পাইলটদের ক্ষেত্রে ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন’ থাকে। প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট ঘণ্টার বেশি তাঁরা উড়তে পারেন না। কারণটা সহজবোধ্য। বেশি উড়লে ক্লান্তি চলে আসতে পারে। তাতে মাঝ আকাশে মনঃসংযোগ বিঘ্নিত হয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা তৈরি হয়। একই কথা প্রযোজ্য ট্রেন চালকদের ক্ষেত্রেও। কিন্তু রেলে কর্মী-সঙ্কটের জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট সময়ের পরেও কাজ করে যেতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। বাড়ছে ঝুঁকিও। এই সমস্যার সুরাহার উপায় খুঁজতে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রক।
ট্রেনের চালকদের কাজের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া রয়েছে। কিন্তু, অভিযোগ, প্রয়োজনের তুলনায় চালক সংখ্যা কম থাকার কারণে কর্মরত চালকদের উপরে কাজের চাপ বেশি পড়ছে। বহু চালক কাজের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খাওয়ার এবং প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার সময় পাচ্ছেন না। তাঁরা জানাচ্ছেন, নির্ধারিত কাজের সময়ের মধ্যে খাওয়ার ও প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের বিরতি আন্তর্জাতিক শ্রম কনভেনশন স্বীকৃত অধিকার। এ বার ট্রেন চালক তথা লোকো পাইলটদের কাজের উপযুক্ত পরিবেশের ব্যবস্থা করার স্বার্থে কী ভাবে ওই কাজের জন্য বিরতির সময় বার করা যায়, তার উপায় খোঁজার প্রক্রিয়া শুরু করছে শ্রম মন্ত্রক।
অভিযোগ উঠেছে, ট্রেন চালকদের দিনে নির্দিষ্ট আট ঘণ্টা কাজের সময়ের মধ্যে প্রায়শই একটানা চার থেকে ছ’ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কখনও কখনও সেই সময় আরও বেশি হয়ে যায়। ট্রেন চালানোর জন্য বিশেষ সতর্কতা এবং তীক্ষ্ণ মনোযোগ লাগে। ফলে, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করার জন্য ট্রেন চালকদের শারীরিক এবং মানসিক ভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকা দরকার বলেও দাবি উঠেছে।
দীর্ঘদিন পরে গত কয়েক বছরে চালকদের বিশ্রামের জায়গার পরিবেশ উন্নত করার পাশাপাশি রেল ইঞ্জিনের ভিতরের স্বাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর উদ্যোগ হয়েছে। রেল বেশ কিছু ইঞ্জিনে শৌচালয় তথা ইউরিনাল বসানোর প্রক্রিয়াও শুরু করেছে। তার মধ্যেই রেল চালকদের কাজের সময় নিয়ে দীর্ঘদিনের উপেক্ষিত এই দাবি বিবেচনা করার জন্য কেন্দ্রের শ্রম মন্ত্রক তৎপরতা শুরু করেছে বলে সূত্রের খবর।
সম্প্রতি মন্ত্রকের নির্দেশে জাতীয় শ্রম কমিশনারকে চেয়ারম্যান করে বিশেষ কমিটি গঠিত হয়েছে। তাতে শ্রম দফতর ছাড়াও রেল বোর্ডের পাঁচ জন প্রতিনিধি রয়েছেন। এ ছাড়াও নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের এক জন এবং ছ’টি ভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের রাখা হয়েছে। ওই কমিটি বিভিন্ন দিক খতিয়ে দেখে কাজের মধ্যে অন্তর্বর্তী বিরতির সময় চিহ্নিত করবে।
এর আগে শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই দাবি উঠে এলেও ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তা নিয়ে বিশেষ নাড়াচাড়া হয়নি। এ বার বিষয়টি গতি পাওয়ায় চালকদের অধিকার স্বীকৃতি পাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তবে, সে জন্য কাজের সময় এবং শর্তে কী ধরনের বদল আনতে হবে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।