গত লোকসভার চেয়ে জেলায় এ বার গড়ে ২% ভোট কম পড়েছে। বিধানসভা ধরলে ভোটের পরিমাণ ৩% কম। আবার কোনও কোনও বিধানসভা কেন্দ্রে ৪-৫% কম ভোট পড়েছে। বেশ কিছু বিধানসভায় ভোটদানে পুরুষদের টপকে গিয়েছেন মহিলারা। গত কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক দলগুলি এ নিয়ে ‘কাটাছেঁড়া’ করছে। তবে ব্লক, মহকুমা ও জেলা প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, এ বার পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোটের হার অনেকটাই কম। সেই কারণেই জেলার গড় ভোট শতাংশ বিধানসভার চেয়ে কম দেখাচ্ছে।
গত লোকসভা ভোটেও পরিযায়ীরা ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। বিধানসভা নির্বাচনের সময় করোনার প্রকোপে ফিরে আসা বেশির ভাগ পরিযায়ী শ্রমিক গ্রামেই ছিলেন। এ বার তা হয়নি।প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বছর জুনে ওড়িশার বাহানাগা স্টেশনের কাছে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় জেলার ১৭ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন। তার পরে পরিযায়ীদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করে জেলা প্রশাসন। সেই তথ্য অনুযায়ী জেলায় ৯২,৬৩২ জন পরিযায়ী শ্রমিক রয়েছেন। কমিশনের দাবি, তাঁদের একটা বড় অংশ লোকসভায় ভোট দিতে বাড়িমুখো হননি। জেলার বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারাও এই দাবি কার্যত মেনে নিচ্ছেন।
ভোটের সময় কেরলের এর্নাকুলামে রাজমিস্ত্রির কাজে ব্যস্ত ছিলেন সইদুল শেখ। গুজরাতের সুরাতে অলঙ্কারের কাজ করছিলেন প্রভাত বিশ্বাস। তাঁদের কথায়, “লকডাউনের পরে প্রত্যেকের কাজ সুতোয় ঝুলছে। ভোট দিতে গিয়ে কী কাজ হারাব?’’ লকডাউনের সময় এক দিকে কাজ হারিয়েছেন, পকেটে টাকার অভাব ছিল। ভিন্ রাজ্য থেকে সাইকেলে, হেঁটে বাড়ি ফেরার পথে কয়েক জনের মৃত্যুও হয়। নির্বাচনী প্রচারে তাঁদের দুর্দশা কাটাতে নানা প্রকল্প, উন্নয়নের ফিরিস্তি শোনাচ্ছে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। কিন্তু ভোটবাক্স যে পেট ভরায় না, বোঝালেন পরিযায়ীরাই।
প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, খণ্ডঘোষ, রায়না, কালনা, কেতুগ্রাম, মঙ্গলকোট, পূর্বস্থলী দক্ষিণ ও ভাতার বিধানসভা এলাকায় পরিযায়ী শ্রমিক বেশি। ঘটনাচক্রে, গত বিধানসভার চেয়ে ওই সব এলাকায় চার থেকে পাঁচ শতাংশ কম পড়েছে। আবার জামালপুর, মেমারি, মন্তেশ্বর, মঙ্গলকোটে পুরুষদের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে মহিলরা বেশি ভোট দিয়েছে। পূর্বস্থলী দক্ষিণ, পূর্বস্থলী উত্তর, কাটোয়া, কেতুগ্রামে পুরুষদের চেয়ে ৭-৮% মহিলা ভোট বেশি পড়েছে। জেলার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার তাপস মাঁকরের দাবি, “করোনার পরে কাজ হারানোর ভয় সবচেয়ে বেশি রয়েছে পরিযায়ীদের। ভোট মানে অন্তত ৫-৭ দিনের ছুটি নিতে হবে। ওই ক’দিন আয় থাকবে না, আবার বাড়ি এলে বাড়তি খরচও রয়েছে। সে কারণেই অনেক পরিযায়ী ভোট দিতে বাড়িমুখো হননি।”
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা আর একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সন্দীপন সরকারও বলেন, “পঞ্চায়েত বা বিধানসভা ভোটের সময় পরিযায়ীদের নিয়ে এসে ভোট দেওয়ানোর একটা তাড়া থাকে রাজনৈতিক দলগুলির। এ বারের লোকসভা ভোটে সেটাই জোর ছিল না। সেই কারণেও সম্ভবত পরিযায়ীরা ভোট দিতে গ্রামে ফেরেননি।” তাঁদের দাবি, জেলা প্রশাসনের কাছে পরিযায়ীদের তথ্য রয়েছে। তা অনুযায়ী পরিযায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভোটদানে যোগ দেওয়ানো যেত। জেলা প্রশাসনের দাবি, সারা দেশ জুড়ে প্রচার হয়েছে। জেলায় ভোটদানের হার ৮২-৮৩ শতাংশ। তাই আলাদা করে উদ্যোগ করা হয়নি।