এবার ঠিক-ঠিক জানা গেল নির্দিষ্ট করে কোথায় আছড়ে পড়বে ভয়ংকর 'রিমাল'...
২৪ ঘন্টা | ২৬ মে ২০২৪
অয়ন ঘোষাল: শুরু বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া! সুন্দরবনের ঝড়খালিতে শুরু হল বৃষ্টি এবং তার সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া! ঝড় যত পরিণতি পাচ্ছে, তত স্পষ্ট হচ্ছে এর গতিপ্রকৃতি। এবার পরিষ্কার করে জানা গেল, ঠিক কোথায় আছড়ে পড়তে চলেছে 'রিমাল'। আবহবিদেরা জানালেন, ইন্দো-বাংলা সুন্দরবন সীমান্তের কাছে বাংলাদেশের মংলা'তে ল্যান্ডফল করতে পারে এটি। এখনও পর্যন্ত অন্তত তেমনই পূর্বাভাস।
বাংলাদেশের সুন্দরবনের ইকোপার্ক-লাগোয়া মংলা এলাকার দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে আজ, রবিবার রাত ১১ টা থেকে ১টা নাগাদ ১২০ কিলোমিটার গতিবেগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। সেই সময়ে হাওয়ার সর্বোচ্চ গতিবেগ ১৩৫ কিলোমিটার হতে পারে! উত্তর-বঙ্গোপসাগরে এখনও ঘূর্ণিঝড় রূপেই এর অবস্থান। ক্রমশ সঞ্চয় করছে শক্তি। আজ, রবিবার সকাল আনুমানিক সাড়ে ৮ টা থেকে সাড়ে ১০ টা নাগাদ এটি সিভিয়ার সাইক্লোনে পরিণত হবে। উত্তর অভিমুখে এসে সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে সুন্দরবন এলাকার স্থলভাগে এর প্রভাব সব থেকে বেশি থাকবে। রাত ১১টা থেকে ১টার মধ্যে ল্যান্ডফলের সম্ভাবনা। রবিবার দুপুর থেকে সোমবার দুপুর পর্যন্ত দুর্যোগ থাকবে। সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের সতর্কতা রয়েছে। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধাজ্ঞা।গতসন্ধের আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছিল, গতকাল শনিবার বিকেল বা সন্ধ্যার পরে আবহাওয়ার পরিবর্তন হতে পারে। মাঝ-রাত থেকে বৃষ্টির সম্ভাবনা। তেমনটা অবশ্য ঘটেনি। তবে আজ, রবিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে বৃষ্টি ও দমকে-দমকে হাওয়া। আজ দিনভর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঝেড়ো হাওয়ার পূর্বাভাস রয়েছে। সোমবারেও অতিভারী বৃষ্টি, সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া। মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন।শনিবার কলকাতায় সকাল থেকেই অস্বস্তিকর আবহাওয়া ছিল। চড়া রোদ, দমচাপা গরমের কষ্ট ছিল। পাশাপাশি আংশিক মেঘলাও ছিল আকাশ। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ ছিল যথেষ্ট বেশি। এজন্যই আরও বেড়েছিল গরমের অস্বস্তি। তবে জানা গিয়েছে, এর বদল ঘটবে। ঘটতে শুরুও করেছে। সন্ধ্যার পরে আবহাওয়ার পরিবর্তন। মাঝরাত থেকে বৃষ্টি বাড়তে পারে। রবিবার দিনভর ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া এ-শহরেও। সোমবারেও অতিভারী বৃষ্টির সঙ্গে হালকা ঝোড়ো হাওয়া থাকবে। মঙ্গলবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে বলে জানা গিয়েছে।পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে অতি গভীর নিম্নচাপ শনিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও উত্তর বঙ্গোপসাগরে এই ঘূর্ণিঝড় তৈরি হবে। পরে এটি উত্তর অভিমুখে এসে সাগরদ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মাঝে সুন্দরবন এলাকার স্থলভাগে আছড়ে পড়বে। রবিবার মাঝরাতে ল্যান্ডফলের সময় এর গতিবেগ থাকবে ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা।এর ফলে আজ শনিবার থেকেই বৃষ্টি শুরু হবে। যা ইতিমধ্যে বেশ কিছু জায়গায় শুরুও হয়ে গিয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে রবিবার এবং সোমবারও। বিপুল বৃষ্টি হবে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, নদীয়া, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম এবং পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে। ওদিকে সোমবার এবং মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গেও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকবে। উত্তরবঙ্গেও বৃষ্টি বাড়বে মঙ্গলবার থেকে। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের সব জেলায় ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস।শুধু বৃষ্টি নয়, ঝড়ের মতো পরিস্থিতি তৈরি হবে এই ক'দিন। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত দমকা ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার পর্যন্ত ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। কলকাতা, হাওড়া, পূর্ব মেদিনীপুর, নদিয়ায় ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বেগে ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে। হুগলি ও পূর্ব বর্ধমানে ৭০ থেকে ৮০ কিলোমিটার গতিবেগে ঝোড়ো বাতাস বইতে পারে।রিমাল ঘূর্ণিঝড়ে কাঁচাবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, গাছ উপড়ে পড়তে পারে, হর্টিকালচার উদ্ভিদের বিশেষ ক্ষতি হবে, বড় রকমের ক্ষতি হতে পারে কাঁচাবাঁধগুলিরও। সবচেয়ে যা চিন্তার, তা হল, জানা গিয়েছে, এক মিটার জলোচ্ছ্বাস হবে সমুদ্রে। যার জেরে নোনা জল ঢুকে পড়তে পারে অনেক এলাকায়। যার জেরে ক্ষতি হবে চাষের জমিরও।
রবিবার সকালে উত্তর বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান: সাগরদ্বীপ থেকে ২৯০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৩০০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। দিঘা থেকে ৪১০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং থেকে ৩২০ কিলোমিটার দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়।প্রসঙ্গত, এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম 'রিমাল' বা 'রি-মল'। নাম দিয়েছে ওমান। এটি আরবি শব্দ। 'রিমাল' বা 'রি-মল' শব্দের অর্থ 'বালি'।