থানা সামলে ফাঁক পেলেই আনাজ বাগানের পরিচর্যায় মগ্ন থাকেন পূর্বস্থলী ১ ব্লকের নাদনঘাট থানার আইসি বিশ্ববন্ধু চট্টরাজ। কখনও আনাজের গাছে মাটি দেন, কখনও ছড়ান জৈব সার। থানার পাশেই পরে থাকা পতিত জমিকে চাষের যোগ্য করে ফসল ফলাচ্ছেন তিনি। সে সব আনাজ রান্না হচ্ছে পুলিশ ক্যান্টিনে। আইসির এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন স্থানীয় মানুষ থেকে কৃষি দফতর।
নাদনঘাট থানার পিছনে রয়েছে কাঠা চারেক জমি। আগে সেখানে জমে থাকত আবর্জনার স্তূপ। থানায় আইসি হয়ে এসে বিশ্ববন্ধুর নজরে পড়ে ব্যাপারটি। ঠিক করেন বাগান করবেন। শক্ত এঁটেল মাটিতে কোদাল চালানো কঠিন বলে বিশ্ববন্ধু নিজের উদ্যোগেই মাটি শোধন শুরু করেন। জমি চাষ যোগ্য হলে বরবটি, বেগুন, কলমি শাক, লাল ও সাদা ডাটার বীজ বপন করে চালিয়ে যান যত্ন। বাগানের বিভিন্ন জায়গায় লাগান পুদিনা চারা। ব্যবহার করেন গোবর সার এবং কেঁচো। তাঁকে কাজে সাহায্য করেন থানার কয়েক জন পুলিশকর্মী। মাস খানেকের মধ্যেই পতিত সেই জমিতে মাথা তোলে সবুজ চারা।
বিশ্ববন্ধু জানান, এলাকায় হনুমানের উপদ্রব রয়েছে বলে আনাজ বাগান শক্ত জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি সেই বাগান থেকে মিলতে শুরু করেছে বরবটি, বেগুন-সহ নানা আনাজ। থানার ক্যান্টিনে রান্নার পাশাপাশি পুলিশকর্মীরা নিজেদের বাড়িতেও নিয়ে যাচ্ছেন, পথচলতি মানুষের হাতেও দেওয়া হচ্ছে আনাজ। এলাকার বাসিন্দা বিমল দেবনাথ বলেন, “জায়গাটা ফাঁকা পড়ে ছিল। এখন সবুজে ভরে গিয়েছে। থানা থেকে মাঝে মধ্যে বেরিয়ে এসে আনাজের পরিচর্যা করতে দেখা যায় আইসিকে।” থানার এক অধিকরিকের কথায়, “বাগান তৈরি করা ওঁর নেশা। রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করেও পতিত জমিতে আনাজের বাগান করেছেন তিনি। নিজেদের বাগান থেকে আনাজ মেলায় ক্যান্টিনে আনাজের খরচও অনেক কমেছে।”
বাগান তৈরির আগে বিশ্ববন্ধু পরামর্শ নিয়েছিলেন কৃষি দফতরেরও। পূর্বস্থলী ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক পরিতোষ হালদার বলেন, “আনাজ বাগান তৈরির আগে তিনি আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন। রসায়ন নিয়ে পড়াশোনা করায় মাটি নিয়ে ভাল ধারণাও রয়েছে তাঁর। বাগানে ভাল আনাজ মিলছে বলে শুনেছি। শীঘ্রই বাগানটি পরিদর্শন করব।” কালনার এসডিপিও রাকেশ চৌধুরীর বক্তব্য, “বাগানটি আমি দেখছি। আলাদা তাগিদ না থাকলে নিজের কাজ সামলে এমন কাজ করা সম্ভব হয় না। দারুন উদ্যোগ।”