যুবা, দরিদ্র, কৃষকের পাশাপাশি চলতি লোকসভার ভোট প্রচার শুরুর সময়ে নারীসমাজকেও তাঁর অগ্রাধিকারের মধ্যে চিহ্নিত করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, দু’টি পর্বে ভোটদানের হার কমতে শুরু করার পর তাঁর প্রচারের কেন্দ্রে চলে এসেছিল হিন্দু-মুসলমানের মেরুকরণের প্রয়াস। তবে আজ ভোটের শেষ দিকে এসে নিজের কেন্দ্র বারাণসীতে মোদী ফিরলেন মহিলা উন্নয়নে।
শুধু তাই নয়, আজ বারাণসী কেন্দ্রে ভোট দেওয়ার সময়ে মহিলাদের থালাবাসন বাজাতে অনুরোধ করলেন মোদী। তাঁর কথায়, “কুড়ি-পঁচিশ জন মহিলা একত্রিত হন। ড্রাম-থালা বাজাতে বাজাতে ভোটকেন্দ্রে যান। গানও গাইবেন। আমরা যদি প্রত্যেকটা ভোটকেন্দ্রে এরকম ৮-১০টা মিছিল করতে পারি, তা হলেই ভোটের হার বেড়ে যাবে।” করোনার সময়ে বাড়িতে বাড়িতে থালাবাসন বাজানোর এমনই নিদান দিয়েছিলেন মোদী। রাজনৈতিক মহলের মতে, ভোটের হার কমতে থাকায় দৃশ্যতই চিন্তিত মোদী। বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, আত্মতুষ্টির জেরে বিজেপি কর্মীদের অনেকে নিষ্ক্রিয়। ফলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্র পর্যন্ত যাচ্ছেন না। তাতেই চাপ বাড়ছে বিজেপি নেতৃত্বের।
আজ মহিলা সম্মেলনের মঞ্চে মোদী মেয়েদের ক্ষমতায়নের জন্য তাঁর সরকারের খতিয়ান তুলে ধরেন। পূর্বতন কংগ্রেস সরকারকে বিঁধে তাঁর বক্তব্য, “গত দশ বছরে এই প্রথম সরকারের নীতি এবং সিদ্ধান্তের একেবারে সামনে জায়গা করে নিয়েছেন মহিলারা। আপনারাই বলুন, যখন নারী ছাড়া কোনও সংসারই চলে না, তখন আপনাদের ছাড়া একটা সরকারই বা চলবে কী ভাবে? গত ষাট বছরে এই সহজ কথাটাই সরকারগুলি বোঝেনি। কংগ্রেস-এসপি সরকারেরা কী দিয়েছে মহিলাদের? শুধু অবহেলা আর নিরাপত্তাহীনতা।”
এর আগে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা, তৃণমূলের বিভিন্ন মহিলা সাংসদ মোদীকে ‘নারীবিদ্বেষী’ বলে সমালোচনা করেছেন। আজ সেই আক্রমণ ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চের দিকে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছেন মোদী। বলেছেন, “ইন্ডিয়া জোটের মানসিকতা বরাবরই নারী-বিরোধী। এই জোটের শরিকরা সংসদে মহিলা সংরক্ষণের বিরোধিতা করেছিল। যখনই এদের সরকার এসেছে, মহিলাদের জীবন কঠিন হয়েছে। বারাণসীর মানুষ তো জানেনই, উত্তরপ্রদেশ এবং বিহারের জঙ্গল-রাজের কথা। আমাদের মা-বোনদের ঘরের বাইরে পা ফেলা মুশকিল ছিল। আমাদের কন্যাদের লেখাপড়া ছেড়ে বাড়িতে আটকে থাকতে হত নিরাপত্তার অভাবে।”
মূল্যবৃদ্ধি এবং বেকারত্ব দেশে হু হু করে বাড়ছে, এই মর্মে বিজেপি-কে বিভিন্ন রাজ্যে আক্রমণ করছে ‘ইন্ডিয়া’র দলগুলি। এ বার পশ্চিম এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশেও এই দু’টি বিষয় ভোটভাষ্যে উঠে আসছে। আজ মহিলাদের সম্মেলনে এই অভিযোগের মোকাবিলা করতে চেয়েছেন মোদী। বলেছেন, “কংগ্রেস যখনই আসে, মুদ্রাস্ফীতি হয়। যদি কংগ্রেস ক্ষমতায় থাকত (গত দশ বছর), আপনাদের রান্নাঘরের বাজেট তিন গুণ বেড়ে যেত। কিন্তু মোদী গরিবের সন্তান। সে সব সময় চেষ্টা করছে আপনাদের খরচ কমিয়ে সঞ্চয় বাড়ানোর। মোদী বিনামূল্যে রেশন চালু করেছে, যার ফলে বছরে প্রতিটি পরিবারের ১২ হাজার টাকা বাঁচছে। উজ্জ্বলা সিলিন্ডারের পরিকল্পনায় আপনারা সিলিন্ডার প্রতি ৩০০ টাকার ছাড় পাচ্ছেন।”