঠীকোন্দলের জেরেই ২০১৬ সালে বিধানসভা হাতছাড়া হয় তৃণমূলের। ২০১৬ সালের পর থেকে এখানে মাথাচাড়া দিতে শুরু করে বিজেপি। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটেও মূল লড়াই হয় তৃণমূল-বিজেপির। ২০২১ সালের বিধানসভার আগে তৃণমূলের এক গোষ্ঠীর নেতা-কর্মী বিজেপিতে যোগ দেন। তাতে অবশ্য তৃণমূল প্রার্থী গণেশের জয় আটকায়নি। তবে এর ফলে তৃণমূলের কোন্দল অনেকটাই মেটে। বিধানসভায় জয়ের পরে গণেশের নেতৃত্বে এলাকায় কার্যত একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে তৃণমূল। তার প্রমাণ মেলে পঞ্চায়েত নির্বাচনে। বিধানসভা এলাকার সব ক’টি পঞ্চায়েতই দখল করে তারা। যদিও সে বার সন্ত্রাস ও ভোট লুটের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধীরা। ‘ভোট লুট’ আটকাতে গিয়ে বিজেপি-তৃণমূল সংঘর্ষে এক তৃণমূল কর্মীর মৃত্যু হয়।

    স্থানীয় সূত্রের খবর, এলাকায় বিজেপির উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই দাপট কমেছে সিপিএম, এসইউসির। এ বারের প্রচারেও তাদের তেমন ঝাঁঝ চোখে পড়ছে না বলেই দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। বামেদের হয়ে এ বার এই কেন্দ্রে লড়ছেন আরএসপি প্রার্থী। খুব বেশি তাঁকে এলাকায় দেখা যাচ্ছে না বলেই অভিযোগ। সিপিএমের কুলতলি এরিয়া কমিটির সম্পাদক উদয় মণ্ডল যদিও বলেন, “আমরা পাড়ায় পাড়ায় মিটিং, কর্মী বৈঠক করছি। প্রার্থীও প্রচারে এসেছেন। ভাল ফলের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।” অন্য দিকে, এসইউসির প্রচুর দেওয়াল লিখন চোখে পড়ছে এলাকায়।

    তবে এক সময়ের শক্ত ঘাঁটিতে তারা এ বার কোনও তফাৎ গড়তে পারবে না বলেই মত রাজনৈতিক মহলের। দলের নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক জয়কৃষ্ণ হালদার অবশ্য বলেন, “মানুষ ভোট দিতে পারলে গত লোকসভার থেকে আমরা এখানে তিনগুণ বেশি ভোট পাব।” এলাকায় অনেকেই বলছেন, তৃণমূলের বিরুদ্ধে এ বার তলায় তলায় একজোট হয়েছে বিরোধীরা। শাসকদলকে হারাতে বাম-এসইউসির ভোট বিজেপির বাক্সে আনার প্রস্তুতি চলছে। তবে কোনও দলই অবশ্য প্রকাশ্যে এ কথা মানতে চায়নি।

    গণেশ বলেন, “রাম, শ্যাম, বাম এক হয়েও আমাদের কিছু করতে পারবে না। বিধানসভা-লোকসভা এলেই ওরা এই সব শুরু করে। এতে লাভ হবে না। মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লড়াই দেখে আমাদের ভোট দেবেন। আমাদের প্রার্থী শুধু এই বিধানসাভতেই নয়, জয়নগর লোকসভা থেকে বিপুল ভোটে জিতবেন।”

    তবে অন্য রকম ভাবছে বিজেপি। গত লোকসভায় প্রায় শূন্য থেকে শুরু করে এখানে দ্বিতীয় হয়েছিল তারা। এই বিধানসভায় তৃণমূল প্রার্থীর সঙ্গে সে বার বিজেপির ব্যবধান ছিল মাত্র সাড়ে আট হাজারের। সেই ব্যবধান ঘুচিয়ে এ বার লিড নেওয়াই লক্ষ্য তাদের। গত বারের প্রার্থী চিকিৎসক অশোক কাণ্ডারীকে এ বারও প্রার্থী করেছে বিজেপি। তৃণমূলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এলাকা চষে ফেলছেন তিনি। চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় পরিচিতি রয়েছে অশোকের। দল নির্বিশেষে বহু মানুষ তাঁর কাছে এসে উপকৃত হয়েছেন। তার ফলই ঘরে তুলতে চাইছে বিজেপি। পাশাপাশি, তৃণমূলের দুর্নীতি, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেও মানুষ তাদের ভোট দেবে বলে দাবি পদ্মশিবিরের।

    বিজেপির জয়নগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি উৎপল নস্কর বলেন, “শুনলাম তৃণমূল জয়নগর কেন্দ্রে চার লক্ষ ভোটে জিতবে বলেছে। ওদের এই স্বপ্নপূরণ হবে না। কুলতলি তো বটেই, জয়নগর কেন্দ্রে এ বার বিজেপি প্রার্থী জিতবেন। তৃণমূলের বিধায়কের কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির কথা মানুষ জানেন। পঞ্চায়েত ভোটে তাঁর দলবল লাগামহীন সন্ত্রাস করেছে। মানুষ এ সবের জবাব দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)