কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথের কাছে থাকলে নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ হয়। জওয়ানেরা থাকলে কোন গন্ডগোল বুথের একশো মিটারের মধ্যে আসতে দেন না।— গত বছরের পঞ্চায়েত ভোটের সঙ্গে সদ্য শেষ হওয়া লোকসভা ভোটের তুলনা টানতে গিয়ে অভিজ্ঞতা থেকে এমনই জানাচ্ছেন, বিষ্ণুপুর মহকুমার ‘সন্ত্রাস কবলিত’ এলাকার ভোটকর্মীরা।
গত পঞ্চায়েত ভোটে কোতুলপুর, জয়পুর, পাত্রসায়র ও আংশিক ভাবে ইন্দাস ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে প্রার্থী দিতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ছিল বিরোধীদের। বামফ্রন্ট সরকারের আমলেও ছবিটা একই রকম ছিল। বাসিন্দাদের কটাক্ষ, অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীর দলটাই শুধু বদলে গিয়েছে। এই এলাকা এখনও ভোটে ‘সন্ত্রাস-কবলিত’-ই রয়ে গিয়েছে।
গত পঞ্চায়েত ভোটে কোতুলপুরে ভোট করাতে যাওয়া এক সরকারি কর্মীর দাবি, ভোটার কাকে ভোট দিচ্ছেন, বুথে ঢুকেই তা নজরদারি করছিলেন এক রাজনৈতিক দলের কর্মী। বারবার বারণ করেও লাভ হয়নি। হুমকি দেওয়ায় ভয়ে চুপ করে যাই।’’ তিনি জানান, এ বার পাশের জয়পুর ব্লকে তাঁর ভোট ছিল। একেবারে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এতেই বোঝা যায় ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন দরকার।’’ কোতুলপুরে ভোট করাতে যাওয়া সোনামুখীর বাসিন্দা, স্কুল শিক্ষক হারাধন সামন্ত বলেন, ‘‘এ বার উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে।’’
গত পঞ্চায়েতে বড়জোড়ার হাটআশুড়িয়া পঞ্চায়েতের একটি বুথে হঠাৎ মারামারি শুরু হয়। ওই বুথের ভোট কর্মীর কথায়, ‘‘ওই ঘটনা দেখার পরে কয়েকটা রাত ঘুমোতে পারিনি। সব ভোটেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন রয়েছে।’’ মেজিয়ায় ভোট করে যাওয়া রতন মণ্ডলের মতে, কেন্দ্রীয় বাহিনী থাকলে অযথা কেউ বুথে ঢুকতে পারেন না। হাঙ্গামা করার সাহসও পান না।
শুধু গতবারই নয়, ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটেও সমস্যা পড়তে হয়েছিল।পাত্রসায়রের এক স্কুল শিক্ষকের দাবি, সে বার বিষ্ণুপুরের একটি বুথে ভোট শেষের পরে ছাপ্পা মারার জন্য বেশ কয়েকটি খালি ব্যালট পেপার চেয়েছিলেন এক রাজনৈতিক দলের কর্মী। দিতে না চাওয়ায় কী হম্বিতম্বি। দীর্ঘক্ষণ বচসা চলে। দেরি দেখে সেক্টর অফিসার বুথে আমাদের খোঁজ করতে আসায়, সে যাত্রায় রেহাই পেয়েছিলাম।’’
কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতি যে বাড়তি মনোবল দেয় তা মানছেন ভোটকর্মীদের প্রায় সবাই। দক্ষিণ বাঁকুড়ার এক ভোট কর্মী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানেরা বলে দিয়েছিলেন, ‘আমরা বুথের একশো মিটারের মধ্যে কোনও সমস্যা হতে দেব না। আপনারা নিশ্চিন্তে ভোট করুন।’ এই ভরসা একমাত্র কেন্দ্রীয় বাহিনীই দিতে পারে।’’ তবে পুলিশ কর্মীদের একাংশের দাবি, নির্বিঘ্নে যাতে ভোট হয়, সে জন্য এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় তাদের ভূমিকাও কম নয়।