ভোটকর্মীরা যাতে দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হন এবং ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে যেতে পারেন সে দিকে নজর রেখে ‘রাত জাগছে’ বন দফতর। হাতির হানা রুখতে রাতে মশাল হাতে পাহারার বন্দোবস্ত করল তারা।
শনিবার ষষ্ঠ দফায় পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামে লোকসভা ভোট রয়েছে। ওই দুই জেলার চারটি বন বিভাগের অধীনস্থ প্রায় ১৬০০ বুথ রয়েছে জঙ্গল লাগোয়া গ্রামে। আর ওই জঙ্গলগুলিতে রয়েছে হাতির বিচরণ। এই মুহূর্তে দুই জেলায় বেশি হাতির দল না-থাকলেও ছোট ছোট হাতির দল নিয়ে চিন্তিত বন দফতর। দলছুট হাতিও রয়েছে বেশ কয়েকটি জঙ্গলে। নির্বাচনের আগে থেকেই সেই সব হাতির উপর নজরদারি চালাচ্ছেন বন দফতরের কর্মীরা। হাতির উপদ্রবে যাতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া ব্যাহত না হয়, তা নিশ্চিত করতে রাজ্য বন বিভাগ মানুষ এবং ড্রোনের মাধ্যমে হাতির গতিবিধি ‘ট্র্যাক’ করতে শুরু করেছে।
শুক্রবার, ভোটের আগের রাতে হুলা পার্টি এবং অতিরিক্ত বনরক্ষী মোতায়েন করা হয়েছে ওই সব এলাকায়। ভোটের দিনেও হাতির করিডোরে টহল চালাবেন ওই অফিসারেরা। হুলা পার্টি থেকে শুরু করে ঐরাবত গাড়ি মজুত রাখা হচ্ছে বলে বন দফতর সূত্রে খবর। জঙ্গলের রাস্তায় দাঁড়িয়ে প্রয়োজনে ভোটারদের দিক্নির্দেশ করবেন বনকর্মীরা। কোন এলাকায় হাতি রয়েছে তা-ও মেসেজের মাধ্যমে আগাম জানিয়ে দেবে বন দফতর। তা ছাড়া মাইকিং করে সতর্ক করার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বন দফতর।
গত ১৫ মে, মেদিনীপুর সদরের চাঁদড়া রেঞ্জের মেটাল গ্রামের ৬৯ বছর বয়সি বাসিন্দা ঊর্মিলা মাহাতো জঙ্গলে শালপাতা তুলতে গিয়ে হাতির হানায় মারা যান। ঊর্মিলার ছেলে ধনপতি মাহাতো বলেন, “আমার মায়ের হাতির আক্রমণে মৃত্যু হয়েছে। বন দফতর থেকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে।” তার তার আগে গত ৯ মে, মানিকপাড়া রেঞ্জে একটি কৃষিজমিতে একটি হাতি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। এই সব ঘটনা মাথায় রেখে ভোটের আগে সজাগ বন দফতর। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদরি বলেন, ‘‘ভোটের দিন ভোটারদের পাশাপাশি পোলিং আধিকারিকদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন একাধিক বৈঠক চলছে। আমরা সংশ্লিষ্ট ডিএফওদের ড্রপ গেট, হুলা পার্টি এবং অতিরিক্ত গাড়ি-সহ জরুরি সব রকম ব্যবস্থা করতে বলেছি।’’
মেদিনীপুরের চাউলপুরা জঙ্গলে হুলা পার্টির ২০ সদস্যের দল হুলা (মশাল), গজ বোমা (হাতিদের ভয় দেখানোর জন্য পটকা) এবং শক্তিশালী ব্যাটারি চালিত টর্চ দিয়ে নজরদারি চালাচ্ছে। ওই দলের সদস্য খোকন মাহাতো বলেন, “দুই দিনে এই এলাকায় তিনটি হাতি দেখা গিয়েছে। নির্বাচনের আগে হাতির উপদ্রব থেকে চাঁদড়া থেকে লালগড়ের দিকে যাওয়া চাউলপুরা রোড যাতে হাতির উপদ্রব থেকে সুরক্ষিত থাকে তা নিশ্চিত করতে বন বিভাগের পক্ষ থেকে আমাদের উপর ২৪ ঘণ্টা টহলের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’