লোকসভা ভোটের কারণে চালু রয়েছে আদর্শ নির্বাচন বিধি। অথচ, আদর্শ নির্বাচন বিধি জারি থাকার মধ্যেই রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নবনির্মিত এক ভবনের ঘটা করে উদ্বোধন করা হয়েছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। বৃহস্পতিবার ওই ভবনের ফিতে কেটে উদ্বোধন করেন জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মহকুমা হাসপাতাল সুপার ও জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অন্যরা। বিষয়টি সামনে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে আলোচনা। অন্য দিকে, রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরির জন্যই নতুন ওই ভবনে হাসপাতাল সুপারের অফিসঘর স্থানান্তরিত করা হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে দাবি করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নবনির্মিত ওই ভবনে চলে পূজার্চনা। তার পরেই জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও অন্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা ফিতে কেটে নতুন ওই ভবনের উদ্বোধন করেন। সূত্রের খবর, একটি ফলকও এ দিন ওই ভবনে রাখা হয়েছিল। পরে অবশ্য বিতর্কের কারণে ওই ফলক পাকাপাকি ভাবে বসানো হয়নি। ফলকে নতুন ভবনের উদ্বোধন হচ্ছে বলে লেখা হয়। তাতে উদ্বোধক হিসেবে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকেরও নাম লেখা হয়।
প্রশ্ন উঠছে, যেখানে আগামী ছয় মে পর্যন্ত রাজ্যে আদর্শ নির্বাচন বিধি কার্যকর থাকছে, সেখানে তার মধ্যেই সরকারি হাসপাতালে নবনির্মিত ওই ভবনের উদ্বোধন হল কী করে?
যদিও বিষয়টি নিয়ে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালের সুপার প্রহ্লাদ অধিকারীর দাবি, ‘‘আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছুই হয়নি। হাসপাতালে রোগীদের পরিষেবার জন্য একটি ট্রমা কেয়ার সেন্টার তৈরি হবে। সেই জন্য ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডের পাশে থাকা অফিসঘরের স্থান পরিবর্তন করে নতুন ওই ভবনে স্থানান্তর করার কাজ চলছে।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিয়ম-মাফিক পরিদর্শনে এসেছিলেন। তাই নতুন ওই ভবন এ দিন তিনি ঘুরে দেখেন।’’
ওই বিষয়ে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জ্যোতিষচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘আলাদা করে ভবন উদ্বোধনের কোনও আয়োজন ছিল না। হাসপাতালের অফিসঘর এক স্থান থেকে আর এক স্থানে স্থানান্তর করলে ‘আদর্শ নির্বাচন বিধি’ লঙ্ঘিত হয় বলে আমার জানা নেই।’’যদিও বিষয়টি নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি। রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী জগন্নাথ সরকার বলেন, ‘‘ফিতে কেটে উদ্বোধন হয়েছে হাসপাতালের নতুন ওই ভবনের। আসলে এই রাজ্যে সরকারি আধিকারিকেরাও এখন তৃণমূলের দলদাসে পরিণত হয়েছে। বিষয়টি আদর্শ নির্বাচন বিধির বিরোধী। কখনই এই ভাবে হাসপাতাল পরিদর্শনের নামে স্বাস্থ্য আধিকারিক ফিতে কেটে কোনও ভবনের উদ্বোধন করতে পারেন না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’ অন্য দিকে, সিপিএমের নদিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, ‘‘ আদর্শ নির্বাচন বিধি জারি থাকার মধ্যে এই ধরনের উদ্বোধন কখনই উচিত নয়। বিষয়টি অবশ্যই নির্বাচন কমিশনের খতিয়ে দেখা উচিত।’’ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান তথা শান্তিপুরের বিধায়ক তৃণমূলের ব্রজকিশোর গোস্বামী বলেন, ‘‘বিষয়টি আমার জানা নেই। তা ছাড়া, আমায় এ দিন ডাকা হয়নি। আমি ছিলামও না।’’
রানাঘাটের মহকুমা শাসক রৌনক আগরওয়াল বলেন, ‘‘হাসপাতালে ভবন উদ্বোধনের বিষয়টি আমারও জানা নেই। তবে যে বা যাঁরা নির্বাচনবিধি লঙ্ঘিত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ তুলছেন, তাঁদের লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’’