আমাকে কলঙ্কিত করেছে কমিশন, মানহানি করেছে! হাই কোর্টে গিয়ে মামলা করলেন প্রাক্তন বিচারপতি
আনন্দবাজার | ২২ মে ২০২৪
বিচারপতির পদ ছেড়ে নির্বাচনী রাজনীতিতে এসেছিলেন। আর এ বার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেই বিচার চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হলেন প্রাক্তন বিচারপতি তথা তমলুকের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। বুধবার বিকেলে কলকাতা হাই কোর্টে এসে সরাসরি ভারতের জাতীয় নির্বাচন কমিশনের অর্ডারকে চ্যালেঞ্জ করেন তিনি। একই সঙ্গে বলেন, কমিশন তাঁকে যে ভাবে ‘কলঙ্কিত’ করেছে এবং তাঁর ‘মানহানি’ করেছে, তার বিরুদ্ধেও আলাদা পদক্ষেপ করবেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দেশে অভিজিতের করা মন্তব্যের কঠোর ভাষায় সমালোচনা করেছিল নির্বাচন কমিশন। অভিজিতের নির্বাচনী প্রচারে ২৪ ঘণ্টার স্থগিতাদেশ দিয়ে কমিশন লিখেছিল, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে যেখানে মহিলাদের সম্মান করার স্বতন্ত্র ঐতিহ্য রয়েছে, সেখানে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যবহৃত শব্দ বাংলার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করেছে, ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করেছে।’’ এর পাশাপাশিই অভিজিতের শিক্ষার প্রসঙ্গ টেনে কমিশন লিখেছিল, ‘‘তাঁর মতো শিক্ষিত মানুষের কাছ থেকে এই ধরনের ন্যক্কারজনক শব্দ কাম্য নয়। তিনি ভারতীয় মহিলাদের তো বটেই সাংবিধানিক পদমর্যাদায় থাকা রাজনীতিকেরও সম্মান ক্ষুণ্ণ করেছেন।’’ কমিশনের এই সমস্ত মন্তব্য সম্বলিত অর্ডারটিকেই চ্যালেঞ্জ করেছেন অভিজিৎ।
বুধবার এই সংক্রান্ত হলফনামায় সই করার পর কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘‘ভারতের নির্বাচন কমিশন কালকে একটা অর্ডার পাস করেছে। সেটাতে আমার মতে অনেক অবাঞ্ছিত মন্তব্য আছে। আমাকে কলঙ্কিত করা হয়েছে এবং আমার মানহানিও করা হয়েছে। এই কলঙ্ক এবং মানহানির বিরুদ্ধে আমি আলাদা পদক্ষেপ করব। সেই অধিকার আমি সংরক্ষণ করেছি। তা ছাড়া ওই নোটিসটাকে চ্যালেঞ্জ করেছি। অর্থাৎ অর্ডারটাকে চ্যালেঞ্জ করেছি।’’
তমলুকের একটি সভা থেকে অভিজিৎ বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে ‘নজিরবিহীন’ ভাবে আক্রমণ করেছেন বলে অভিযোগ করেছিল তৃণমূল। একটি ভিডিয়োয় অভিজিৎকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুমি কত দামে বিক্রি হও?’’ এমনকি, মমতার উদ্দেশে, ‘‘তোমার দাম ১০ লক্ষ টাকা কেন?’’, ‘‘উনি আদৌ মহিলা কি না, সেব্যাপারে সন্দেহ আছে।’’ জাতীয় অবমাননাকর মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে। আনন্দবাজার অনলাইন ওই ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি। তবে তৃণমূল এ ব্যাপারে কমিশনে অভিযোগ করার পরে কমিশন প্রথমে অভিজিৎকে শো-কজ় করে। পরে তাঁর প্রচার ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয়।
বুধবার কলকাতা হাই কোর্ট চত্বরে দাঁড়িয়ে অভিজিৎ বলেন, ‘‘আমি পাঁচটা অবধি নিষেধাজ্ঞা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্তু সেই নির্দেশেরই একটি অংশে যেখানে ওইসব মানহানিকর মন্তব্য গুলো আছে, সেটাকে আমি চ্যালেঞ্জ করেছি। সেটাই ফাইল হল।’’
মঙ্গলবারই অভিজিতের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করে অর্ডার দিয়েছিল কমিশন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী বুধবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রচার বন্ধ রাখতে হয় অভিজিৎকে। আপাতত নিজের কেন্দ্র তমলুকেই অধিকাংশ সময় থাকছেন তিনি। বুধবার ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করতেই তমলুক থেকে সোজা কলকাতা হাই কোর্টে আসেন তিনি। অভিযোগ জানিয়ে আবার তমলুকেই ফিরে যান।