বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের নির্বাচন হয়েছে গত ১৩ মে। তারপর প্রায় দু’সপ্তাহ কেটে গেলেও সেখানকার ভোটের ফল কী হতে পারে, তা নিয়ে চর্চা অব্যাহত। চায়ের দোকান, পাড়ার মোড়, হাট-বাজারের জটলায় আলোচনা চলছেই। নওদা বিধানসভা ওই লোকসভা আসনের মধ্যে পড়ে। সেখান থেকে কোন প্রার্থী কত ভোট পেতে পারেন, কোন দল বেশি ‘লিড’ পাবে, তা নিয়ে চর্চা চলছেই। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা বুথভিত্তিক হিসেবনিকেশশুরু করেছেন।
রবি এবং সোমবার রেমাল ভোট আলোচনায় ভাগ বসিয়েছে যদিও। তবে আজ , সোমবার থেকে আগামী ৪ জুন পর্যন্ত এই চর্চা চলবে বলেই মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের।
ভোট মিয়ে গেলেও সংগঠনের সমস্ত কাজই আগের মতোই চালিয়ে যাচ্ছেন নওদা ব্লক তৃণমূল সভাপতি সফিউজ্জামান শেখ। তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঘুরছেন। কথা বলছেন দলের কর্মী, সাধারণ মানুষের সঙ্গে।
বিভিন্ন অঞ্চলে বৈঠক করে অঞ্চল সভাপতি, বুথ সভাপতিদের কাছ থেকে কোন বুথে দলের প্রার্থী কত ভোট পেতে পারেন, তা নিয়ে পর্যালোচনা করছেন। সফিউজ্জামান বলেন, “গত বিধানসভা নির্বাচনের চেয়ে বেশি ভোটে আমাদের প্রার্থী ইউসুফ পাঠান লিড পাবেন এখানে। নওদার মাটি থেকেই পাঁচ বারের সাংসদের হার নিশ্চিত হবে।”
অন্যদিকে, নওদা থেকে বেশি ‘লিড’ আশা করছে কংগ্রেসও। প্রায় দু’দশকের বেশি সময় ধরে ‘কংগ্রেসের গড়’ বলে পরিচিত ছিল নওদা। ২০০১ সালে নওদা বিধানসভা আসনে কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন আবু তাহের খান। পরে ২০০৬, ২০০৯ ও ২০১৬ সালে কংগ্রেসের টিকিটে নির্বাচিত হন তিনি। বরাবরই লোকসভা নির্বাচনে নওদা বিধানসভা থেকে বেশি ‘লিড’ পেতেন কংগ্রেস প্রার্থী।
তবে উলটপুরাণ ঘটে ২০১৯ সালে। সে বছর নওদা বিধানসভা থেকে অধীরের চেয়ে ২,৮৮০ ভোট পান তৃণমূল প্রার্থী অপূর্ব সরকার। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন মোশারফ হোসেন মধু। ২০১৮ সালে নওদায় তিনটি জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি-সহ অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে তৃণমূল। সে বছর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন তাহেরও। ২০১৯ এর বিধানসভা উপনির্বাচনে নওদা আসন থেকে জয়ী হন তৃণমূল প্রার্থী সাহিনা মমতাজ খান।
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে ফের কংগ্রেসে যোগ দেন মোশারফ। বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের প্রার্থীও হয়েছিলেন তিনি। তবে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে নওদা বিধানসভায় ভাল ফল করেছিল তৃণমূল। জেতেন সাহিনা।
গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নওদায় কিছুটা খারাপ ফল হয় তৃণমূলের। বিধানসভার ১৪টি পঞ্চায়েতের মধ্যে দশটি তৃণমূলের দখলে যায়। কংগ্রেস ও জোট চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত দখল করে। নওদা পঞ্চায়েত সমিতি তৃণমূল একক ভাবে দখল করলেও তিনটি জেলা পরিষদ আসনের মধ্যে একটিতে জয় পায় কংগ্রেস। বাকি দু’টিজেতে তৃণমূল।
লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের ‘গোষ্ঠী-কোন্দলের’ প্রভাব পড়তে পারে বলে মত রাজনীতির কারবারিদের একাংশের। তবে তাতে আমল দিতে নারাজ তৃণমূল। এ বছর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী নির্মল সাহাও ভোট বেশি পেতে পারেন বলে মত তাঁদের। যার প্রভাব পড়তে পারে কংগ্রেস প্রার্থীর ভোটব্যাঙ্কে। কংগ্রেস নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, “মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিতে পেরেছেন। নওদায় কংগ্রেস তার হারানো মাটি ফিরে পাবে। আমাদের প্রার্থী নওদা থেকে বেশি ভোটে লিড পাবেন। কয়েক দিন অপেক্ষা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে।’’