এই যে দেখছেন বাঘদাড়া। বাপ-দাদুর মুখে শুনেছি এই দ্বীপেই নাকি একটা সময় বাঘ ঘুরে বেড়াত। চারপাশ ছিল জঙ্গলে ভর্তি। তবে সেসব আজ অতীত। এখন আর এই দ্বীপে বাঘ নেই। উন্নয়ন হয়েছে। তবে বঞ্চনাও রয়েছে। সুন্দরবন উপকূলে দাঁড়িয়ে এমনই নানা কথা বলছিলেন দিবাকর রায়, পলাশ কর-রা। লোকসভা ভোট এসেছে গোটা দেশে। সেই ভোটের হাওয়া সুন্দরবন উপকূলের একাধিক দ্বীপে।
তবে এলাকায় যে উন্নয়ন একেবারেই হয়নি তেমনটা নয়। তবে বঞ্চনার কথাও মুখে মুখে ফেরে।
সুন্দরবনের একাধিক দ্বীপ থেকে বহু যুবক চলে গিয়েছেন ভিনরাজ্যে কাজ করতে। বছরে একবার দুবার আসেন। আবার চলে যান। মূলত পঞ্চায়েত ভোটের আগে ও বিধানসভা ভোটের আগে তাঁরা আসেন। লোকসভা ভোটের আগে এবার অনেকেই ভিনরাজ্য়ের রুটি রুজির ছেড়ে আসেননি।
এই দ্বীপগুলির মানুষরা, এই উপকূলের মানুষরা বছরের পর বছর ধরে দেখছেন ঝড়ের তাণ্ডব। আয়লা, আমফান, ইয়াস। সেই সব ঝড়ের কথা বলতে গিয়ে এখনও শিউরে ওঠেন এলাকার লোকজন। এই সব ঝড়ের পরে কেমন আছেন সেখানকার বাসিন্দারা? তারই খবর নিল হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা।
ঝড়ের ভয়াবহ তাণ্ডব দেখেছিল সুন্দরবন। নদী, সুমদ্রের জলোচ্ছাস। মাটির বাঁধ টপকে জল ঢুকে পড়েছিল দ্বীপে। ভেসে গিয়েছিল পুকুর, জমি যা কিছু আছে সব। তারপর থেকে মূল জমিতে আর সবজি চাষ করা যায় না এখনও। মূলত আলের উপর কিছু সবজি চাষ করতে পারেন কৃষকরা। কারণ নোনা জল মাটির উর্বরতাকে শেষ করে দিয়েছে। সেখানে আর ফসল হয় না। কিন্তু আলের উপর জল দিলে সেই লবণ মূল জমিতে নেমে যায় । আর সেই আলেই হয় সবজি চাষ। তবে মূল জমিতে কিছু ধান চাষ হয়।
দ্বীপগুলিতে উড়ছে বিভিন্ন দলের পতাকা। হোর্ডিংও রয়েছে। কংক্রিটের পাকা রাস্তা হয়েছে একাধিক জায়গায়। তবে কংক্রিটের বাঁধ? সেই দাবি সব জায়গায় পূরণ হয়নি এখনও। মাটির বাঁধকে আরও উঁচু করার দাবিও রয়েছে। ম্যানগ্রোভ বাঁচানোর লড়াইও চলছে পুরোদমে।
তবে বাসিন্দারা বলেন, ভোট এলেই নানা প্রতিশ্রুতি আসে। কংক্রিটের বাঁধ তৈরির কথাও বলা হয়। এলাকায় জলের সমস্যা মেটানোর কথাও বলা হয়। কর্মসংস্থানের কথাও বলা হয়। কিন্তু সবটা পূরণ হয় না।
তবে সম্প্রতি বসিরহাটে নির্বাচনী সভা থেকে সুন্দরবন নিয়ে মাস্টার প্ল্যানের কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েছে উপকূলবর্তী এলাকায় বাসিন্দাদের অনেকের মধ্য়ে।
তবে সূত্রের খবর, বিশ্বব্যাঙ্কের সঙ্গে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের একটু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেখানে কংক্রিটের নদী বাঁধ, পর্যটন ও সৌন্দর্যায়নের নানা বিষয় ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৪১০০ কোটি টাকা খরচ হতে পারে। তবে বিরোধীদের দাবি, নানা সমস্যায় জর্জরিত সুন্দরবনের মানুষ। বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ। সেসব থেকে মুক্তি দরকার।