যোগ্য-অযোগ্য এক তালিকায়, আক্ষেপ ১১৬৫ দিন ধর্না চালানো প্রার্থীদের
আনন্দবাজার | ২৪ মে ২০২৪
স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে ২০১৬ সালে নিযুক্ত হওয়া শিক্ষকদের পুরো প্যানেল ইতিমধ্যেই বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। তাঁদের মধ্যে কারা যোগ্য, কারাই বা অযোগ্য— সেই বিতর্কের নিষ্পত্তি হয়নি এখনও। এরই মধ্যে ধর্মতলায় গান্ধী মূর্তির পাদদেশে ২০১৬ সালের এসএসসি-র নবম থেকে দ্বাদশের অপেক্ষমাণ চাকরিপ্রার্থীদের ধর্না অবস্থান ১১৬৫ দিনে পড়ল। চাকরিপ্রার্থীরা জানাচ্ছেন, আগামী ১৬ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে যোগ্য-অযোগ্য শিক্ষকদের মামলার যে শুনানি হবে, সেখানে তাঁরাও স্পেশ্যাল লিভ পিটিশন (এসএলপি) করেছেন।
এই চাকরিপ্রার্থীদের মতে, যদিও শীর্ষ আদালত হাই কোর্টের রায়ে স্থগিতাদেশ দিয়েছে, কিন্তু তাঁরাও চান না, ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিল হোক। বরং, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের প্রকৃত বিভাজনের পরে অযোগ্যেরা বাদ গেলে যাঁরা অপেক্ষমাণ তালিকায় আছেন, তাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হতে পারে।
নবম থেকে দ্বাদশের অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা এক চাকরিপ্রার্থী অভিষেক সেন জানাচ্ছেন, তাঁরা স্পেশ্যাল লিভ পিটিশনে বলেছেন, এসএসসি-র এই দুর্নীতির ফলে যে যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিত হলেন, তাঁরা যেন সুবিচার পান। অভিষেকের দাবি, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ভূরি ভূরি অভিযোগ ইতিমধ্যেই প্রমাণিত। এসএসসি প্রথমে উচ্চ আদালতে জানিয়েছিল, ২০১৬ সালের প্যানেলে থাকা ২৫৭৫৩ জনের মধ্যে ৫২৫০ জন অযোগ্য। কিন্তু পরে সিবিআই সূত্রে জানা যায়, অযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি।
অভিষেক বলেন, ‘‘অযোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা প্রকৃতপক্ষে কত, তা আগামী ১৬ জুলাই শীর্ষ আদালতে ঠিক ভাবে জানাক এসএসসি। তাঁদের চাকরি বাতিল হলে আমরা যোগ্যদের তালিকায় ঢুকব। যাঁরা অবৈধ ভাবে চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের নাম যোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে থাকার ফলে আমরা বছরের পর বছর রাস্তায় বসে আছি।’’
অপেক্ষমাণ তালিকায় থাকা চাকরিপ্রার্থীরা আরও জানাচ্ছেন, হাজারো প্রতিকৃলতার মধ্যেও তাঁরা ১১৬৫ দিন ধরে ধর্না-অবস্থান চালিয়ে আসছেন। সম্প্রতি তীব্র দহনের মধ্যেও তাঁদের আন্দোলন বন্ধ হয়নি। চলতি সপ্তাহে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস রয়েছে। তবে তার মধ্যেও তাঁরা আন্দোলন থেকে সরতে রাজি নন। এখনও প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন চাকরিপ্রার্থী ধর্না মঞ্চে থাকছেন। তাঁদের আক্ষেপ, যোগ্য-অযোগ্যদের বিতর্কের মধ্যে পড়ে তাঁরাই এখন উপেক্ষিত।
এক চাকরিপ্রার্থীর কথায়, ‘‘আমরা তথ্যের অধিকার আইনে দুর্নীতির তথ্য জোগাড় করে ২০১৯ সালে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম, হয়তো সুরাহা মিলবে। কিন্তু কোথায় কী!’’ তাঁরা জানাচ্ছেন, ধর্নার ১০০০ দিন পূর্তিতে বিভিন্ন দলের নেতা-মন্ত্রীরা এসেছিলেন। তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ চাকরিপ্রার্থীদের এক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষা দফতরের কর্তাদের বৈঠকের ব্যবস্থাও করেছিলেন। এই প্রসঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভ, সেই বৈঠকে অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তাঁদের। কিন্তু এখনও যোগ্য এবং অযোগ্যের বিভাজনই তো ঠিক ভাবে হল না।