অভিরূপ দাস: কলকাতায় বিপজ্জনক বাড়ি হাজার দুয়েক। নড়বড়ে ঝুল বারান্দা, হাওয়া দিলে খটখট করে কাঁপে সিলিং। ঘূর্ণিঝড় রেমালের দাপটে মুষলধারায় ভিজেছে মান্ধাতার আমলের এইসব বিপজ্জনক বাড়ি। আর সেখানেই দানা বেঁধেছে আশঙ্কা। রোদ উঠলে চুন, সুড়কির বাঁধন আলগা হবে না তো?
ঘূর্ণিঝড় রেমালে (Cyclone Remal) হাওয়ার তাণ্ডবে ভেঙে পড়তে পারে বিপজ্জনক বাড়ি। এমন আশঙ্কায় রবিবার ছ’টা গ্যাং তৈরি রেখেছিল কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগ। কিন্তু দুশ্চিন্তা যা ছিল ঘূর্ণিঝড়ে দাপটে তার তুলনায় কিছুই হয়নি। এন্টালি বিবির বাগান এলাকায় সামান্য ব্যালকনির টুকরো মাথায় পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন একজন। তা বাদ দিয়ে ক্যামাক স্ট্রিটে একটা পাঁচিল, কনভেন্ট রোডে একটা বাড়ির বারান্দার ছোট অংশ, হাতিবাগানে একটা কার্নিশের অংশ। সবমিলিয়ে হাতে গুণে ঘূর্ণিঝড়ের দাপটে দশটা মামুলি ঘটনা। কলকাতা পুরসভার (KMC) বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, সবমিলিয়ে রেমালের দাপট নিয়ে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তার চেয়ে ঘটনাবিহীন কেটেছে বিল্ডিং বিভাগের।
কিন্তু তাতেও কাটছে না আশঙ্কা। পুরনো দিনের এসব বাড়ি চুন, সুড়কির তৈরি। পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার জানিয়েছেন, কংক্রিটের বাড়ির সঙ্গে এসব বাড়ির বিস্তর ফারাক। মান্ধাতার আমলের এইসব চুন সুড়কির তৈরি বাড়ি জল পেয়ে ফুলে ওঠে। এর পর সেখানে চড়া রোদ পড়লেই দেখা দেবে ফাটল। আলগা হয়ে যাবে বাঁধন। সে সময় মান্ধাতার আমলের চুন সুড়কির বাড়ি ভেঙে পড়ার প্রবল সম্ভাবনা। রবিবারই মেয়র ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim) আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে। বারংবার বলা সত্ত্বেও বিপজ্জনক বাড়ির বাসিন্দারা বাড়ি খালি করতে চাইছেন না। মেয়র ফিরহাদ হাকিমের অনুরোধ, প্রত্যেকের জন্য নিকটবর্তী স্কুলে বন্দোবস্ত করা হয়েছে। জীবন হাতে নিয়ে বিপজ্জনক বাড়িতে থাকবেন না। ভরা বৃষ্টিতে ভেজার পর রোদ উঠতেই বিপজ্জনক বাড়ি (Dangerous building) ভেঙে পড়ার ঘটনা নতুন নয়। কলকাতার হাজার দুয়েক বিপজ্জনক বাড়ি নিয়ে তাই চিন্তায় পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের আধিকারিকরা।
কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন জরাজীর্ণ যে বাড়িগুলো বৃষ্টির জলে ভিজেছে! পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, চুন সুড়কির বাড়ি মুষলধারার বৃষ্টিতে ভিজেছে। রোদ উঠলেই এগুলোই ফাটল ধরবে। তখনও যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। দু-চার দিন পর রোদ উঠলে ফাটল ধরবে। বিপজ্জনক বাড়িগুলি বহুকাল আগে তৈরি। তার পর থেকে মেরামত হয়নি। কোথাও বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের দ্বন্দ্বের জন্য থমকে সারাইয়ের কাজ। কিছু বাড়ি রাস্তার উপরে। নিচ দিয়ে রোজ যাতায়াত করেন অগুনতি মানুষ। ভেঙে পড়লে তাদেরও প্রাণহাণি হতে পারে। গত এক বছরে এমন ৪০০ বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙেছে পুরসভা। কোথাও চূর্ণ করা হয়েছে রাস্তার ধারের ঝুলন্ত বিপজ্জনক বারান্দা। তবে অনেক বাড়ি তালাবন্ধ। মালিক প্রবাসে। ফলে সেখানে বাড়িভাঙা সম্ভব হয়নি।