পুলিশে ছুঁলে ৩৬ ঘা! জানা ছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশনে ছুঁলে ক’ঘা?
বেজায় দুশ্চিন্তায় হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী লক্ষ্মণ দাস (খোকন)। গত সপ্তাহে হাওড়ার ভোটের দিন কলকাতার জোড়াবাগান থানা এলাকায় কমিশনের নজরদারি বাহিনী তাঁর কাছ থেকে ৮ লক্ষ ৫৩ হাজার ১০০ টাকা উদ্ধার করেছে বলে কমিশন সূত্রের খবর।
লক্ষ্মণের পুত্র রবি দাসের অবশ্য পাল্টা দাবি, “পাইকারি মাছ বাজারে বিভিন্ন খুচরো বিক্রেতা, হোটেল, রেস্তরাঁ কারবারিদের সঙ্গে ব্যবসার বেশির ভাগটাই নগদে চলে। আদায়ের টাকা আমরাও মাছ আমদানিতে ব্যবহার করি। কিছু টাকা দিন শেষে হাওড়াতেই ব্যাঙ্কের নগদ জমা যন্ত্রে ভরে বাড়ি ফিরি। কিন্তু গত ২০ মে হাওড়ায় ভোটের জন্য ব্যাঙ্ক বন্ধ ছিল। দোকানে তো অতগুলো টাকা ফেলে রাখা যায় না! অগত্যা নগদ সঙ্গে করেই বাবা সোদপুরে গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন। এমন ঝঞ্ঝাটে পড়ব, কে জানত!” লক্ষ্মণের টাকা কলকাতায় ভোট প্রভাবিত করার ঘুষ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছিল সন্দেহে, বাজেয়াপ্ত করেছে কমিশন।
কমিশনের নিয়মমাফিক, ভোট বিধি চালু থাকাকালীন ৫০ হাজারের বেশি নগদ নিয়ে ঘুরলেই সেই টাকার উৎস, টাকা নিয়ে ঘোরার কারণ সপ্রমাণ বোঝাতে হবে। আর দশ লক্ষের বেশি নগদ মিললে তদন্ত করে দেখবে আয়কর বিভাগ। কিন্তু দশ লক্ষের কম টাকা নগদের উৎস ইত্যাদি বোঝাতে পারলে কমিশনের নগদ উদ্ধার শাখার তা দু’দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়ার কথা।
রবির বক্তব্য, “জোড়াবাগান থানায় সেই রাতে আমাদের মাছের ক্রেতাদের কাউকে কাউকে উপস্থিতও করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে ছিলেন কালীঘাটের নামী ফিশফ্রাই বিপণির কর্ণধার প্রভাস ঘোষ। এ ছাড়া শোভাবাজার, অশোকনগর, বাগুইআটি বাজারের ক্রেতাদের রসিদ ইত্যাদিও আমরা দ্রুত জোগাড় করে ফেলি। কিন্তু জোড়াবাগান থানার পুলিশ টাকা বাজেয়াপ্ত করে কমিশনকে জমা দেয়।” রবি জানাচ্ছেন, কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলে, ৪ জুন ভোটগুণতির পরে ফোন করতে। এর আগে কিছু হবে না। নিরুপায় হয়ে টাকা নিয়ে যাচ্ছিলেন বোঝালেও রবির বাবা ৭৫ বছরের লক্ষ্মণ এবং ৬৭ বছরের প্রভাস জোড়াবাগান থানায় সেই সন্ধ্যায় পুলিশের মুখঝামটা শোনেন। কমিশনও বিষয়টির আশু সমাধান হবে না বলায় দুশ্চিন্তায় লক্ষ্মণ এবং রবি।
হাওড়ার পাইকারি বাজারের বিক্রেতাদের সমিতির কর্তা সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদও বলছেন, “পাইকারি বাজারে নগদেই প্রধানত কারবার চলায় অনেকেই টাকা রাখা নিয়ে মুশকিলে পড়ছেন। তা ছাড়া, ব্যাঙ্ক বন্ধ থাকলে ব্যবসায়ীরা তো টাকা নিয়ে ফিরবেনই। এত জটিলতা কাম্য নয়।” কমিশনের তরফে কলকাতা উত্তর লোকসভা কেন্দ্রের জেলা নির্বাচনী আধিকারিক শুভাঞ্জন দাস বলছেন, “এটা ঠিকই টাকার উৎস জানা গেলে দু’দিনের মধ্যে ফেরানো উচিত। কিন্তু ভোটের ঠিক আগে আধিকারিকদের উপরে চাপের জন্যই বাড়তি সময় লাগছে। গণনা মিটলেই দ্রুত কাগজপত্র দেখে টাকা ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে।”