• দল নয়, বড় মানবিকতা, ঝড়ের মুখে দাঁড়িয়ে বললেন কান্তি গাঙ্গুলি ...
    আজকাল | ২৭ মে ২০২৪
  • রিয়া পাত্র বর্ষীয়ান নেতা। ভোট ময়দানে আর নেই। শুধু নেই নয়, ওই এলাকাই ভোটে হারিয়েছে তাঁকে। কিন্তু যখনই মাইকিং হয়, 'বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে গভীর নিম্নচাপ', 'আছড়ে পড়ছে ঝড়', ঠিক তখনই প্রায় প্রাচীন প্রবাদের অরণ্যদেবের মতোই পৌঁছে যান কান্তি গাঙ্গুলি। ঝড়ের আগেই রায়দীঘি, মথুরাপুর এলাকায় । এই বয়সেও ক্লান্তি আসে না তাঁর। এর আগে আমফান, ইয়াস কিম্বা বুলবুল, সরকারে না থেকে, পদে না থেকেও যে মানুষের জন্য নিরলস কাজ করা যায়, বারবার প্রমাণ করেছেন তিনি। রেমাল তাঁকে ফের দাঁড় করিয়েছে ঝড়ের মাঝে, হাজার হাজার মানুষের পাশে। সমাজমাধ্যমে বার্তাও দিয়েছিলেন। সেই বার্তায় ছিল আয়লা আছড়ে পড়ার ভয়াবহ স্মৃতি। এই বয়সে, অশক্ত শরীরে কীভাবে তিনি ঝড়ের আগে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন বারবার? আজকাল ডট ইন-কে কান্তি গাঙ্গুলি বললেন, 'এটা সুন্দরবনের প্রতি আমার আবেগ। প্রায় ৪০-৪৫ বছর ধরে এই এলাকাতেই রয়েছি। মায়া মমতা কাজ করে।' ঝড় বৃষ্টির কথা বলতে গিয়ে বললেন, 'এখানে ঝড় বৃষ্টি প্রতি বছরের ঘটনা হয়ে গিয়েছে। পরিবেশবিদরা বলছেন কয়েক দশকের মধ্যে সুন্দরবন ডুবে যেতে পারে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া না হলে। ৩৫০০ কিলোমিটার নদী বাঁধ শক্ত করতে হবে, বাড়াতে হবে উচ্চতায়।' বলছেন, মন্ত্রী থাকার সময় অনেক বেশি কাজ করেছিলেন নিজেও। তবে এখন তিনি মন্ত্রী নন, নয় বাম জামানাও। নিজের সেই ব্যক্তিগত সামর্থ্যও নেই, মানুষের পাশে একক ভাবে দাঁড়ানোর। তাহলে? জানালেন, ঝড়ের পূর্বাভাস শুনেই তিনি সমাজমাধ্যমে বার্তা দেন, বাকিদের কাছে আবেদন করেন সাহায্যের। যাঁরা তাঁকে ভালোবাসেন, ভরসা করেন, তাঁরা সাহায্যের হাত বাড়ালে কান্তি গিয়ে দাঁড়ান বিপর্যস্ত পরিবারগুলির পাশে। ত্রাণ দেন। কিন্তু তাতেও আছে তাঁর নিজস্ব নিয়ম। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ত্রাণ বিলির একেবারে বিপক্ষে বর্ষীয়ান নেতা। দিনে দিনে তৈরি হওয়া 'রিলিফ ট্যুরিজম ' বিষয়টি তো একেবারে না পসন্দ। বললেন, 'আমার নিয়ম আছে । সার বেঁধে লাইন দিয়ে ত্রিপল, চাল-ডাল আমি দিই না। তাঁদের হাতে সাহায্য তুলে দিই, যাঁরা নদী বাঁধে মাটি দেন। আমার বক্তব্য, ত্রাণ দেব, কিন্তু তার পরিবর্তে শ্রম দিতে হবে। সুন্দরবনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য শ্রম দিতে হবে।' রেমাল কতটা তছনছ করল এবার সুন্দরবনকে? ঠায় দাঁড়িয়ে কান্তি দেখলেন, এবার তুলনায় দুর্যোগের ঘনঘটা কম। তাঁর অভিজ্ঞতা জানে, সুন্দরবনের বিপদ বাড়ায় পুবের হাওয়া। ওই হাওয়াতেই নদী বাঁধ ভাঙে। এবার হাওয়া পশ্চিমের। অমাবস্যা বা পূর্ণিমা না পড়ায় বিপদ কমেছে কিছুটা। আমফানের সময় যখন ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৬০-১৮০ কিমি, রেমাল বয়ে গিয়েছে সেখানে ৮০-১০০ কিমি বেগে। ফলে কাঁচা বাড়ি ভেঙে পড়লেও, জল ঢুকে বিপর্যস্ত করেনি সামগ্রিক অবস্থা। তাঁর মতে, চাল ডালের থেকেও এই মুহূর্তে বেশি জরুরি ত্রিপল। চাহিদা মতো কাজ করছেন তিনি, তাঁর সঙ্গে যাঁরা রয়েছেন তাঁরা। আর প্রশাসন? কাজের মাঝেই জানালেন, 'প্রশাসন কাজ করছে তাদের মতো। আমি মনে করি রাজনীতিতে সবথেকে জরুরি মানবিকতা। সেটাই হারিয়ে যাচ্ছে। আমি তৃণমূল, বিজেপি এসব ভাগ দেখি না। ঝড় এলে আমি এগিয়ে এসে দাঁড়াই।'
  • Link to this news (আজকাল)