ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাতভর দক্ষিণবঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে চলেছে নাগাড়ে বৃষ্টি। বাড়ি, পাঁচিলে ধস তো আছেই। বিপদ বাড়াচ্ছে জমা জলের উপর ঝড়ে ছিঁড়ে পড়া যাওয়া বিদ্যুতের তার। এ ভাবেই বাংলায় মৃত্যু হল আরও এক জনের। এ বার দক্ষিণ ২৪ পরগনার মহেশপুরের নুঙ্গিতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হল এক মহিলার। মৃতার নাম তাপসী দাস। ৫৩ বছরের ওই মহিলা মহেশতলা পুরসভার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
স্থানীয় সূত্রে খবর, সকালে রাস্তার জমা জলে নেমে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন তাপসী। স্থানীয়েরা তাঁকে ওই অবস্থায় দেখে খবর দেন মহেশতলা থানায়। খবর যায় পুরমাতা অলকা মাইতির কাছেও। পুলিশ এবং স্থানীয় কাউন্সিলর ঘটনাস্থলে পৌঁছে তড়িঘড়ি মহিলাকে উদ্ধার করে অ্যাম্বুল্যান্সে করে বেহালার বিদ্যাসাগর হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু চিকিৎসকেরা ওই মহিলাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
অন্য দিকে, প্রবল দুর্যোগের মধ্যে ‘হুকিং’ করা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটিতে। মৃতের নাম গোপাল বর্মণ। বয়স ৪৭ বছর।
স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, ‘হুকিং’ করে একটি দোকানে বিদ্যুৎ নেওয়া হয়েছিল। ঝড়ে সেই তার ছিঁড়ে পড়েছিল তা ঠাহর করতে পারেননি কেউ। ছিঁড়ে পড়া সেই বিদ্যুতের তার থেকে এই প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে খড়দহ থানার পুলিশ দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যায় হাসপাতালে। শোকস্তব্ধ গোটা রাজা রোড এলাকা।
পূর্ব বর্ধমানের মেমারির বাসিন্দা ফড়ে সিংহ ও তরুণ সিংহের বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সম্পর্কে তাঁরা বাবা-ছেলে। ঝড়ে উপড়ে যাওয়া কলাগাছ কাটতে গিয়ে প্রাণ হারান তাঁরা। মৌসুনি দ্বীপে ৮০ বছরের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। নাম রেণুকা মণ্ডল।
ঝড়ের পর কলকাতার এন্টালিতে একটি বাড়ির কার্নিস ভেঙে পড়ে এক প্রৌঢ়ের উপর। মৃত্যু হয় ৫১ বছর বয়সি মহম্মদ সাজিবের।
সোমবার আলিপুর আবহাওয়া দফতরের শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, স্থলভাগে প্রবেশ করার পর ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের উপকূল ধরে ক্রমে উত্তর দিকে এগিয়েছে। গত কয়েক ঘণ্টায় তার গতি ছিল ঘণ্টায় আট কিলোমিটার। এই মুহূর্তে তা পশ্চিমবঙ্গের সংলগ্ন বাংলাদেশের উপর অবস্থান করছে। বাংলাদেশের মোংলা থেকে রেমালের দূরত্ব ৬৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব। এ ছাড়া, ক্যানিং থেকে ১০০ কিলোমিটার উত্তর উত্তর-পূর্ব, বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ১৫০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম এবং ঢাকা থেকে ১৫০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে রেমাল। মঙ্গলবার থেকে দক্ষিণবঙ্গের কোথাও বৃষ্টির পূর্বাভাস নেই। তবে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।