• বালুর মদতেই ‘বাঘ’ হয়ে ওঠেন শাহজাহান? প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রশ্রয়ে জমি দখলের ‘বাদশা’ সন্দেশখালির শেখ!
    আনন্দবাজার | ২৮ মে ২০২৪
  • সন্দেশখালির জেলবন্দি তৃণমূল নেতা শাহজাহান শেখকে জমি দখলের ‘বেতাজ বাদশা’ তৈরির কারিগর ছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক (রাজনৈতিক মহলে তিনি বেশি পরিচিত বালু নামে)! ইডি সূত্রে জানা গিয়েছে তেমনটাই। সোমবারই জমি দখল মামলায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি। সেই চার্জশিটেই বালুর নামের উল্লেখ রয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। এর আগে রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে বালুর সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল শাহজাহানের। সেই সূত্র ধরে শাহজাহানের সরবেড়িয়ার বাড়িতে ইডির তদন্তকারীরা হানাও দিয়েছিলেন। এ বার জমি দখল মামলাতেও বালু-শাহজাহান ‘যোগ’ প্রকাশ্যে এসেছে বলে তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।

    সূত্রের খবর, জমি দখল মামলায় শাহজাহানের বিরুদ্ধে ইডি যে চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে, তাতে উল্লেখ রয়েছে, শাহজাহানকে সন্দেশখালির ‘বাঘ’ তৈরির নেপথ্যে হাত ছিল বালুর। বাম আমল থেকেই শাহজাহানের প্রভাব সন্দেশখালিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করলেও রমরমা আরও বৃদ্ধি পায় ‘বালু-যোগের’ পর। বালুর মদতেই রাতারাতি শাহজাহান তাঁর ‘তাজমহল’ তৈরি করেন সন্দেশখালির মাটিতে। সরাসরি জমি দখলের সঙ্গে বালু যুক্ত ছিলেন না ঠিকই, কিন্তু এ বিষয়ে শাহজাহান নাকি প্রশ্রয় পেয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর কাছ থেকেই। ইডির একটি সূত্র এ-ও জানাচ্ছে, সময়ে সময়ে বিভিন্ন বিষয়ে বালুর থেকে সমর্থন পেয়েছেন শাহজাহান। উল্লেখ্য, পুরো বিষয়টিতে বালুর আর কী ভূমিকা ছিল, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে খবর।

    রেশনবণ্টন দুর্নীতি মামলায় বালু ইডির হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরেই তাঁর সঙ্গে নাম জড়িয়েছিল শাহজাহানের। সেই সময় ‘মেয়েকে লেখা’ বালুর চিঠি থেকে বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছিল ইডি। সূত্রের খবর, সেই চিঠিতেই নাম ছিল সন্দেশখালির তৃণমূল নেতা শাহজাহানের। ইডির সূত্রে সেই সময় জানা গিয়েছিল, প্রাক্তন মন্ত্রী বালুর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচারের কাজে যুক্ত ছিলেন শাহজাহান। বালুর টাকা শাহজাহানই সরাসরি বাংলাদেশের বিভিন্ন সংস্থায় নিয়োগ করতেন বলে মনে করছিল ইডি। ইডিরই একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, শাহজাহানের বিরুদ্ধে প্রাক্তন মন্ত্রীর টাকা ‘পার্ক অ্যান্ড লন্ডার’-এর অভিযোগও রয়েছে। আইনি ব্যাখ্যায় যার অর্থ, কোনও একটি জায়গায় টাকা গচ্ছিত রাখা এবং তার পর তার বেআইনি লেনদেনের ব্যবস্থা করা। অর্থাৎ, বালুর টাকা ‘উপযুক্ত’ ঠিকানায় জমা দিয়েছেন শাহজাহান। তার পর সেখান থেকে বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে হাজার হাজার কোটির কালো টাকা সাদা করেছেন। এ ছাড়াও সন্দেশখালির স্থানীয় আদি তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশেরও দাবি ছিল, বালুর ‘প্রশ্রয়েই’ নাকি বাড়বাড়ন্ত হয়েছিল শাহজাহান শেখের মতো নেতার।

    পাশাপাশি সূত্রের খবর, ইডি যে চার্জশিট সোমবার আদালতে জমা দিয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে, সন্দেশখালিতে ৯০০ বিঘার উপর জমি লিজ় নিয়ে রেখেছিলেন শাহজাহান। ওই জমিগুলির মালিকদের লিজ়ের টাকা দেওয়া হতে মর্জিমতো। কাউকে শাহজাহান টাকা দিতেন, আবার কাউকে দিতেন না। কত টাকা দেবেন, তা-ও তিনিই ঠিক করতেন। একই সঙ্গে সন্দেশখালিতে যে টেন্ডার পাশ হত, তার দখলও শাহজাহানের ‘প্রভাবে’ আপনা-আপনিই তাঁর ভাই পেতেন বলেও চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে বলে খবর।

    উল্লেখ্য, চার্জশিটে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা অভিযোগ করেছে, জমি দখল করে প্রায় ২৬১ কোটি টাকার সম্পত্তি করেছেন শাহজাহান। দুর্নীতির মাধ্যমে এই সম্পত্তি করা হয়েছে বলে ইডির দাবি। শাহজাহানের টাকা কোথায় কোথায় গিয়েছিল এবং কী ভাবে বিনিয়োগ হয়েছিল, তা-ও তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন বলে জানা গিয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)