স্কুলে স্কুলে চলছে গ্রীষ্মাবকাশ। কিন্তু অত্যাধিক গরম ও ভোট-পর্বের জেরে পর্যটকেরা যেন এ বার মন্দিরনগরী বিষ্ণুপুর থেকে মুখ ঘুরিয়ে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার কেরলে বর্ষা ঢোকার খবরে তাই পর্যটকদের ফেরার আশায় বুক বেঁধেছেন বিষ্ণুপুরের পর্যটন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা।
মল্লরাজাদের তৈরি টেরাকোটার মন্দির ও আশপাশের জঙ্গলের সৌন্দর্যের টানে ঘরের কাছে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে বিষ্ণুপুর বরাবর বাঙালির প্রিয় গন্তব্য।
কিন্তু এ দিন জোড়বাংলা মন্দির চত্বরে গিয়ে দেখা যায় মাথায় হাত দিয়ে বসে হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ী সরমা পাত্র, স্বপন দাস। তাঁরা বলেন, ‘‘অন্য বছর গরমের ছুটিতেও কিছু পর্যটক আসতেন। এ বার তীব্র গরম ও ভোটের জন্য পর্যটক একেবারেই নেই। তবুও বিক্রির আশা নিয়ে রোজ দোকান সাজিয়ে বসছি।’’
দুশ্চিন্তায় হোটেল ও লজ মালিকেরাও। বিষ্ণুপুর হোটেল ও লজ মালিক কল্যাণ সমিতির সম্পাদক অসিতকুমার চন্দ্রের কথায়, “ভোটের বাজার গরম হলেও পর্যটন শিল্পের বাজার ঠান্ডা। এখানে সরকারি ও বেসরকারি হোটেল-লজের সংখ্যা ৩২টি। এখন সব ফাঁকা। দোলের পরেই ধীরে ধীরে পর্যটকের আনাগোনা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ তাঁর আক্ষেপ, অথচ কর্মীদের বেতন, বিদ্যুতের খরচ সবই দিতে হচ্ছে।
রাজ্য পর্যটন দফতরের বিষ্ণুপুরের অতিথি নিবাসের ৩০টি ঘর ফাঁকা পাওয়া যায় না। সেখানকার ম্যানেজার মুরারীমোহন দাস বলেন, “আমাদের সরকারি অতিথি নিবাস কোনওদিন ফাঁকা থাকে না। তবে এ বার দীর্ঘ ভোট-পর্ব ও গরমে অতিথি অনেক কম। দৈনিক ছয়-সাতটি ঘরে অতিথি আসছেন।’’ এ দিন সেখানে তিনটি ঘর ভর্তি ছিল।
আত্মীয়বাড়ি বেড়াতে এসে জোড়বাংলা ঘোরার ফাঁকে পূর্ব বর্ধমানের শতাব্দী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এ সময় ছেলেমেয়েদের স্কুল ছুটি। অথচ ভোট আর গরমেই অতিষ্ঠ হয়ে গেলাম।নামমাত্র দু’-একটি মন্দির ঘুরে ফিরে যেতে হচ্ছে। বৃষ্টি নামলে আবার আসব।”
দর্শনার্থী নেই বিষ্ণুপুর জেলা সংগ্রহশালাতেও। ‘আচার্য যোগেশচন্দ্র পুরাকৃতি ভবন’-এর ‘কিউরেটর’ তুষার সরকার বলেন, “অন্য বছর এ সময়ে দর্শনার্থী কম থাকে ঠিকই, তবে এমনটা নয়। আশা করি আবহাওয়া ঠান্ডা হলে, নিশ্চয় তা বাড়বে।”
সবার আশা, এই জেলায় ভোট শেষ হয়েছে। এ বার বৃষ্টি নামলেই পর্যটকদের ভিড় ফিরবে মন্দিরনগরীতে।