পাশে সায়নী-মহুয়া, টানা ১২ কিলোমিটার হেঁটে লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ করলেন মমতা
আনন্দবাজার | ৩০ মে ২০২৪
শুরু হয়েছিল দুপুর আড়াইটে নাগাদ। সন্ধ্যা ৫টা ৩৫ নাগাদ শেষ হল। শুরু সুকান্ত সেতুর কাছে। শেষ গোপালনগরে।
বৃহস্পতিবার যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সুকান্ত সেতুতে ভাষণ দিয়ে পদযাত্রা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাশে ছিলেন কৃষ্ণনগরের তৃণমূল প্রার্থী মহুয়া মৈত্র, যাদবপুরের প্রার্থী সায়নী ঘোষ, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাসবিহারীর বিধায়ক তথা দক্ষিণ কলকাতা তৃণমূলের জেলা সভাপতি দেবাশিস কুমার। যাত্রাপথে সেই মিছিলে যোগ দিলেন দলের অন্য নেতারা। অনেকে আবার মিছিল থেকে বেরিয়ে নিজেদের এলাকায় শেষ বেলার প্রচার সারতেও চলে গেলেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে ১২ কিলোমিটার হেঁটে গোপালনগরে এসে এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচার শেষ করলেন মমতা।
দেশ জুড়ে সপ্তম তথা শেষ দফার ভোটগ্রহণ আগামী শনিবার। নিয়ম অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় শেষ হয়েছে এ বারের লোকসভা ভোটের প্রচার। শনিবার দক্ষিণবঙ্গের ৯টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ। তার মধ্যে রয়েছে যাদবপুর এবং কলকাতা দক্ষিণও। বৃহস্পতিবার এই কেন্দ্রেই পায়ে হেঁটে জনসংযোগ করলেন মমতা। যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের সুকান্ত সেতুতে একটি মঞ্চ গড়া ছিল মুখ্যমন্ত্রীর বক্তৃতা করার জন্য। কিন্তু তিনি সেই মঞ্চে ওঠেননি। রাস্তায় দাঁড়িয়েই মাইক হাতে বক্তৃতা করেন তিনি।
সুকান্ত সেতুতে মমতা বলেন, ‘‘যাদবপুরকে ভুলতে পারি না। আপনারা প্রতি বারের মতো এ বারও ভোটটা তৃণমূল কংগ্রেসকে দেবেন। সম্ভবত এ বার বিজেপি ক্ষমতায় আসছে না।’’ এর পর কেন বিজেপিকে ভোট দেওয়া উচিত নয়, তা-ও জানান মমতা। তিনি জানান, রেশন দেবে বলে দেয়নি বিজেপি। ১০০ দিনের কাজের টাকা দেয়নি। ‘‘সেই বিজেপিকে ভোট নয়’’, ডাক দেন মমতা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কন্যাকুমারীতে ধ্যানে বসার কথা প্রধানমন্ত্রী মোদীর। তা নিয়েও কটাক্ষ করেছেন মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আপনি ধ্যান করবেন, ক্যামেরা সঙ্গে নিয়ে কেন?’’
যাদবপুরে বেশ কিছু কলোনি রয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তুরা এসে বসবাস করছেন। তাঁদের উদ্দেশেও বার্তা দিয়েছেন মমতা। মনে করিয়ে দিয়েছে, তাঁর সরকার জমির পাট্টার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘কলোনি বলব না। বলব স্থায়ী ঠিকানা। একই ভাবে থাকবেন। বস্তি যেন না বলি। উত্তরণ বলব। ওঁদের ছেলেমেয়েরা এমএ, বিএ পাশ করেছে।’’
এর পরেই পদযাত্রা শুরু করেন মমতা। পায়ে সাদা চটি। পাশে সায়নী। তাঁর পায়েও সাদা চটি। সঙ্গে ছিলেন মহুয়া, অরূপ, দেবাশিস। তাঁদের সকলের পায়ে স্নিকার্স। মমতার পিছনে মাথায় কলসি নিয়ে নাচ করতে করতে এগিয়ে যান সাঁওতালি মেয়েরা। তাঁদের পায়েও ছিল সাদা স্নিকার্স। পিছনে তৃণমূলের পতাকা হাতে হেঁটেছেন দলীয় কর্মী-সমর্থকেরা।
যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র শেষে মিছিল ছেড়ে বেরিয়ে যান সায়নী। এর পর মিছিল ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট ক্রসিং হয়ে এগোতে থাকে বালিগঞ্জ ফাঁড়ির দিকে। সেখান থেকে বাঁ দিকে বেঁকে এগোয় ল্যান্স ডাউনের পথে। গড়িয়াহাটে মিছিলে যোগ দেন বালিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, কসবার বিধায়ক তথা বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান। যোগ দেন তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী, কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম। মিছিল থেকে সরে যান অরূপ।
পদযাত্রা যখন রাস্তা দিয়ে চলছে, তখন বহু রাস্তার ধারে ছিল বাঁশের ব্যারিকেড। ল্যান্স ডাউনের কাছে হলুদ শাড়ি পরা এক মহিলা শিশু কোলে ব্যারিকেড ভেঙে এগোনোর চেষ্টা করেন। পুলিশ বাধা দিলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। তখনই মমতা এগিয়ে যান। তাঁর কোলে নিজের একরত্তি শিশুকে তুলে দেন মহিলা। সেই অনুরোধই পুলিশকে করছিলেন তিনি। কিছু দূর এগিয়ে নীল পাড় সাদা শাড়ি পরে এক মহিলা ব্যারিকেডের নীচ দিয়ে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন মমতার দিকে। তাঁর উদ্দেশ্য, এক বার নেত্রীর পায়ে হাত দেবেন। মমতা সেই মহিলার প্রণাম গ্রহণ করেন। এর পর মিছিল পদ্মপুকুর হয়ে, যদু বাবুর বাজার, হরিশ মুখার্জি রোড ধরে এগিয়ে শেষ হয় গোপালনগরে।