ছোট বুথে কি ঠাঁই হবে ২২ এজেন্টের, বরাহনগর নিয়ে চিন্তায় কমিশন
আনন্দবাজার | ২৭ মে ২০২৪
জায়গা কোথাও পনেরো বাই আট বর্গফুট। কোথাও আবার তারও কম। এত ছোট-ছোট ঘরে একসঙ্গে ২২ জন এজেন্ট বসবেন কী করে? আগামী ১ জুনের উপনির্বাচন ঘিরে বরাহনগরে এখন এই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজছেন জেলার নির্বাচনী আধিকারিকেরা।
শনিবার দমদম লোকসভার সঙ্গেই রয়েছে বরাহনগর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন। আবার, বরাহনগর যে হেতু দমদম লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে রয়েছে, তাই ওই দিন সেখানকার বাসিন্দাদের দু’টি ভোট দিতে হবে। অর্থাৎ দু’টি ইভিএমের বোতাম টিপতে হবে এক জন ভোটারকে। বিধানসভা উপনির্বাচন ও লোকসভা ভোট মিলিয়ে মোট যত জন প্রার্থী, তাঁদের সকলের যদি এজেন্ট থাকে, তা হলে অনেক বুথেই বসার জায়গা হবে না বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জানাযাচ্ছে দমদম লোকসভায় তৃণমূল, বিজেপি ও সিপিএম ছাড়াও ১১ জন নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অর্থাৎ, লোকসভার প্রার্থী ১৪ জন। অন্য দিকে, বিধানসভায় ওই তিন দলের ছাড়াও পাঁচ নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। ফলে বিধানসভা আসনে রয়েছেন মোট আট জন। দুই নির্বাচন মিলিয়ে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ২২!
সব প্রার্থীর এক জন করে এজেন্ট যদি বুথে বসেন, তা হলে কী ভাবে তাঁদের বসার ব্যবস্থা করা হবে, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে। সূত্রের খবর, বরাহনগরের অনেক ক্লাবেও এ বার ভোটগ্রহণ কেন্দ্র করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোনও ভাবেই ২২ জনের বসার জায়গা হবে না। মেরেকেটে তিন থেকে চার জন বসতে পারবেন। সূত্রের খবর, বুথের ভিতরে শুধু প্রার্থীদের এজেন্টরাই বসেন না। নির্বাচনের কাজ পরিচালনার জন্য আধিকারিক, কর্মী মিলিয়ে অন্তত চার জন থাকেন। বরাহনগরের ছোট বুথগুলিতে কী ভাবে সকলের বসার ব্যবস্থা করা যায়, তা নিয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলেই জানাচ্ছেন জেলার নির্বাচনী আধিকারিকেরা।
সূত্রের খবর, বরাহনগরে মোট বুথ ২৫২টি। তার মধ্যে ৩২টি বুথ ছোট বলে নির্বাচন কমিশন চিহ্নিত করেছে। সেখানে ২২ জন এবংআরও অন্তত চার জন নির্বাচন-কর্মী কী ভাবে বসবেন, সেটাই এখন প্রশ্ন।জানা যাচ্ছে, সমস্যাটি নজরে আসার পরে কমিশনের তরফে সর্বদল বৈঠক করে অনুরোধ করা হয়েছিল, লোকসভা ও বিধানসভা মিলিয়ে এক জন এজেন্ট রাখুক দলগুলি। যদিও বরাহনগর পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ অঞ্জন পাল বলেন, ‘‘সমস্যার সমাধানে কমিশন এমন প্রস্তাবদিলেও মনে রাখতে হবে এজেন্ট কখনও দলের হয় না। প্রার্থীদেরএজেন্ট বা প্রতিনিধি হিসেবে এক জন বুথে বসেন।’’ যদিও প্রধান দলগুলির প্রার্থী ছাড়া সব নির্দল প্রার্থীর এজেন্ট সর্বত্র থাকেন না। তাই খুব একটা সমস্যা হবে না বলেও দাবি বরাহনগরের উপ পুরপ্রধান দিলীপনারায়ণ বসুর।
রাজনৈতিক মহল জানাচ্ছে, অনেক সময়েই প্রধান দলগুলি নিজেদের প্রয়োজনেই পরিচিত কাউকে নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায়। যাতে ওই প্রার্থীর এক জন এজেন্ট বুথে বসতে পারেন। তাতে আখেরে লাভ হয় প্রধান দলেরই। কারণ, এমন ভাবেই বুথের ভিতরে নিজেদের লোকসংখ্যা বেশি রাখা সম্ভব হয়। যদিও এই সমস্ত ‘কায়দা’ রাজনীতির অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গৃহীত হওয়া নির্দল প্রার্থীর এজেন্টও যাতে বসতে পারেন, সেটা দেখা এবং ব্যবস্থা করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।
তাই, বরাহনগরে যে সমস্ত ছোট বুথ রয়েছে, সেখানে অস্থায়ী শিবির বানানোরও পরিকল্পনা করেছে কমিশন। বিজেপি নেতা কিশোর কর বলেন, ‘‘সব বুথে সমস্যা হবে বলে মনে হয় না। তবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে কমিশন নিশ্চয় প্রস্তুতি নেবে।’’ তবে কী ভাবে সমস্যার সমাধান হবে, তা দেখা কমিশনের দায়িত্ব, প্রয়োজনে যতটুকু সম্ভব, সহযোগিতার কথা জানাচ্ছেন বিধানসভার সিপিএম প্রার্থী তন্ময় ভট্টাচার্যও।