একপেশে ফাইনালে হায়দরবাদকে হারিয়ে ১০ বছর পর ট্রফি কলকাতার
২৪ ঘন্টা | ২৭ মে ২০২৪
জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: একটা সুন্দর ছুটির দিনে, ক্রিকেটের মহাসংগ্রাম দেখতে বসেছিলেন ফ্য়ানরা। কিন্তু এটা কি আদৌ আইপিএল ফাইনাল হল ( IPL 2024)! কলকাতা নাইট রাইডার্স একপেশে খেলে সানরাইজার্স হায়দরাবাদের অস্তিত্বই মুছে দিল চেন্নাইয়ে! যে এসআরএইচ লিগের ম্য়াচে ২৮৭ রান করে টি-২০ ক্রিকেটে ইতিহাস লিখেছিল, তারাই রবিবার ১১৩ রানে গুটিয়ে গেল! হায়দরাবাদের অসহায় আত্মসমর্পণে, ১০ বছর পর ট্রফি এল কলকাতায়। ২০১২, ২০১৪ সালের পর ফের আইপিএল চ্য়াম্পিয়ন শাহরুখ খানের ফ্র্য়াঞ্চাইজি। সবার আগে প্লেঅফে যাওয়া দলই সবার আগে ফাইনালে উঠেছিল। এই টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ দল হিসেবেই কেকেআর সপ্তদশ আইপিএলের যোগ্য় বিজয়ী হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করল।চেন্নাইয়ের এমএ চিদম্বরম স্টেডিয়ামে টস জিতে যখন প্য়াট কামিন্স ব্য়াট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখনই অনেকে মনে করেছিলেন যে, এসআরএইচ এক ধাপ এগিয়েই গেল ফাইনালে। কারণ আইপিএলের ইতিহাস বলছে, এদিনের আগে পর্যন্ত মোট ৮২বার আইপিএলের খেলা হয়েছে চিপকে। প্রথমে ব্য়াট করা দল ৪৭ বার জিতেছে। ৩৫ বার জয় পেয়েছে পরে ব্য়াট করা টিম। এবারের আইপিএলে সানরাইজার্সকে ভয়ংকর করে তুলেছিল তাদের ব্য়াটিং লাইন-আপ। বিশেষত দুই ওপেনার- ট্র্য়াভিস হেড ও অভিষেক শর্মা যে তাণ্ডবলীলা করেছিলেন, তা দেখে বাকি দলের বুকে কাঁপুনি ধরে গিয়েছিল। সেই ইন্দো-অজি জুটিকেই কেকেআর এদিন প্রথম ওভারেই ভেঙে দেয়। মিচেল স্টার্ক প্রথম ওভার বল করতে এসেছিলেন। পঞ্চম ডেলিভারিতে তিনি অভিষেকের উইকেট ছিটকে দিলেন অসাধারণ আউট সুইংয়ে। যা দেখে অনিল কুম্বলে সোশ্য়াল মিডিয়ায় লিখলেন, তিনি আইপিএলের সেরা ডেলিভারি দেখে ফেললেন। অভিষেককে (২ রান) দিয়েই নিজামের শহরের পতনের সূত্রপাত। এরপর দ্বিতীয় ওভারেই মাথা (হেড) উড়িয়ে দিলেন বৈভব অরোরা। কোনও রান না করেই তিনি উইকেটের পিছনে রহমানুল্লাহ গুরবাজের হাতে ক্য়াচ তুলে দিলেন। কেকেআর ইন্দো-অজি জুটিকে মাত্র দু'ওভারের মধ্য়ে ছ'রানের মধ্য়ে ডাগআউটে পাঠিয়ে দলের শিরদাঁড়াই ভেঙে দিল। কেকেআরের ফ্য়ানরা তখনই বুঝে গিয়েছিলেন যে, এই রাত তাঁদেরই। এরপর শুধুই আয়ারাম গায়ারাম! রাহুল ত্রিপাঠী (৯), নীতীশ কুমার রেড্ডি (১৩), আইদেন মারক্রম (২০) ফিরে যান। ৬২ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলটার তখনই কার্যত কোমায় চলে যায়। এরপর বাকি পাঁচ উইকেটে ৫১ রান ওঠে। ২০ ওভার শেষ হওয়ার ৯ বল আগেই ১১৩ রানে শেষ হয়ে যায় এসআরএইচ। দলের সর্বাধিক স্কোরার ক্য়াপ্টেন কামিন্স। ১৯ বলে ২৪ রান করেছেন তিনি। এদিন আন্দ্রে রাসেল তিন উইকেট তুলে ম্য়াচটা ম্য়াড়ম্য়াড়ে করে দেন। স্টার্ক ও হর্ষিত রানা নেন দুই উইকেট করে। এক উইকেট করে পেয়েছেন বৈভব, সুনীল নারিন ও বরুণ চক্রবর্তী। কেকেআরের অসাধারণ বোলিংয়ের সামনে এদিন হায়দরবাদ যেন দিশাই খুঁজে পেল না ব্য়াট করার।১১৩ রান তাড়া করতে কেকেআর নিল মাত্র ১০.৩ ওভার। কেকেআর ব্য়াটাররা ঠিকই করে নিয়েছিলেন যে দ্রুত খেলা শেষ করে সেলিব্রেশন শুরু করে দিতে হবে। রহমানুল্লাহ ও সুনীল নারিন ওপেন করতে নেমেছিলেন। তবে নারিন মাত্র ছয় রান করেই ফিরে যান। কিন্তু রহমানুল্লাহ (৩২ বলে ৩৯) ও ভেঙ্কটেশ আইয়ার (২৬ বলে অপরাজিত ৫২) মিলেই যা করার করে দেন। রহমানুল্লাহ ফেরার পর ভেঙ্কটেশ আইয়ার (৩ বলে ৬) নেমে বাকি কাজটা করে দেন। আট উইকেটে হায়দরাবাদকে হারিয়ে কেকেআর তৃতীয়বারের মতো আইপিএল চ্য়াম্পিয়ন হল।আপামর কেকেআর অনুগামীদের জন্য় ২০২৩ সালের ২২ নভেম্বর তারিখটা ছিল ভীষণ স্পেশ্য়াল। তাঁদের প্রিয় প্রাক্তন ক্য়াপ্টেন গৌতম গম্ভীর জুড়েছিলেন নাইটদের সঙ্গে। কেকেআরের আইপিএল জয়ী (২০১২, ২০১৪) একমাত্র অধিনায়ক আবার এসেছেন কেকেআরের ড্রেসিংরুমে। লখনউ সুপার জায়ান্টসের সঙ্গে গোল্ডেন হ্য়ান্ডশেক করে গম্ভীর ফিরেছেন চেনা ডেরায়। লখনউতে তিনি ঠিক যে কাজটা করতেন, কলকাতাতেও সেই একই কাজ করছেন। কেকেআরও গম্ভীরকে দলের মেন্টর হিসেবেই নিয়োগ করেছে। ২০০৮-১০ পর্যন্ত দিল্লি ডেয়ারডেভিলসে (অধুনা দিল্লি ক্য়াপিটালস) থাকার পর গম্ভীর ২০১১-২০১৭ পর্যন্ত ছিলেন নাইটদের সংসারে। সেই গম্ভীরই ফের জেতালেনও। জিজি ফ্যাক্টরকে অস্বীকার করার কোনও জায়গাই নেই।কেকেআরের জয়ের পরেই শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। মমতা তাঁর এক্স হ্য়ান্ডেলে লেখেন, 'কলকাতা নাইট রাইডার্সের জয়ে সারা বাংলায় উৎসবের আমেজ বইছে। আইপিএলের এই মরসুমে রেকর্ড ভাঙার পারফরম্যান্সের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে খেলোয়াড়, স্টাফ এবং ফ্র্যাঞ্চাইজিকে অভিনন্দন জানাতে চাই। এরকম আরও মুগ্ধতা কামনা করি।' অরূপ বলেন, 'অভিনন্দন অভিনন্দন অভিনন্দন। আইপিএলে তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য কলকাতা নাইট রাইডার্স দলের খেলোয়াড়, কোচ, সাপোর্টিং স্টাফ, শাহরুখ খান, সকল কর্মকর্তা ও সমর্থকদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। আবার প্রমাণিত কলকাতা তথা বাংলা সর্বক্ষেত্রেই ভারত সেরা।'