• ‘আমি পদত্যাগ করলে মমতা সরকারেও পতন হবে’
    ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস | ২৫ মে ২০২৪
  • নির্বাচনের নির্ঘন্ট ঘোষণার পর দিল্লির কথিত আফগারি দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হন কেজরিওয়াল। আদালতের নির্দেশে অন্তর্বর্তী জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর আপ সুপ্রিমো ক্রমাগত আক্রমণাত্মক প্রচারে বিজেপি তথা মোদী সরকারকে নিশানা করেছেন। এবার লোকসভা নির্বাচনে দিল্লিতে প্রথমবারের মতো আপ ও কংগ্রেস একসঙ্গে নির্বাচনে লড়াই করছে। কিন্তু পাঞ্জাবে কেন একসঙ্গে লড়াই করলেন না কেজরিওয়াল? এমন পরিস্থিতিতে দিল্লি এবং সারা দেশে আম আদমি পার্টি ও ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের জয়ের সম্ভাবনা কতটা এবং আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দল কতটা প্রস্তুত। এই বিষয়ে খোলাখুলি জানিয়েছেন আপ সুপ্রিমো তথা দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

    প্রশ্ন: দিল্লিতে নির্বাচনী প্রচার শেষ। শনিবার ভোট হওয়ার কথা। দিল্লি এবং সারা দেশে আম আদমি পার্টি এবং ইন্ডিয়া অ্যালায়েন্সের পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?

    উত্তর: জেল থেকে জামিন পেয়ে আমি বেরোনোর পর আমি যেখানেই নির্বাচনী প্রচারে গিয়েছি, সেখানে একটা জিনিস স্পষ্ট দেখেছি যে, আমাকে যেভাবে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে, গ্রেফতার করা হয়েছে তা নিয়ে দিল্লির মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এতে করে আখেড়ে বিজেপিই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে। দিল্লিতে সাতটি আসনই হারাবে মোদী সরকার। জাতীয় পর্যায়েও মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের কারণে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এসব বিষয়ে কথা না বলে প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে আজে-বাজে কথা বলছেন। এসব সমস্যার সমাধানে তিনি উদাসীন। দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, এবার বিজেপি-আরএসএস দলবদ্ধ হয়ে কাজ করছে না। তাদের মধ্যে অনেক টানাপোড়েন এবং পার্থক্য রয়েছে। এমনকি মাঠে, আরএসএস-এর লোকেরা এবার প্রচার করছে না। নরেন্দ্র মোদীর পর প্রধানমন্ত্রী পদে অমিত শাহের দাবি নিয়ে বিজেপির নেতাদের মধ্যে বিভেদ আরও গভীর হচ্ছে। এ সব থেকে লাভবান হবে বিজেপি জোট।

    প্রশ্ন: ইন্ডিয়া জোট কতগুলি আসন পাবে বলে আপনি আশা করছেন?

    উত্তর: আমি মনে করি বিরোধী জোট ৩০০- টিরও বেশি আসন জিতবে এবং আমরা দেশকে জনগণের জন্য একটি পরিচ্ছন্ন ও কর্মক্ষম সরকার দিতে সফল হব।

    প্রশ্ন: বিজেপির প্রশ্ন জোট সরকারে কে প্রধানমন্ত্রী মুখ? প্রতিযোগীদের তালিকায় কী আপনার নামও রয়েছে?

    উত্তর: কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নির্ধারণ করা হবে। এটা বড় বিষয় নয়। আমি প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নেই। আমরা একটি ছোট দল এবং আমরা ২২টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছি। আমরা এই দেশ ও গণতন্ত্রকে বাঁচাতে একত্রিত হয়েছি। মোদী সরকার যেভাবে গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ধ্বংস করার কাজ করেছে, আবার ক্ষমতায় এলে সজকল বিরোধী নেতাদের জেলে পুরে দেবে। বিজেপি এজেন্সিকে কাজে লাগিয়ে বিরোধী দলের সব নেতার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আমাদের কাছে এই নির্বাচন দেশ, গণতন্ত্র ও সংবিধান বাঁচানোর নির্বাচন। কে হবেন প্রধানমন্ত্রী সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। আমরা ৪ তারিখের পরে সিদ্ধান্ত নেব, তবে আমাদের সবার লক্ষ্য একই।

    প্রশ্ন: সরকারবিরোধী ভোট যাতে বিভক্ত না হয়, সেজন্য আপনারা সবাই একত্রিত হয়েছেন। আপনি দিল্লিতে কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনে লড়ছেন, কিন্তু পাঞ্জাবে নয়। এতে কি পাঞ্জাবের ভোট ভাগ হবে না?

    উত্তর: পাঞ্জাবের পরিস্থিতি ভিন্ন। সেখানে লড়াইয়ে বিজেপি নেই। অতএব, সেখানে যে ভোটই মানুষ দেবেন তা এককভাবে যাবে জোটের খাতায় যাবে। যে সব জায়গায় বিজেপি আমাদের সামনে প্রতিদ্বন্ধী সেই সকল রাজ্যে আমরা একসঙ্গে লড়াই করছি।

    প্রশ্ন: গতবার দিল্লিতে বিজেপি ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। কংগ্রেস ও আপ-এর ভোট একত্রিত হলেও তা বিজেপির থেকে কম ছিল। তাহলে কীসের ভিত্তিতে সাতটি আসনে জয়ের দাবি করছেন?

    উত্তর: এই ধরনের হিসাবের উপর ভিত্তি করে নির্বাচন লড়াই বা জেতা সম্ভব নয়। প্রতিটি নির্বাচনের সময় পরিস্থিতি ভিন্ন হয়। প্রথমত, এবার আমরা কংগ্রেসের সঙ্গে একসঙ্গে নির্বাচনে লড়ছি। তার উপরে বিজেপিকে নিয়ে মানুষের মধ্যে অনেক ক্ষোভ রয়েছে। অনেক মানুষ, যারা গতবার বিজেপিকে ভোট দিয়েছিলেন, এবার তারা বিজেপিকে ভোট দেবেন না। তা ছাড়া কেন্দ্রীয় সরকারের একনায়কত্বের এই ইস্যুটিও আজ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং বিজেপি আর আগের মতো অবস্থানে নেই। এবার বড় পরিবর্তনের সাক্ষ্মী থাকবে দেশ।

    প্রশ্ন: নির্বাচন ঘোষণার পরপরই কেন আপনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে? এতে রাজনৈতিকভাবে কারা লাভবান হয়েছে? কাদের ক্ষতি?

    উত্তর: একটি নয়, দুটি কারণে বিজেপি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রথমত, নির্বাচনের সময় আমাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল, যার ফলে জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তার কয়েকদিন পর সুপ্রিম কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন পেলাম। বিজেপির অঙ্কটা ছিল আমাকে জেলে আটকে রেখে আপকে ভেঙে দেওয়ার। কিন্তু ঠিক উল্টো ঘটনা ঘটেছে। দুঃসময়ে সবাই একসঙ্গে কাজ করে দলকে সামলেছেন। এর ফলে আমাদের দল আগের থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিজেপি মনে করেছিল আমি চাপের মুখে পদত্যাগ করব, কিন্তু আমিও পদত্যাগ করিনি। তাদের পুরো ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে।

    প্রশ্ন: বিজেপি ক্রমাগত অভিযোগ করছে আপনি পদের লোভে পদত্যাগ করেননি?

    উত্তর: বিজেপি চেয়েছিল যে আমি পদত্যাগ করি এবং তারপর তারা আমাদের সরকারকে ভেঙে ফেলবে। আমার পদের বা ক্ষমতার কোন লোভ নেই। আমি আয়কর কমিশনারের পদ ছেড়ে বহু বছর বস্তিতে থেকে কাজ করেছি। মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে ষড়যন্ত্র করে আমাকে গ্রেফতার করেছে। তাদের এই পদক্ষেপ গণতন্ত্রবিরোধী। এর প্রতিবাদে আমি পদত্যাগ করিনি। এমনকি আমরা জনসাধারণের মধ্যে গিয়েছিলাম এবং জিজ্ঞাসা করেছি আমার পদত্যাগ করা উচিত কি না এবং লোকেরা সর্বসম্মতভাবে জানিয়েছিল যে আমার পদত্যাগ করা উচিত নয়। যাই হোক, আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি। যদি কোনো মামলায় শাস্তি দুই বছরের কম হয়, তাহলে আমার পদ থেকে পদত্যাগের প্রয়োজন নেই। আইন অনুযায়ী আমি বিধায়ক, মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী থাকতে পারি এবং জেলে থাকা সত্ত্বেও সরকার চালাতে পারি। নির্বাচনের পর আমরা সুপ্রিম কোর্টে আবেদনও করব এবং আদালতের কাছে আবেদন করব যাতে কারাগার থেকে সরকার চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় এবং এ জন্য কারাগারে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে।

    প্রশ্ন: নির্বাচনের পর ২ জুন আবার জেলে আত্মসমর্পণ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট থেকে যদি অনুমতি না পাওয়া যায়, তাহলে মহিলাদের প্রতি মাসে এক হাজার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা কীভাবে কার্যকর হবে?

    উত্তর: আমি দিল্লির মহিলাদের আশ্বস্ত করতে চাই যে তাদের চিন্তার কোন কারণ নেই। যে কোনো পরিস্থিতিতে আমরা এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করব। বিজেপি আগেও আমাদের কাজ বন্ধ করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু আমরা সব কাজ শেষ করেছি। আমরা এই পরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করব। আমি আশা করি জেল থেকে সরকার চালাতে দেওয়া হবে এবং কোনো কাজ বন্ধ হতে দেব না।

    প্রশ্ন: আপনি আদালত থেকে স্বস্তি পেয়েছেন, সঞ্জয় সিং স্বস্তি পেয়েছেন, কিন্তু মণীশ সিসোদিয়া এখনও কেন স্বস্তি পাননি? এর কারণ কী হতে পারে?

    উত্তর: পিএমএলএ-র এই নতুন আইনটি তৈরি করা হয়েছে, যাতে পুরো সিস্টেমটি উল্টে দেওয়া হয়েছে। সাধারণত, একটি মামলায় অপরাধী আদালতের নির্দেশের পরে শাস্তি পায়, তবে PMLA-এর অধীনে, এফআইআর দায়ের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয় এবং সহজে জামিন পাওয়া যায় না। এ কারণেই এই আইনে ধৃতরা জামিন পাচ্ছেন না। তারা আমাদের অনেক নেতাকে গ্রেফতার করে জেলে পুরেছে, শ’য়ে শ’য়ে স্থানে অভিযান চালিয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একটি টাকাও উদ্ধার হয়নি। বিরোধী দলের সব নেতাকে কারাগারে রাখার জন্যই এই আইন করা হয়েছে। ভারতে জোট সরকার গঠিত হলে আমরা এই আইন প্রত্যাহার করার বিষয়েও আলোচনা করব। এ ব্যাপারে পুরো বিরোধী দল একমত।

    প্রশ্ন: দিল্লি সরকার এবং এলজির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনার পরিস্থিতি রয়েছে? তিনি আপনার অনেক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করেছে আপনি এই সম্পর্কে কি বলতে চান?

    উত্তর: এলজি তার সীমা লঙ্ঘন করছে। সংবিধানের অধীনে, শুধুমাত্র জমি, পুলিশ এবং জনশৃঙ্খলা মতো বিষয় তাদের এখতিয়ারে রয়েছে। কিন্তু তারা সরকারের কাজে হস্তক্ষেপ করে চলেছে। ধরুন, আমরা যদি কিছু ভুল করে থাকি, তারা সে বিষয়ে তাদের মতামত জানাতে পারে, আদালতে যেতে পারে, কিন্তু তারা সরাসরি আদেশ জারি করে এবং সরকারের সিদ্ধান্তগুলিকে তুলে নেওয়ার ফরমান দেয়। এটা নির্বাচিত সরকারের অধিকার লঙ্ঘন।

    প্রশ্ন: আপনি কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, কিন্তু রাহুল গান্ধী এবং আপনাকে নির্বাচনী প্রচারে কোথাও একসঙ্গে দেখা যায়নি?

    উত্তর: আমরা একসঙ্গে প্রচারণা চালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু ভোটের তারিখের কারণে আমরা একসঙ্গে প্রচার চালাতে পারিনি। তবে যেখানেই সম্ভব আমরা একে অপরের প্রার্থীদের পক্ষে সম্পূর্ণ প্রচার চালিয়েছি। শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও এখন বেশ ভালো শক্তি দেখা যাচ্ছে উভয় দল, তাদের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। ইন্ডিয়া জোটের জয় নিশ্চিত করতে সবাই একযোগে কাজ করছে। মানুষ বিজেপির উপর ক্ষুব্ধ এবং এই পুরো ভোট বিজেপি-বিরোধী ভোট। তাই ভোট সুসংহত হবে বলে আমার পূর্ণ প্রত্যাশা, কারণ এবার ভোটারদের সামনে কোনো ধরনের বিভ্রান্তি নেই।

    প্রশ্ন: আপনার ১০টি গ্যারান্টিতে চিনের অবৈধ দখলদারিত্ব থেকে দেশের ভূমি মুক্ত করার এবং এ জন্য সেনাবাহিনীকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়ার কথাও বলেছেন। চিনের সঙ্গে আমাদের দেশের সম্পর্ককে আপনি কীভাবে দেখেন?

    উত্তর: গত ১০ বছরে, চিন অনেক জায়গায় অবৈধভাবে ভারতীয় জমি দখল করেছে এবং সেখানে তারা তাদের পরিকাঠামো তৈরি করেছে। দুর্ভাগ্যবশত, মোদী সরকার শুধু তা উপেক্ষাই করেনি, এই ইস্যুতে দেশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টাও করেছে। মোদীর প্রিয় কিছু বন্ধুর চিনের সঙ্গে ব্যবসায়িক স্বার্থ রয়েছে বলেই তারা এটা করছে। চিন যদি আমাদের ভূমি দখল করে থাকে, তাহলে তার সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বন্ধ করা উচিত ছিল, কিন্তু এর বিপরীতে, চিন আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যবসায়িক অংশীদার।

    প্রশ্ন: এবারের নির্বাচনেও ধর্মীয় ভিত্তিতে মেরুকরণের চেষ্টা দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিমদের বারবার উল্লেখ করছেন বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রী। এই বিষয়ে আপনার মতামত কি?

    উত্তর: মানুষ এখন বিজেপির কাছ থেকে এমন হাস্যকর কথা শুনে শুনে ক্লান্ত। কখনও তারা বলে বিরোধী জোটের নেতারা তোমার জল কেড়ে নেবে, কখনও বলে বিদ্যুৎ কেটে দেবে, কখনও বলে মঙ্গলসূত্র ছিনিয়ে নেবে, কখনও বলে রিজার্ভেশন শেষ করে দেবে। জনগণ মূদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্বের সমাধান চায়। মূদ্রাস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। কর্মসংস্থান নেই। শিশুরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। বিজেপি সারা দেশে একনায়কতন্ত্রের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। তবে মূদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব থেকে জনগণকে স্বস্তি দিতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। আমাদের প্রচেষ্টার ফল হল আজ দিল্লিতে মূদ্রাস্ফীতির হার দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন ৩ শতাংশ, যেখানে দেশে তা ৬ শতাংশের বেশি। আমরা ১২ লাখেরও বেশি যুবককে কর্মসংস্থান দিয়েছি। বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সুবিধা, বাসে মহিলাদের বিনামূল্যে যাতায়াতের সুবিধা দেওয়া হয়েছে।

    প্রশ্ন: আপনি বলছেন যে আপনি প্রধানমন্ত্রী পদের দৌড়ে নেই, তাহলে জোটে আপনার ভূমিকা কী হবে এবং সারাদেশের দরিদ্র জনগণকে কীভাবে বিনামূল্যে ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দেবেন? আপনি কিভাবে বিনামূল্যে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন?

    উত্তর: আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলব। এটা কোন একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত বা প্রচেষ্টা নয়। দলগত সবাই এই লক্ষ্যে কাজ করবো। আমরা সবার সঙ্গে বসে তাদের বুঝিয়ে বলবো কীভাবে বিনামূল্যে সারাদেশের মানুষকে মৌলিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়। আমি মনে করি কেউ এই বিষয় অস্বীকার করবে না। সবাই মিলে কাজ করলে সারাদেশে এই সকল কিছু কিছু বাস্তবায়ন করা সম্ভব।

    প্রশ্ন: জেলে থাকার সময় আপনার স্ত্রী নির্বাচনী প্রচারের দায়িত্ব নেন। এখন তাকেও আপনার সঙ্গে প্রচার চালাতে দেখা যাচ্ছে। তাকে কি ভবিষ্যতে সরকার বা দলে বড় কোনো ভূমিকায় দেখা যাবে?

    উত্তর : রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা তার নেই। এমন জল্পনা ভিত্তিহীন।

    প্রশ্ন: আপনি বলেছিলেন যে স্বাতী মালিওয়ালের মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত, কিন্তু স্বাতী প্রশ্ন করেছেন যে যদি তাই হয়, তাহলে আপনি কেন রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করলেন এবং বৈভবের গ্রেফতারের প্রতিবাদ করলেন?

    উত্তর: স্বাতীর ক্ষেত্রে আমাদের দলের অভ্যন্তরেই দুটি মত রয়েছে। যেহেতু বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন তাই এ বিষয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। পুলিশের উচিত নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সত্যিটা বের করা, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আজ যেভাবে আমাকে জেলবন্দী করার, আমার বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা-মাকে টার্গেট করেছেন এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পুলিশ পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এর চেয়ে জঘন্য আর কিছু হতে পারে না যে আমার সঙ্গে আপনার শত্রুতা আছে, কিন্তু আমার বাবা-মার সঙ্গে এমন অত্যাচার মেনে নেওয়া যায় না।

    প্রশ্ন: আপনি দুর্নীতি ও স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলছেন, জবাবে বিজেপি আপনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, দুর্নীতি না করলে কেন জামিন পাচ্ছেন না?

    উত্তর: স্বাধীন ভারতের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি হল নির্বাচনী বন্ড। প্রতিটি নির্বাচনী বন্ডের পিছনে রয়েছে বিজেপির দুর্নীতির পুরো কাহিনী। এর মাধ্যমে বিজেপি যা দান পেয়েছে, তার বিনিময়ে কেউ না কেউ লাভবান হয়েছে। ED-CBI-এর মাধ্যমে কাউকে চাপ দিয়ে অনুদান নেওয়া হয়েছিল। বিজেপি যে আনুমানিক ৮ হাজার কোটি টাকার অনুদান পেয়েছে, তার মধ্যে প্রায় ১৭০০ কোটি টাকা সরাসরি এমন লোকদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে যারা কোনো না কোনোভাবে সিবিআই বা ইডির র‍্যাডারে ছিল। তাই দুর্নীতির বিষয়ে কথা বলার অধিকার বিজেপি বা প্রধানমন্ত্রীর নেই। ভারতে জোট সরকার গঠিত হলে আমরা নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে প্রাপ্ত অনুদানের বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করব।

    প্রশ্ন: লোকসভা নির্বাচনের কয়েক মাস পরেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন, বর্তমান পরিস্থিতিতে তার প্রস্তুতি কী হবে?

    উত্তর: কেন্দ্রীয় সরকার এবং এলজি দিল্লি সরকারের কাজ বন্ধ করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কোনও কাজ বন্ধ করতে দিইনি। তারা আমাদের হয়রানি করতে সবরমক চেষ্টা করেছিল। এ ব্যাপারে তিনি দিল্লির মানুষকেও হয়রানি করেছেন। সুপ্রিম কোর্ট থেকে আমরা যে অধিকার পেয়েছি তা কেড়ে নেওয়ার জন্য তারা এই আইনগুলি নিয়ে এসেছিল, কিন্তু তারপরও আমরা সাহসিকতার সাথে প্রতিটি পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছি এবং জনগণের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। জনগণের কাজ করার জন্য ভবিষ্যতে যা যা পদক্ষেপ নেওয়া দরকার আমরা নেব, কিন্তু কোনো কাজ বন্ধ হতে দেব না।

    প্রশ্ন: আপনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এখন যেহেতু আপনি অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে বেরিয়ে এসেছেন, কী বলবেন?

    উত্তরঃ দেশ খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এখন খুব দ্রুত দেশ একনায়কতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। তারা (কেন্দ্রের বিজেপি সরকার) প্রথমে (ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী) হেমন্ত সোরেনকে এবং তারপর আমাকে গ্রেফতার করেছিল। আমাকে গ্রেফতার করে তারা দেশের মানুষকে একটা বার্তা দিতে চেয়েছেন, কেজরিওয়ালকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করতে পারলে যে কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব। এগুলি একনায়কতন্ত্রের লক্ষণ। গণতন্ত্রে বিজেপির উচিত মানুষের কথা শোনা, কিন্তু তারা জনগণকে তাদের কথা শুনতে বলছে। এর থেকে দেশকে বাঁচাতে হবে। একভাবে এটা স্বাধীনতা সংগ্রামের মতো। আমি সব সময় বলেছি দেশের জন্য জীবন দিতে পারি। এটি সেই সংগ্রামের একটি অংশ।

    প্রশ্ন: মোদীর তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি কী?

    উত্তরঃ বিজেপি সংবিধান পরিবর্তন করবে এবং দেশে স্বৈরাচারী শাসন চলবে। হয় কোনো নির্বাচন হবে না, অথবা নির্বাচন হবে রাশিয়ার মতো, যেখানে পুতিন হয় বিরোধীদের জেলবন্দী করেছেন বা তাদের হত্যা করেছেন।

    প্রশ্ন: আপনাকে জেলে ফিরে যেতে হবে, কী বলছে আপনার পরিবার?

    উত্তরঃ তারা সবাই খুব সাহসী। আমি খুব ভাগ্যবান যে এমন একটি পরিবার এবং এমন একজন স্ত্রী পেয়েছি।
  • Link to this news (ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস)