• ত্রিপল ছিঁড়ে কাকভেজা ভাঙন-দুর্গত পরিবারগুলি
    আনন্দবাজার | ২৮ মে ২০২৪
  • গত পাঁচ বছর ধরে প্রতি বার বর্ষায় তাঁরা ভাঙনের মুখে পড়েন। শমসেরগঞ্জ ব্লকের ঘনশ্যামপুর, মহেশটোলা, প্রতাপগঞ্জ, সিকদারপুর, কামালপুর, শিবপুর, ধানঘড়া, হিরানন্দপুর, ধুসরিপাড়া-সহ গঙ্গা তীরবর্তী গ্রামগুলির বাসিন্দাদের কাছে ভাঙনে ভিটে হারানো নতুন কিছু নয়। গত কয়েক মাস ধরে ওই এলাকার বহু বাসিন্দার রাত কাটে খোলা আকাশের নীচে বা ত্রিপলের তাঁবুতে। তবে দুর্যোগ তাঁদের সেই জীবনেও বাড়তি দুর্ভোগ ডেকে এনেছে।

    ‘রেমাল’-এর প্রভাব মুর্শিদাবাদে তেমন পড়বে না বলে আগেই জানিয়েছিলেন আবহবিদরা। তবে সোমবার ঝোড়ো হাওয়া এবং বৃষ্টির সতর্কতা ছিলই। রবিবার থেকেই শমসেরগঞ্জের ভাঙন কবলিত এলাকাগুলিতে পঞ্চায়েতের তরফে এ নিয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করা হয়েছিল। পঞ্চায়েত ভবনে সতর্কতামূলক লিফলেটও সাঁটা হয়েছিল। এর পাশাপাশি লোকমুখেও ঘূর্ণিঝছড় সম্পর্কে জানতে পারেন অনেকে। সোমবার সকাল থেকেই ঝোড়ো হাওয়া বইতে শুরু করে। সঙ্গে ছিল ঝিরঝিরে বৃষ্টি। কখনও মুষলধারেও বৃষ্টি হয়েছে। তাতে সমস্যা পড়েন ত্রিপলের তাঁবু খাটিয়ে থাকা মানুষজন। অনেক জায়গাতেই ঝোড়ো হাওয়ায় ত্রিপল ছিঁড়ে যায়। তার জেরে বৃষ্টিতে সমস্যায় পড়েন বাসিন্দারা। কিন্তু যে সব বাসিন্দার বাড়ির একাংশ ভাঙনে তলিয়ে গিয়েছে, তাঁদের অনেকেই ঝুঁকি নিয়ে দিনভর সেখানেই থেকে যান। তাঁদের নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন উদ্যোগী হয়নি বলে অভিযোগ। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে ঝড়ের দাপটে ছিঁড়ে যাওয়া ত্রিপলের নীচে জবুথবু হয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। প্রশাসনের তরফে অবশ্য বারবার তাঁদের সতর্ক করা হয়েছিল। এ দিন নদীর কাছাকাছি কেউ যাতে না থাকেন, সেই সতর্কও করা হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে গঙ্গায় ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। কামালপুরের মানওয়ারা বেওয়া, মনিরুল ইসলাম, শিবপুরের মালতি মণ্ডলরা জানান, তাঁদের আর কোনও উপায় না থাকায় নদীর ধারেই ত্রিপল খাটিয়ে বাস করছেন। ভাঙনে সর্বস্ব চলে যাওয়ার পর তাঁদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল পুনর্বাসনের। কিন্তু আজ পর্যন্ত কিছু করা হয়নি বলে অভিযোগ তাঁদের। মালতি বলেন, ‘‘সকাল থেকে এক টানা বৃষ্টি হচ্ছে, ত্রিপলের অবস্থাও ভাল নয়। বৃষ্টির জল ত্রিপল ফুটো করে ঘরে পড়ছে। বিছানাপত্র ভিজে গিয়েছে, প্লাস্টিক দিয়ে জড়িয়েও লাভ হয়নি। তবে আমাদের আর ভয় করে না। ঝড়, বৃষ্টি, শীত গা সওয়া হয়ে গিয়েছে।’’ বোগদাদনগর পঞ্চায়েতের প্রধান নাজমিরা খাতুনের দাবি, ‘‘আমরা প্রত্যেককে সতর্ক করেছি ঝড়ের সময় বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা যেন ঘরের বাইরে না বেরোন। ভাঙন দুর্গতদের কাছাকাছি স্কুলে থাকার ব্যবস্থাকরা হয়েছে।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)