আজ, রবিবার দুপুরেই ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব পড়তে চলেছে হাওড়ায়! দুর্যোগ চলবে কাল, সোমবার পর্যন্ত। পূর্বাভাস এমনই। জানা গিয়েছে, এখানে ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃষ্টি হতে পারে। সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। আবহাওয়া দফতরের তরফে জেলা প্রশাসনকে পাঠানো নির্দেশিকায় হাওড়াকে ‘রেড জ়োন’ চিহ্নিত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের দাবি, দুর্যোগ মোকাবিলায় সব প্রস্তুতি সারা। বিভিন্ন ব্লকের কর্মী-আধিকারিকদের দু’দিন অফিসেই থাকতে বলা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, সিভিল ডিফেন্সের সদস্যদের। উলুবেড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রের ভোটগণনা কর্মীদের প্রশিক্ষণ আজ বাতিল করা হয়েছে বলে প্রশাসন তথা জেলা নির্বাচন দফতর সূত্রের খবর। হুগলি নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের সতর্ক করতে চলছে মাইকে প্রচার। আজ ও কাল জেলার সব ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে। বিভিন্ন ব্লকে চিঁড়ে, ত্রিপল, পানীয় জলের পাউচ পাঠানো হয়েছে।
নদী তীরবর্তী এলাকার জন্য বিশেষ ব্যবস্থার কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের হিরাপুর, কালীনগর এবং ধূলাসিমলা, শ্যামপুর ১ ব্লকের ডিঙাখোলা, বেলাড়ি, বাণেশ্বরপুর ১ ও ২, শ্যামপুর ২ ব্লকের ডিহিমণ্ডলঘাট ১ ও ২ — এই ন’টি পঞ্চায়েত হুগলি ও রূপনারায়ণের ধারে। এখানে নদীপারে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রাথমিক স্কুলকে বেছে রাখা হয়েছে। মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। সেচ, পূর্ত, বিদ্যুৎ দফতরকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
শনিবার নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রচার করেন উলুবেড়িয়া ১ এর বিডিও রিয়াজুল হক এবং শ্যামপুর ১-এর বিডিও তন্ময় কার্জি। দু’জনেই জানান, ঝড় মোকাবিলায় যতটা সম্ভব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। উলুবেড়িয়ার পুরপ্রধান অভয় দাসও বলেন, ‘‘পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমাদের প্রস্তুতি সারা। কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।’’ অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) ইউনিস রেইসিন ইসমাইল বলেন, ‘‘প্রশাসন সজাগ।’’
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের এক কর্তা জানান, আজ এবং কাল হাওড়া থেকে দিঘাগামী কিছু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। গাছ পড়ে ওভারহেড তার ছিঁড়লে দ্রুত গাছ সরিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে আগাম ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, হাওড়া-ব্যান্ডেল, কাটোয়া এবং তারকেশ্বর শাখায় শনিবার দুপুর থেকেই আগাম সর্তকতার কারণে নির্দিষ্ট সময় বিদ্যুৎ বন্ধ (পাওয়ার ব্লক) রাখা হয়। ফলে, ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়। আপ ও ডাউনে ব্যান্ডেল শাখায় পাঁচ জোড়া, কাটোয়া শাখায় এক জোড়া ট্রেন বাতিল করা হয়। তারকেশ্বর শাখায় সিঙ্গুর পর্যন্ত ট্রেন চালানো হয়। বাতিল করা হয় কয়েক জোড়া তারকেশ্বর লোকাল।
আরামবাগ এবং খানাকুলে মুণ্ডেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বরের বিভিন্ন জায়গায় মোট ৯টি বোরো বাঁধ আছে। সংশ্লিষ্ট ব্লক প্রশসানকে সেগুলি কেটে সরিয়ে ফেলতে বলেছে সেচ দফতর। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই কাজ চলছে।
দুর্যোগের ভ্রুকুটিতে হুগলি-চুঁচুড়া শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে বাঁধের ধারে কাঁচাবাড়ির বাসিন্দাদের সতর্ক করে শনিবার মাইকে প্রচার করা হল পুরসভার তরফে। পুর-পারিষদ জয়দেব অধিকারী জানান, এলাকার দু’টি বিদ্যালয় ও কমিউনিটি হলে তাঁদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রশাসনের নির্দেশে শহরের বিপজ্জনক জায়গায় ‘বিপজ্জনক’ গাছের ডাল ছাঁটা হচ্ছে বলে শ্রীরামপুর পুরসভা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। ঝড়ের সময় বাইরে না বেরোনোর জন্য জেলার নানা জায়গায় প্রশাসন, পুরসভা বা পঞ্চায়েতের তরফে মাইকে প্রচার করা হয়েছে। শনি থেকে কাল, সোমবার পর্যন্ত জেলার সর্বত্র ফেরি পরিষেবা বন্ধ থাকবে। প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ‘রেমাল’ মোকাবিলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে বিভিন্ন পুরসভা এবং পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।