অঙ্ক পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে পেনসিল অথবা পেনে ছোট করে উত্তর লেখা। পরীক্ষার হল থেকে বাড়ি ফিরে ফের একবার অঙ্ক কষা। সময়ে শেষ করার বাধা নেই। ঠান্ডা মাথায় অঙ্ক কষলে সব উত্তরই নির্ভুল হবে। প্রশ্নপত্রে টুকে রাখা উত্তর পাশাপাশি ফেললেই বোঝা যাবে ঠিক কত নম্বর মিলবে।
সাংসদ পদপ্রার্থীরা তো পরীক্ষার্থী বটেই। সঙ্গে রয়েছেন তাঁদের ভোট ম্যানেজারেরা। ভোট মিটতে ফের একবার অঙ্ক কষতে বসেছেন তাঁরা। দলীয় কার্যালয়ে বা কারও ব্যক্তিগত অফিসে চলছে উত্তর মেলানোর পর্ব। হিসেব কি মিলছে? সব দলেরই দাবি মিলছে। তবে সব পরীক্ষার্থীর প্রত্যাশা তো আর সমান নয়। তৃণমূল ও বিজেপি দুই প্রধান যুযুধানের দাবি, জেলার দুই লোকসভা আসন কাঁথি ও তমলুকে তাদের প্রার্থীরাই জিতবেন। সিপিএমের দাবি, হিসেব মিলেছে তাদেরও। আগের চেয়ে ভোট বাড়বে বলে আশা তাদের।
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে জেলার দু’টি আসনেই জিতে বাজিমাত করেছিল তৃণমূল। কাঁথি লোকসভায় শিশির আধিকারী এবং তমলুকে দিব্যেন্দু অধিকারী। পিতা ও পুত্র জিতেছিলেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপিকে হারিয়ে। তবে অধিকারী পরিবারের অন্যতম সদস্য শুভেন্দু অধিকারী এখন রাজ্যে গেরুয়া শিবিরের অন্যতম কাণ্ডারী। শুভেন্দু’র বাবা শিশির ও ভাই দিব্যেন্দু দু’জনেই এ বারের লোকসভার ভোটের লড়াইয়ে না থাকলেও ছিলেন অধিকারী পরিবারের আরেক সদস্য সৌম্যেন্দু অধিকারী। কাঁথিতে বিজেপি প্রার্থী হিসেবে লড়াই করা সৌম্যেন্দুর হয়েই ময়দানে ছিলেন শিশির ও দিব্যেন্দু। তমলুক লোকসভায় বিজেপির প্রার্থী হিসেবে লড়াই করেছেন হাই কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁরও প্রধান সেনাপতি ছিলেন শুভেন্দু। তমলুকে যে তিনি জিতছেনই তা ভোট মেটার পরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন অভিজিৎ। বিজেপি সূত্রের খবর, শনিবার ভোটের পরেই লোকসভা এলাকার মধ্যে থাকা দলের অঞ্চল ভিত্তিক রিপোর্ট জমা নেওয়া হয়। আর এর পরেই জয়ের দাবি করেছেন বিজেপি প্রার্থী সৌম্যেন্দুও। তাঁর দাবি, ‘‘ভূপতিনগর, পটাশপুর, উত্তর কাঁথির ভাজাচাউলি ও খেজুরির বারাতলা প্রভৃতি এলাকায় তৃণমূল একতরফা ভোট করতে পারেনি। পটাশপুর ও ভগবানপুরের একাংশ বাদে লোকসভার সমস্ত এলাকায় আমরা এগিয়ে থাকব। কমপক্ষে ৭০ হাজার ভোটে আমি জিতব।’’ রবিবার বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলা সহ সভাপতি আনন্দময় অধিকারীর দাবি, ’’নন্দীগ্রাম, হলদিয়া বিধানসভা এলাকায় আমাদের প্রার্থী বিপুল ভোটে এগিয়ে থাকবেন। অন্য বিধানসভায় তুলনামূলক কম ব্যবধানে এগিয়ে থাকবে। প্রাথমিকভাবে আমরা হিসেব করে দেখেছি সামগ্রিকভাবে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় দেড় লক্ষ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন।’’
তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এ বার তৃণমূল প্রার্থী হয়ে লড়াই করেছেন দেবাংশু ভট্টাচার্য ও কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে উত্তম বারিক। তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রাম। যেখানে ২০২১ সালের বিধানসভার ভোটে শুভেন্দুর কাছে হেরেছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ভোটের আগে গত বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রামের সাউদখালিতে বিজেপি সমর্থক এক মহিলার মৃত্যুর ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল গোটা এলাকা । আবার ভোটের আগের দিন মহিষাদলে তৃণমূলের এক কর্মী খুনের ঘটনা ঘটে। তৃণমূলের তমলুক লোকসভার নির্বাচন কমিটির চেয়ারম্যান তথা তমলুকের বিধায়ক সৌমেন মহাপাত্রের দাবি,’’নন্দীগ্রাম, হলদিয়া সহ সাতটি বিধানসভাতেই আমাদের পক্ষেই রায় গিয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে আমরা জানতে পেরেছি। সম্ভাব্য ফলাফল পর্যালোচনা করে আমরা নিশ্চিত আমাদের প্রার্থী দেবাংশু ভট্টাচার্য ৪০-৫০ হাজার ভোটে জয়ী হবেন।’’ সৌমেনের মতে, ’’নন্দীগ্রাম-২ ব্লকে ফল কিছুটা খারাপ হলেও নন্দীগ্রাম-১ ব্লকে ফলাফল ভাল হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে নন্দীগ্রামে দেবাংশু এগিয়ে থাকবে। হলদিয়া, মহিষাদল, তমলুক, নন্দকুমার, ময়না ও পূর্ব পাঁশকুড়া বিধানসভাতেও দেবাংশু অনেকটাই এগিয়ে থাকবে। ফলে তমলুক লোকসভায় আমাদের জয়লাভ নিশ্চিত।’’
সিপিএম জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহির মতে, ’’গতবারের তুলনায় তমলুক লোকসভা কেন্দ্রে এবার আমাদের ভোট প্রাপ্তির হার অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। তৃণমূল ও বিজেপি প্রার্থীর জয়-পরাজয়ের ক্ষেত্রে আমাদের প্রাপ্ত ভোট নির্ণায়ক হিসেবে থাকবে।’’ কাঁথি লোকসভা কেন্দ্রে সিপিএম ও কংগ্রেস জোটের হয়ে প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী উর্বশী বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা কংগ্রেস সভাপতি মানস করমহাপাত্র বলেন,’’ভোটের প্রচারে আমরা মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া পেয়েছিলাম। আগের চেয়ে আমরা ভাল ফল করব।’’