খুনের পর ফোনের লোকেশন বদল! বাংলাদেশের সাংসদের শেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ঘিরে রহস্য
প্রতিদিন | ২৩ মে ২০২৪
অর্ণব আইচ: কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে খুন হয়েছেন বাংলাদেশের ঝিনাইদহের সাংসদ আনোয়ারুল আজিম! এই খুনের ঘটনায় পরতে পরতে রহস্য। তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই কাণ্ডে প্রথম থেকেই আনোয়ারুলের মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরে রহস্য দানা বেঁধেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, শেষবার তাঁর ফোনের লোকেশন ছিল উত্তরপ্রদেশ। খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতেই তাঁর মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যাওয়া হয় বলে সন্দেহ পুলিশের। এবার প্রকাশ্যে এসেছে আনোয়ারুলের শেষ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ।
গত ১২ মে কলকাতায় এসেছিলেন আনোয়ারুল। উঠেছিলেন বরানগরে পুরনো বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে। ?বিশেষ কাজে দিল্লি পৌঁছলাম। আমাকে তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। আমিই ফোন করে নেব।? গোপাল বিশ্বাস, নিজের মেয়ে ও আপ্তসহায়ককে একসঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে এই মেসেজ পাঠিয়েছিলেন আনোয়ারুল। আর এই মেসেজ ও মোবাইলের শেষ টাওয়ার ঘিরেই সৃষ্টি হয়েছে রহস্য। আততায়ীদের মধ্যে একজন আনোয়ারুলকে খুনের পর সবাইকে বিভ্রান্ত করতে তাঁর মোবাইলটি উত্তরপ্রদেশে নিয়ে যান বলে সন্দেহ পুলিশের। খুনের পর খুনি ওই সাংসদের মোবাইল থেকেই হোয়াটস অ্যাপ করেছিল। এমনই সন্দেহ পুলিশের।
পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ১৩ মে বরানগরে বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি থেকে বেরনোর সময় আনোয়ারুল বলেছিলেন, তিনি ওইদিনকেই বরানগরে ফিরে আসবেন। কিন্তু সেদিনই গোপালকে হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ করে তিনি জানান, বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছেন। তিনি দিল্লি পৌঁছে ফোন করবেন। তাঁকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। এর দুদিন পর ১৫ মে সকাল ১১টা ২১ মিনিট নাগাদ হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করে আনোয়ারুল জানান , তিনি দিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন। তাঁর সঙ্গে কয়েকজন ভিআইপিও রয়েছেন। তাই তাঁকে ফোন করার প্রয়োজন নেই। বন্ধু গোপালের সঙ্গে ওই একই মেসেজ তিনি বাংলাদেশে তাঁর বাড়িতে ও আপ্তসহায়ককে পাঠান। পুলিশ তদন্ত করে জেনেছে, উত্তরপ্রদেশের মুজফফরপুরে মোবাইলের শেষ টাওয়ার ছিল। মাঝে মাঝে মোবাইল খোলা হচ্ছিল। তবে বেশিরভাগ সময়ের জন্যই বন্ধ করে রাখা হয়েছিল ফোনটি।
জানা গিয়েছে, ১৫ মের পরের দিন অর্থাৎ ১৬ মে সকালে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে একটি ফোন আসে তাঁর আপ্তসহায়কের নম্বরে। আবার অন্য ফোনটি আসে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদকের মোবাইলে। কিন্তু এমন সময় ফোন করা হয়, দুজনের কেউই তা ধরতে পারেননি। এর পর যখন আনোয়ারুলের ফোনে আপ্তসহায়ক রিং ব্যাক করেন, তখন আর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। তখনই আপ্তসহায়ক ও পরিবারের লোকেদের মনে হয়েছিল যে, কেউ তাঁকে ব্ল্যাকমেল করেছে।
কিন্তু খুনের বিষয়টি সামনে আসার পর পুলিশের ধারণা, খুনের পর খুনিরা মোবাইলটি লুঠ করে নেয়। এর পর প্রমাণ লোপাট করতেই এক আততায়ী তাঁর মোবাইলটি নিয়ে বিহার হয়ে উত্তরপ্রদেশে চলে যায়। সেখান থেকে সে দিল্লি পালায়, এমন সম্ভাবনাও পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। পুলিশের মতে, যে ব্যক্তি পুলিশ ও সাংসদের পরিবারের লোকেদের বিভ্রান্ত করতে মোবাইল নিয়ে পালিয়েছে, সে বাংলাদেশিও হতে পারে। আবার বাংলাদেশি আততায়ীদের এই রাজ্যের লিঙ্কম্যানও হতে পারে সে। এমন সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে, কীভাবে খুন করা হয় আনোয়ারুলকে, তা নিয়ে ক্রমশ জমাট বাঁধছে রহস্য। পুলিশ সূত্রে খবর, ১৩ মে নিউটাউনের আবাসনেই শ্বাসরোধ করে খুন করা হয় তাঁকে। খুনের পর টুকরো টুকরো করে কাটা হয় দেহ। ১৬ থেকে ১৮ মে পর্যন্ত তিনদিন ধরে দেহাংশ অন্যত্র সরিয়ে ফেলা হয়। দেহের কিছু অংশ ওই ফ্ল্যাটের ফ্রিজে রাখা রয়েছে বলেই খবর। এমনকি ফ্ল্যাট থেকে প্লাস্টিক ব্যাগ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের অনুমান, প্লাস্টিক ব্যাগে ভরেই দেহাংশ বিভিন্ন জায়গায় ফেলা হয়েছে। তবে দেহাংশ কারা ফেলে রেখেছে, কোথায় ফেলা হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।