• শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ অবৈধ, জানাল হাই কোর্ট
    আনন্দবাজার | ২৮ মে ২০২৪
  • সম্প্রতি তৃণমূলের আমলের যাবতীয় ওবিসি শংসাপত্র বাতিল করেছে কলকাতা হাই কোর্ট। এ বার ঝাড়গ্রামের এক স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীর তফসিলি জাতিগত (এসসি) শংসাপত্র বিতর্কে গুরুত্বপূর্ণ রায় দিল হাই কোর্ট।

    সুতপা হাটই নামে ওই শিক্ষা কর্মী ১৯৯৭ সালে তফসিলি জাতি সংরক্ষিত শিক্ষা কর্মীর পদে চাকরি পান। গত বুধবার ২২ মে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ জানিয়েছে, ভুয়ো শংসাপত্র দাখিল করে সংরক্ষিত আসনে ওই শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ অবৈধ। এ বিষয়ে প্রশাসনিক পদক্ষেপেরও নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। সুতপা ১৪ বছর স্কুলে পরিষেবা দিয়েছেন। ২০১১ সালের মে মাস পর্যন্ত বেতনও পেয়েছেন। তবে আদালতের নির্দেশে বেতন বাবদ প্রাপ্ত টাকা সুতপাকে ফেরত দিতে হবে না।

    ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি জামবনি ব্লকের দুবড়া আদর্শ বিদ্যামন্দিরে (উচ্চ মাধ্যমিক) চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষাকর্মী (মেট্রন) পদে যোগ দিয়েছিলেন সুতপা। তাঁর বাড়ি দুবড়া গ্রামে। তফসিলি জাতির জন্য সংরক্ষিত ওই পদে সুতপাকে নিয়োগ করেছিল তৎকালীন স্কুল পরিচালন সমিতি। তফসিলি জাতিগত শংসাপত্র দিয়েই চাকরি পেয়েছিলেন তিনি। ১৪ বছর চাকরির পর ২০১১ সালে একটি মহলের অভিযোগের ভিত্তিতে সুতপার জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে প্রশাসনিক অনুসন্ধান শুরু হয়। ওই বছরই ফেব্রুয়ারিতে সুতপার জাতিগত শংসাপত্র বাতিল করেন ঝাড়গ্রামের তৎকালীন মহকুমাশাসক। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের নির্দেশে ২০১১-এর জুন থেকে সুতপার বেতন বন্ধ হয়ে যায়। স্কুল পরিচালন সমিতি সুতপাকে শো-কজ় নোটিস ধরায়।

    তবে সুতপা জবাব দেননি। পাল্টা জাতিগত শংসাপত্র বৈধ দাবি করে হাই কোর্টে রিট পিটিশন করেন তিনি। বেশ কয়েকবার শুনানি হয়। অবশেষে রায় সুতপার বিপক্ষেই গিয়েছে। যদিও সুতপার দাবি, তিনি চক্রান্তের শিকার। সঙ্গে বলছেন, ‘‘এই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করব।’’ সুতপা জানান, তিনি স্কুলে এখনও বিনা বেতনে পরিষেবা দিচ্ছেন। স্কুলের তরফে জানা গিয়েছে, বিষয়টি হাই কোর্টের বিবেচনাধীন থাকায় সুতপাকে কাজ করতে বাধা দেওয়া হয়নি। তবে ২০১১ সালের জুন মাস থেকে সুতপার বেতন বন্ধ রয়েছে।

    দুবড়া আদর্শ বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক গোপালচন্দ্র কুইলা বলেন, ‘‘এ বিষয়ে এখনও কিছু জানা নেই।’’ তবে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) শক্তিভূষণ গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘হাই কোর্টের রায়ের প্রতিলিপি পেয়েছি। ওই শিক্ষাকর্মীর নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়টি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের এক্তিয়ারভুক্ত। এ বিষয়ে পর্ষদই সিদ্ধান্ত নেবে।’’

    ভোট মরসুমে এই ঘটনায় শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। একযোগে বাম ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ শানিয়েছে গেরুয়া শিবির। বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য সুখময় শতপথী বলছেন, ‘‘বাম আমলেও জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে কারচুপি হয়েছিল। আর তৃণমূলের জমানায় তো জাতিগত শংসাপত্র নিয়ে যথেচ্ছ কারচুপি তো হয়েছেই।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদক প্রদীপকুমার সরকারের যুক্তি, ‘‘এক-দু’টো উদাহরণ দিয়ে বাম আমলের সামগ্রিক কাজের অপব্যাখ্যা করা হচ্ছে। তৃণমূলের জমানায় যে ওবিসি শংসাপত্র প্রদান নিয়ে কী হয়েছে তা হাই কোর্টের রায়েই স্পষ্ট।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি দুলাল মুর্মুর মতে, ‘‘আইন আইনের পথে চলবে। তবে ওই শিক্ষাকর্মী কোনও চক্রান্তের শিকার কি-না সেটাও খতিয়ে দেখা দরকার।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)