পিচরাস্তা থেকে নেমে গিয়েছে একটা মাটির রাস্তা। সেই রাস্তা ধরে চহটপুর গ্রামের অলি-গলি পেরিয়ে চণ্ডীপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের পিছনে নজরে পড়বে মুস্তাফিজুর রহমান (নাম পরিবর্তিত)-এর তথ্যমিত্র কেন্দ্র। বাড়ি সংলগ্ন দোকানে খাতা-কলমের সঙ্গে মনিহারি সামগ্রী, কম্পিউটার, প্রিন্টার ও জ়েরক্স মেশিন। এখানেই জাল আধার, ভোটার কার্ড তৈরি হয় বলে অভিযোগ।
রবিবারের দুপুর। শহর থেকে দশ কিলোমিটার দূরের প্রত্যন্ত এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ মাঠে ধান কাটা নিয়ে ব্যস্ত। গ্রাম প্রায় শুনশান। দোকানের ঝাঁপ বন্ধ। মুস্তাফিজুরের নাম ধরে ডাকতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলেন বছর তিরিশের যুবক। ভরদুপুরে অচেনা মানুষ, সন্দেহের চোখে প্রশ্ন ছুড়লেন, ‘‘কী চাই?’’ জমির দলিল তৈরি করব তাই একটা আধার কার্ড বানাতে হবে বলায় সন্দেহ বাড়ল। নাম, ধাম জিজ্ঞাসার পরেও সন্দেহ দূর না হওয়ায় ‘এখানে ও সব হয় না’ বলে জানালেন। শেষে স্থানীয় এক ব্যক্তির ‘রেফারেন্স’ দেওয়ার পরে ‘আস্থা’ অর্জন হল। সম্পূর্ণ নিশ্চিত হতে সেই ব্যক্তিকে ফোনও করলেন। তার পর নিশ্চিন্ত হয়ে জানালেন, আধার কার্ডের বয়স ও নাম ‘এদিক-ওদিক’ করে দেওয়া যাবে। কয়েক দিন আগে জাল দলিল ধরা পড়ায় সতর্ক মুস্তাফিজুরের দাবি, তিনি এ সব আর করছেন না। জাল আধার বানাতে হলে অন্য একটি দোকানে যেতে হবে। কত পড়বে? ‘‘৫০-১০০ টাকা হলেই হয়ে যাবে,’’ দাবি মুস্তাফিজুরের। তাঁর কাছ থেকেই বদলু এলাকার আর একটি তথ্যমিত্র কেন্দ্রের খোঁজ মিলল। এ ভাবেই দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরের গোকর্ণের তথ্যমিত্র কেন্দ্রগুলিতে চলছে জাল আধার, ভোটার কার্ড তৈরির কারবার। আধার বা ভোটারের ছবি, নাম ও বয়স সফটওয়্যার দিয়ে এডিট করে এমন তৈরি করা হয়, যে সাদা চোখে দেখে বোঝার উপায় নেই। সেই নথি জেরক্স করে সরকারি ভাতা থেকে জমির দলিল, পাসপোর্ট তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলায় এ ভাবে জাল নথি তৈরি হওয়ায় নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বুনিয়াদপুরের এডিএসআর প্রবীর মণ্ডল বলেন, ‘‘জাল আধার, ভোটার দিয়ে জমি রেজিস্ট্রির পরে এই ঘটনা সামনে এসেছে।’’ পুলিশ সুপার চিন্ময় মিত্তল বলেন, ‘‘কোথায় এ সব হচ্ছে তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’