বাড়িতে নাবালক ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে রেখে মাত্র দু’মাস আগে কাজের খোঁজে ভিন্ রাজ্যে গিয়েছিলেন। মাস ছয়েক বাদে, কিছু উপার্জন হলে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। অন্য দু’জনের কয়েক দিন বাদেই ইদে বাড়ি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই কফিনবন্দি দেহ ফিরছে তিন শ্রমিকের। মালদহের চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরের মৃত তিন শ্রমিকের নাম মিন্টু সরকার (৪০), অজিমুল হক (৪৫) ও আঞ্জারুল হক (২২)। গত দু’মাসে চাঁচল মহকুমায় কুড়ি জনেরও বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ভাবে পর পর মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বিগ্ন মৃতদের পরিজনেরা। নিজের এলাকায় কাজ মিললে তাদের ভিন্ রাজ্যে যেতে হত না, দাবি তাঁদের।
মিন্টু চাঁচল ২ ব্লকের চন্দ্রপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বলরামপুরের বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে, চার স্ত্রী মারা গিয়েছেন। বাড়িতে নাবালক ছেলে, বৃদ্ধ বাবা-মা রয়েছেন। এলাকায় কাজ না মেলায় হরিয়ানার গুরুগ্রামে নির্মাণ শ্রমিকের কাজে যান। সোমবার রাতে খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মাঝরাতে তিনি মারা যান। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বলে সন্দেহ। এই ব্লকেরই গৌরহন্ডের আঞ্জারুল বাবার সঙ্গে পুণেয় নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। সম্প্রতি সেখানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে তিনি মারা যান। বাড়িতে স্ত্রী, দু’মাসের শিশুকন্যা ও প্রৌঢ়া মা রয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুরের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের মুকুন্দপুরের অজিমুল দেড় বছর আগে পঞ্জাবে যান। তিনি নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করতেন। রবিবার রাতে মোটরবাইক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। বাড়িতে স্ত্রী সাইনুর খাতুন ও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে। সাইনুর বলেন, “কয়েক দিন বাদে ইদে ফেরার কথা ছিল। তার আগে এ ভাবে সব শেষ হয়ে যাবে ভাবিনি!”
বলরামপুর বুথের তৃণমূল সদস্য লতেজা খাতুন এ দিন বলেন, “সম্প্রতি ভিন্ রাজ্যে গ্রামেরই এক কিশোর শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ। শ্রমিকদের বাইরে যেতে হচ্ছে। পরিবারটিকে পঞ্চায়েতের তরফে সাহায্য করা হবে।” মহকুমাশাসক (চাঁচল) শৌভিক মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্বজনহারানো পরিবার যাতে সরকারি সুবিধে পায়, প্রশাসন তা দেখবে।”