সংবাদদাতা, কৃষ্ণনগর: এ আম আম-জনতার জন্য নয়। মুর্শিদাবাদের নবাবরা তাঁদের বাগানে ফলিয়েছিলেন এই আম, যার নাম কোহিতুর। কোহিতুর না কোহিনূর? এতই দামি আর এতটাই নাজুক এই আম যে, একে কোহিনূরের সঙ্গে তুলনা করাই যায়। হাতে গোনা কিছু কোহিতুর আমের গাছই অবশিষ্ট আছে মুর্শিদাবাদে। আর আছে কৃষ্ণনগরের জেলা উদ্যান পালন দপ্তরে। সেই ক’টি গাছের আমকে রক্ষা করতে বিশেষ পাহারার ব্যবস্থা করেছে জেলার উদ্যান পালন দপ্তর। গত এক মাস ধরে নিরাপত্তা রক্ষীরা কৃষ্ণনগরে জেলা উদ্যান দপ্তরে থাকা কোহিতুর আম ও তার গাছ পাহারা দিচ্ছেন। নবাবি আমলেও আম পাহারা দেওয়ার জন্য আম-পেয়াদা থাকত নবাবদের বাগানে। তাদের কাজ ছিল কোন আম কখন পাড়তে হবে তা দেখা ও চিহ্নিত করে সেগুলো পেড়ে ফেলা। কারণ কোহিতুর আম গাছেই পেকে গেলে তার স্বর্গীয় স্বাদের পরিবর্তন ঘটে যায়। তাই পাকার দিন দুই-তিন আগেই গাছ থেকে পেড়ে ফেলা হয় এই আম। পেড়ে তুলোর বিছানায় রেখে দেওয়া হয় এক একটি আম। শুধু রেখে দিলেই হয় না, নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর সেগুলো ঘুরিয়ে দিতে হয়, যাতে একটি দিকে বেশিক্ষণ চাপ পড়ে স্বাদ নষ্ট না হয়ে যায়। কাটার ক্ষেত্রেও বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। দু’-তিন ঘণ্টা জলে ভিজিয়ে রেখে তারপর ছুরি দিয়ে নয়, বাঁশের পাতলা কঞ্চি দিয়ে কাটা হয় কোহিতুর আম। যাতে আঁটিতে আঘাত লেগে স্বাদ নষ্ট না হয়ে যায় তাই এই সতর্কতা। বাংলার নবাব মুর্শিদকুলি খাঁ কোহিতুর গাছের চারা বিদেশ থেকে আনিয়েছিলেন। গত বছর এই কোহিতুর আম কৃষ্ণনগরে জেলা উদ্যান দপ্তরের বাগানে চিহ্নিত হওয়ার পর থেকেই এই আম গাছের বিশেষ পরিচর্যা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে কোহিতুর গাছে আগাছা যাতে না লাগে। কোহিতুর আম হওয়া কৃষ্ণনগরের জেলা উদ্যান দপ্তরের মধ্যেই রয়েছে হেরিটেজ সাইট কোম্পানির বাগান। উদ্যান পালন দপ্তরে গিয়ে দেখা গেল, কোহিতুর আমগাছগুলিকে পাহারা দিচ্ছেন নিরাপত্তা রক্ষীরা। উদ্যান পালন অধিকর্তা পলাশ সাঁতরা বলেন, এই বাদশাহী আম পাড়তে হবে জালতি দিয়ে। তাতে তুলোর প্যাড থাকবে। হাতের চোট বা ঘষা লাগলে কোহিতুর নষ্ট হয়ে যাবে। তাই যত্ন নিয়ে বিষয়টা করা গেলে ভালো। দুষ্প্রাপ্য এই আম গাছকে রক্ষা করতে নিরাপত্তা রক্ষীও বাগানে থাকছে।