আরও একবার সাগরে মুড়িগঙ্গা নদীর উপর সেতু তৈরির প্রতিশ্রুতি দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, এ দিনই সাগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা শেষে বাড়ি ফেরার পথে ঝোড়ো হাওয়ায় মুড়িগঙ্গার চড়ায় আটকে পড়ে তৃণমূল সমর্থকদের একটি ট্রলার। প্রায় চার ঘণ্টা আটকে ছিলেন সকলে।
সভা শেষ হয়েছিল বেলা ১২টা নাগাদ। দুপুর আড়াইটে নাগাদ কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে শতাধিক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ঘোড়ামারা যাচ্ছিলেন। তাঁদের ট্রলার আটকে পড়েছে খবর পেয়ে কচুবেড়িয়া ঘাটে পৌঁছন সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা, সাগর থানার ওসি শুভেন্দু দাস, সাগরের বিডিও কানাইয়া কুমার রায়। বিকেল ৩টে নাগাদ প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানীয় জল ও শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পরে নদীতে জোয়ার এলে অতিরিক্ত তিনটি ট্রলার সকলকে উদ্ধার করে। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ সকলে ঘোড়ামারা দ্বীপে পৌঁছন।
মথুরাপুর লোকসভার তৃণমূল প্রার্থী বাপি হালদারের সমর্থনে শুক্রবার সাগরের কালীগিরি সংলগ্ন ময়দানে জনসভা করেন মমতা। বলেন, “গঙ্গাসাগরে যা যা করার ছিল, করে দিয়েছি। বাকি আছে শুধু মুড়িগঙ্গা নদীতে সেতু। সেতু তৈরি করতে একটু সময় লাগবে। সেতু তৈরির জন্য সার্ভে হয়ে কাগজপত্র তৈরি হয়ে গেছে। এমনকী, ডিপিআরও তৈরি হয়ে গিয়েছে। আশা করি, আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে সেতু তৈরি হয়ে যাবে। আপনাদের আর কোনও অসুবিধা হবে না।”
সেতু তৈরির জন্য প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে বলে এ দিন জানান মমতা। তিনি বলেন, “সেতু তৈরির জন্য বার বার কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আবেদন করলেও তাঁরা কোনও সাড়াশব্দ করেনি। তাই আমরা বাধ্য হয়ে সেতু তৈরির উদ্যোগ নিয়েছি।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এর আগে বহু বার মুখ্যমন্ত্রীর মুখে সেতুর প্রতিশ্রুতি মিলেছে। কবে কাজ শুরু হয়, সে দিকেই তাকিয়ে এলাকার মানুষ। সাগরের বাসিন্দা সুভাষ মণ্ডল বলেন, “আমরা আসলে প্রতিশ্রুতিই পাচ্ছি। আর বিশেষ কিছুই হচ্ছে না। যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের থেকে ভাল হলেও সেতু দরকার। সেতু হলে ভেসেলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষার সমস্যা থেকে রেহাই মিলবে। মুমূর্ষু রোগীরা সঠিক সময়ে বাইরের হাসপাতালে পৌঁছতে পারবেন।”
সাগরদ্বীপে প্রায় তিন লক্ষ মানুষের বাস। নিত্য প্রয়োজনে তাঁদের মুড়িগঙ্গা নদী পারাপার করতে হয়। তা ছাড়া, মেলার সময় বাদ দিয়েও সারা বছর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা আসেন। মুড়িগঙ্গা নদীতে সেতু হলে স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে ভিন্ রাজ্যের পুণ্যার্থীরা উপকৃত হবেন। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, কাকদ্বীপ থেকে সাগর পর্যন্ত মুড়িগঙ্গা নদীর উপরে চার লেনের সেতু তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। চার কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর মধ্যে নদীর উপরের অংশ আড়াই কিলোমিটার। পার্শ্ববর্তী রাস্তা তৈরি হবে আরও দু’কিলোমিটার।
গঙ্গাসাগর মেলায় কেন্দ্রের বঞ্চনা প্রসঙ্গেও এ দিন মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “গঙ্গাসাগর মেলা সারা পৃথিবীর কাছে সেরা জায়গা। গঙ্গাসাগর মেলার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার আজও পর্যন্ত এক টাকাও দেয়নি। এই মেলাকে জাতীয় মেলা ঘোষণা করা উচিত।”
স্থানীয় বিজেপি নেতা অরুণাভ দাসের প্রতিক্রিয়া, “মুখ্যমন্ত্রী চমকের রাজনীতিতে বিশ্বাসী। রাজ্যে কোষাগারের অবস্থা খুব খারাপ। তাই কেন্দ্রের সাহায্য ছাড়া সেতু তৈরি করা অসম্ভব। মুখ্যমন্ত্রী ভোটের আগে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। বিজেপি মথুরাপুরে জিতে সেতু তৈরি করবে।”
এলাকার বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী বঙ্কিম হাজরা বলেন, “তৃণমূল কোনও প্রতিশ্রুতি দিলে তা পূরণ করে দেখায়। কিন্তু বিজেপির প্রতিশ্রুতি তো ভাঁওতাবাজি। তৃণমূল সরকার কথা দিয়েছে যখন, কথা রাখবে। লোকসভা ভোটের পরেই সেতুর শিলান্যাস হবে। ২০২৫ সালের গঙ্গাসাগর মেলার আগে কাজ শুরু হয়ে যাবে।”
সুন্দরবন মাস্টারপ্ল্যান নিয়েও এ দিন মুখ খোলেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, “আমরা সুন্দরবন জেলার জন্য একটা নতুন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছি। সুন্দরবন জেলা ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ। আমরা প্রায় দু’কোটি ম্যানগ্রোভ লাগিয়েছি, যাতে পাড় ভেঙে না যায়।”
সমুদ্রসাথী প্রকল্পে মৎস্যজীবীরা টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ ওঠে। এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “সমুদ্রসাথীতে কেউ যদি বাদ থাকেন, দয়া করে তাঁদের নাম ভোটের পরে লেখাবেন। ভোটের পরে লেখালেও আপনি টাকা পাবেন।”