তিনশো পেরোতে সমস্যা হবে না বলছে বিজেপি, পাঁচ দফার পর তবু চার রাজ্য ভাবাচ্ছে ‘আত্মবিশ্বাসী’ পদ্মকে
আনন্দবাজার | ২২ মে ২০২৪
চারশো আসন না হলেও, পাঁচ দফা ভোটের পরে ‘আত্মবিশ্বাসী’ বিজেপি শিবির হিসাব কষে বলছে, গত বারের মতো তিনশো আসন পার হতে সমস্যা হবে না। আজ অমিত শাহের দাবি, বিজেপি প্রথম পাঁচ দফার ভোটেই ৩১০টি আসন জিতে ফেলেছে। বিজেপির পক্ষ থেকে ঘরোয়া ভাবে দাবি করা হচ্ছে, লোকসভা ভোটে ৩০০-৩২০টি আসন জিততে চলেছে এনডিএ। উল্টোদিকে কংগ্রেস তথা বিরোধী মঞ্চ ইন্ডিয়া-র নেতারা মনে করছেন, গোটা দেশে এনডিএ ৬০ থেকে ৭০টি আসন হারাতে চলেছে। সেই তুলনায় বিজেপি পাঁচ থেকে ছ’টি নতুন আসনে জিতবে।
লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে ৪২৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়ে গিয়েছে। রয়েছে বাকি ১১৪টি আসন। সোমবার পর্যন্ত পাঁচ দফায় ভোটগ্রহণ হয়েছে। আগামী ২৫ মে ৫৭টি ও ১ জুন ৫৭টি আসনে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশনের এখনও পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, সোমবার পঞ্চম দফায় ৬০.৪% ভোট পড়েছে। শহুরে এলাকায় ভোট কম পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের কর্তারা দাবি করেছেন। যদিও বিরোধী শিবির মনে করছে, নরেন্দ্র মোদীর প্রতি হতাশাও ভোটের হার কমে যাওয়ার কারণ। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির সেটাই মত। তাঁর বক্তব্য, মোদীর নেতৃত্বে এনডিএ যে হারছে, সেই সত্যিটা লুকোতে নির্বাচন কমিশন নানা তত্ত্ব খাড়া করছে।
ঘরোয়া আলোচনায় বিজেপি নেতারা বলছেন, প্রথম দু’টি দফায় কম ভোট পড়া দলকে চিন্তায় রেখেছিল। কিন্তু চতুর্থ দফা পার হওয়ার পরে দলের বিশ্লেষণ, যাঁরা ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁদের বড় অংশই গেরুয়া শিবিরের ভোটার। পাশাপাশি প্রথম দুই দফার পরে দলীয় কর্মীরা যাতে ভোট দিতে রাস্তায় নামেন তার জন্যও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল বিজেপি। যার সুফল মিলেছে।
মূলত চারটি রাজ্য বিজেপিকে চিন্তায় রেখেছে— মহারাষ্ট্র, বিহার, কর্নাটক ও পশ্চিমবঙ্গ। ওই চার রাজ্যে মোট ১৫৮টি আসন রয়েছে। যার মধ্যে গতবার প্রায় ১২৩টি আসন জিতেছিল বিজেপি। এ যাত্রায় ওই চার রাজ্য থেকে অন্তত ৩০-৩৫ আসন কম আসবে বলে ধরে নিয়েই এগোচ্ছে গেরুয়া শিবির। সেই ঘাটতি কী ভাবে মিটবে তার কোনও স্পষ্ট দিশা পাঁচ দফা ভোটের পরেও নেই বিজেপি নেতাদের কাছে। কংগ্রেস তথা বিরোধী শিবিরের অঙ্ক হল, বিজেপির মহারাষ্ট্র, বিহার, উত্তরপ্রদেশ, কর্নাটক, রাজস্থান, হরিয়ানায় যথেষ্ট সংখ্যায় আসন কমতে চলেছে। দিল্লি, গুজরাত, হিমাচল প্রদেশ, ঝাড়খণ্ড ও অসমেও বিজেপির সামান্য কিছু আসন হবে। তবে তেলঙ্গানায় কংগ্রেস সরকার থাকলেও বিজেপির খান দুয়েক আসন বাড়তে পারে। ওড়িশাতেও বিজেপির দু’একটি আসন বাড়তে পারে।
পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চম দফার ভোটের পরে তৃণমূল শিবির মনে করছে, বিজেপি সামগ্রিক ভাবে রাজ্যে ১৬টি আসন পেতে পারে। যার অর্থ, ২০১৯-এর তুলনায় অন্তত দু’টি কম। বিজেপি পশ্চিমবঙ্গে গতবারের চেয়ে বেশি আসন জেতার লক্ষ্য নিলেও, বাস্তবে গতবারের ১৮টি আসন ধরে রাখা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে। দলের অনুমান, ২০১৯ সালে জেতা অন্তত পাঁচটি আসনে এবার কঠিন লড়াই হবে। কংগ্রেস-বাম শিবিরের আশঙ্কা হল, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি ক্ষুব্ধ অনেক ভোটারই তৃণমূলকে হারাতে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে ভোট দিতে পারেন। তাঁদের মনে হতে পারে, বাম-কংগ্রেসকে ভোট দিলে ভোট নষ্ট হবে। সেক্ষেত্রে বিজেপি লাভবান হবে।
সোমবারের পঞ্চম দফায় ভোটগ্রহণের পরে আজ নরেন্দ্র মোদী তাঁর এক্স-হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘‘এনডিএ-র পক্ষে সমর্থনের ঢেউ জোরালো হচ্ছে। মানুষ স্থির করে ফেলেছেন, কেন্দ্রে মজবুত এনডিএ সরকার প্রয়োজন। বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’ যে কোনও প্রকার ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি করতে পারে। মানুষ এদের বিশ্বাস করবে না।’’
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের পাল্টা অভিযোগ, কেন্দ্রে ইন্ডিয়া-র সরকার আসতে চলেছে। ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় পাঁচ বছরে পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী হবেন বলে মিথ্যা প্রচার চলছে। আগেও কেন্দ্রে জোট সরকার হয়েছে। ইউপিএ সরকারের দশ বছরে একজনই প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। মোদী দশ বছর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার সরকার সত্ত্বেও কিছু করেননি।