সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিজ্ঞাপনী ভাঁওতাবাজি ফাঁস! সংবাদপত্রে দেওয়া আবাস যোজনার বিজ্ঞাপন দিয়ে অপপ্রচার করছে বিজেপি। সেই বিজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রয়েছে এক প্রৌঢ়ার ছবি। বিজ্ঞাপনে দাবি করা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর আবাস যোজনার সুবিধা পেয়ে মাথার উপরে ছাদ পেয়েছেন ওই মহিলা। শুধু তাই নয়, ওই প্রৌঢ়ার মতো আরও ২৪ লক্ষ মানুষও নাকি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় মাথার উপর ছাদ পেয়ে আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে।
কিন্তু আদতে গল্পটা একেবারেই আলাদা। জানা গিয়েছে, আবাস যোজনার সুবিধা পাওয়া তো দূর-অস্ত, আবাস যোজনার নাম পর্যন্ত শোনেননি ওই প্রৌঢ়া। থাকেন মাসে ৫০০ টাকার ভাড়াবাড়িতে। কখন বিজ্ঞাপন নির্মাতারা তাঁর ছবি তুলেছেন, তাও জানেন না তিনি। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে আদপে বিহারের ছাপরা জেলার বাসিন্দা লক্ষ্মীদেবী নামের ওই মহিলা জানান, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতার বাবুঘাটে এসেছিলেন শৌচালয়ের কাজ করতে, সেখানেই হয়তো তাঁর ছবি তোলা হয়েছে।
লক্ষ্মীদেবী শৈশবে সপরিবার কলকাতায় এসেছিলেন। গত ৪০ বছর ধরে তিনি কলকাতার বউবাজার থানার মালাগা লাইন এলাকার বাসিন্দা। বিহারের চন্দ্রদেব প্রসাদকে বিয়ে করেছিলেন লক্ষ্মী। ২০০৯-এ স্বামী মারা যান। বিজ্ঞাপনে লক্ষ্মীর ছবির সঙ্গে লেখা আছে, “আমি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় নিজের বাড়ি পেয়েছি।” কিন্তু ওই মহিলা জানান, তাঁর নিজের কোনও বাড়িই নেই। ৫০০ টাকা ভাড়ায় পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে একটি বসতির ঘরে থাকেন তিনি। তাঁর কথায়, গ্রামে জমি, বাড়ি কিছুই নেই। দুই ছেলে কুরিয়ার সার্ভিসে কাজ করে। দৈনিক তাঁদের আয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
আপনি বাড়ির মালিক? এই প্রশ্নের উত্তরে লক্ষ্মী বলেন, “আমার বাড়ি কোথায়? সারা জীবন ফুটপাতে কাটিয়েছি। আমি ৫০০ টাকা ভাড়া নিয়ে একটি বসতিতে থাকি। যেখানে আমার দুই ছেলে, এক পুত্রবধূ ও তাঁদের দুই সন্তান থাকে। আমরা একই বাড়িতে থাকি।” লক্ষ্মীর পুত্রবধূ অনিতা বলেন, “আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে বেঁচে আছি। প্রতি লিটার ১০০ টাকা দরে কেরোসিন তেল কিনে রান্না করি।” আবাস যোজনার কথাই জানেন না লক্ষ্মী বা তাঁর পরিবারের সদস্যরা। অর্থাৎ, না আছে মাথার উপর পাকা ছাদ, না আছে বিনা পয়সার গ্যাস।
উল্লেখ্য, ভোটের আবহে সংবাদপত্রে বিজেপির দেওয়া বিজ্ঞাপনে সরব হয়েছে রাজ্যের শাসক দল। এই নিয়ে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগও জানানো হয়েছে। তবে, এই বিজ্ঞাপনটি কিছুটা পুরনো হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা নিয়ে নতুন করে বিতর্ক শুরু হয়েছে। যাতে অস্বস্তিতে পড়েছে বিজেপি। প্রসঙ্গত, এর আগেও বিজেপি সরকারের ভুয়া বিজ্ঞাপনের পর্দাফাঁস হয়েছে।